ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগসহ পাঁচটি মামলায় সোমবার রাতে গ্রেফতার হয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে জামিন পেয়েছেন সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ। পরে শ্রমিকেরা তাঁকে নিয়ে নগরীতে আনন্দ মিছিল বের করেন।
জাকারিয়া মঙ্গলবার সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। এর আগে সোমবার রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) গোয়েন্দা শাখা তাঁকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁকে এসএমপির কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, জাকারিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। তাঁকে সোমবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ নগরের মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার সকালে তাঁকে সিলেট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। পরে বিচারক জামিন মঞ্জুর করলে আদালতের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জাকারিয়ার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে এসএমপির বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। এ ছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি থাকার সুবাদে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দাপট দেখিয়ে শ্রমিকদের ব্যবহার করে কোনো কারণ ছাড়াই সড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তির সৃষ্টি করতেন বলেও অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
শ্রমিক লীগ নেতা জাকারিয়ার মুক্তির পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে। সেখানে দাবি করা হয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরাসরিভাবে জড়িত জাকারিয়াকে মুক্তিতে সহোযোগীতা করেছে শ্রমীকদল নেতারা।
এদিকে সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের জামিনের পর তাকে নিয়ে নগরীতে নগরীতে আনন্দ মিছিল করেছেন বিএনপি কিছু নেতারা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিএনপির কিছু নেতা জাকারিয়া জামিন পাওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলার আসামি শ্রমিকলীগ নেতা জাকারিয়ার জামিনের সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেইসবুকে সিলেট মহানগর শ্রমিকদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম রফিক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে একটি স্ট্যাটাস দেন।
এছাড়া ফেসবুকের একাদিক পেইজে শ্রমীক দল নেতা আলী আকবর রাজনের সরাসরি বক্তব্য দেখা যায়, যা নিয়ে তৃণমূল বিএনপি ও অংঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরোপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একজন গণমাধ্যম কর্মী লিখেন “জুলাই আন্দোলনে হামলা মামলার আসামি আওয়ামীগ লীগ নেতা জাকারিয়াকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের বিজয়োল্লাস, শহিদদের রক্তের সাথে তামাশা!”
আরেক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক আদালত চত্বরের ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে লিখেন “আজ ডেভিলদের নৃত্যে মেতে উঠল আদালত চত্বর”।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান আহমদ চৌধুরী মুটোফোনে একাধিকার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে উনারা ফোন রিসিভ করেননি ।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনেকে দেশ ছাড়েন। দেশে থাকা নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে থাকলেও মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ প্রকাশ্যে বীরদর্পে চলাফেরা করেছেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই এতোদিন প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।