জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক লোকজন। গুম হয়েছেন একজন। এসব ঘটনায় হত্যা, বিস্ফোরকসহ সিলেট জেলা ও মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতে ১৩৬টি এবং আদালতে একাধিক সিআর মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি হত্যা ও ১২০ বিস্ফোরক ও হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে হত্যা মামলাগুলির ৫টি বাদি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলা পুলিশের আওতাধীন বিভিন্ন থানায় ৪৪টি এবং মহানগরীর ছয়টি থানায় ৯২ মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোতে আসামির সংখ্যা জেলায় সাড়ে ৯ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। তন্মধ্যে এজাহার নামীয় ২ হাজার ৩২১ জন এবং অজ্ঞাত ৭ হাজার ১৮৫ জন। বিপরীতে ১০২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এসএমপিতে দায়েরকৃত ৯২ মামলায় মোট আসামি ২০ হাজার ২২২ জন। এরমধ্যে এজাহার নামীয় ৬ হাজার ৪৮২ জন এবং অজ্ঞাত ১৩ হাজার ৭৪০ জন। পক্ষান্তরে এ যাবত ১৭৭ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ ও আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দায়েরকৃত ১৬টি হত্যা মামলার শীর্ষ অভিযুক্ত সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাকে গোলাপগঞ্জে ৭টি ও বিয়ানীবাজার থানায় ২টি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর বাইরেও অসংখ্য মামলার আসামি আত্মগোপনে থাকা সাবেক এই সংসদ সদস্য। এছাড়া জেলা ও মহানগর এলাকায় দায়ের করা সর্বাধিক ৪৩টি বিস্ফোরক মামলার আসামি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম। ৩টি হত্যা মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
হত্যা মামলায় দ্বিতীয় অবস্থানে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ। তার বিরুদ্ধে ৮টি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ৩৬টি মামলা রয়েছে। হত্যা মামলায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব। তিনি ৭টি হত্যা মামলাসহ অসংখ্য বিস্ফোরক মামলা আসামি। বিস্ফোরক মামলায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে ২টি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ৪১টি মামলা হয়েছে। এছাড়া হত্যা মামলায় যৌথভাবে ৪র্থস্থানে আছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম রাবেল, উপজেলা ফুলবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ খান ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আলী আকবর ফখর। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৬টি করে হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। এছাড়াও ২৬টি বিস্ফোরক ও ২টি হত্যা মামলা নিয়ে ৪র্থ স্থানে আছেন সিসিকের ৩২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রুহেল আহমদ। ধারাবাহিক মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিসিক ৭নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব আহমদ খানের বিরুদ্ধে ২৫টি বিস্ফোরক ও ২টি হত্যা মামলা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি পিযুষ কান্তি দে’র বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে ২৫টি মামলা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিটুর বিরুদ্ধে ২৪টি, মহানগর যুবলীগ সভাপতি আলম খান মুক্তির বিরুদ্ধে ২২টি বিস্ফোরক ও ২টি হত্যা, সিলেট ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের বিরুদ্ধে ২০টি বিস্ফোরক ও ৩টি হত্যা, মৌলভীবাজার২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বিরুদ্ধে ১৮টি বিস্ফোরক ও ২টি হত্যা মামলায় আসামি হয়েছেন।
জেলা আওয়ামীলীগ নেতা এ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, সদস্য সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন,গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সম্পাদক আর্জবন্দ আলী এবং
গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহিন আহমদ খানের বিরুদ্বে ৫টি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম ,জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের ভাই ও উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা রুমেল সিরাজ, কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সারোয়ার হোসেন বদরুল ইসলাম জামাল , এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামরানের বিরুদ্বে যথাক্রমে ৪টি করে হত্যা মামলা রয়েছে। ৩ টি করে সমান সংখ্যক হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এমপি, হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি,বিয়ানীবাজার আওয়ামীলীগ নেতা আতাউর রহমান, গোলাপগঞ্জ যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ,জেলা আওয়ামীলীগ নেতা শহীদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ, পশ্চিম আমুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ হাসিন আহমদ মিন্টু ,পৌরআওয়ামীলীগ নেতা রুহেল আহমদ, লক্ষ্মিপাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেবুল আহমদ,তাজুল ইসলাম, মনিরুল হক পিনু এবং আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক মেম্বার সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ২ টি করে মামলা রয়েছে সাবেক মন্ত্রি ইমরান আহমদ , শফিকুর রহমান চৌধুরী ,সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রি আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম দস্তগীর কাওছার, সিসিকের ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সজল দাশ অনিক, গোলাপগঞ্জ আওয়ামীলীগ নেতা কামরান, জহির উদ্দির মাষ্টার, খায়রুল ইসলাম,আব্দুল মুকিত , মান্না, চয়ন রঞ্জন দাস, আব্দুস শহীদ , অপু খান বদই , রাব্বি, ফখর, মুরাদ, বিয়ানী বাজারের কে এইচ সুমন ।
একটি করে মামলা রয়েছে সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের , সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মোমেন, সদর উপজেলা সাবেক আশফাক আহমদ, ভিসি ফরিদ উদ্দিন, সাজলু লস্কর, সিসিকের কাউন্সিলর তাকবির ইসলাম পিন্টু , মখলিছুর রহমান কামরান, জগদিশ চন্দ্র দাশ, কোতোয়ালী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন, সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান, পরিদর্শক মিজানুর রহমান, ,পরিদর্শক আবু খালেদমামুন , পরিদর্শক ইয়ারদৌস হোসেন, পরিদর্শক হারুনুর রশিদ চৌধুরী, কনস্টেবল সেলিম, আজহার, ফিরোজ , উজ্জল , সাব-ইন্সপেক্টর কল্লোল গো-স্বামী , সাব-ইন্সপেক্টর কাজি রিপন, সহকারী কমিশনার গোলাপগঞ্জ ভ‚মি অভিজিৎ চৌধুরী ২টি, গোলাপগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদুল আমীন, পরিদর্শক সুমন চন্দ্র সরকার, শংকর নন্দী মজুমদার , এসআই রাজিব , কুমার রায়, এসআই এখলাছ, এসআই হাফিজুর রহমান, এসআই আসিফ ইকবাল , ্এস আই বিকাশ সরকার , এ এস , আই সমীরন চন্দ্র দেব, বিজিবি সদস্য হাবিলদার মিজান, ভিআইপি শহীদ, সিপাহী আল আমিন ও আতিকসহ আরো অনেকে।
এছাড়াও মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ ১৯টি ও ১টি হত্যা মামলায় আসামি হয়েছেন। মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গিরদার -১৮ টি ও ১টি হত্যা মামলা, সিসিকের ২০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ ১৬টি ও ২টি হত্যা মামলা, মহানগর আওয়ামীলীগে সহ-সভাপতি বিজিৎ দে ১৬ টি, সিসিকের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর লায়েক আহমদ ১৬টি মামলা, সাবেক সাংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট রনজিত সরকারের বিরুদ্ধে ১৪টি বিস্ফোরক এবং ১টি হত্যা, সিসিকের ৩৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ১৪টি ও ১টি হত্যা, জেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আফছার আজিজের বিরুদ্ধে ১৩টি বিস্ফোরক মামলা,মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশোওয়ার জাহান সৌরভ ১২টি ও ১টি হত্যা মামলা, যুবলীগ নেতা সজল দাস অনিক ১২ টি ও টি হত্যা মামলা, যুবলীগ নেতা শামিম ইকবাল ১০টি মামলা রয়েছে।
তাছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান ১২টি বিস্ফোরক ও ১টি হত্যা মামলা, সিসিকের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাটের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা, জেলা যুবলীগের সভাপতি শামিম আহমদ ১১টি ও ১টি হত্যা মামলা, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ৮ টি বিস্ফোর ও ১টি হত্যা মামলায় এবং জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ ৯ টি মামলায় আসামি হয়েছেন।