শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নটি একটি দ্বীপের মতো। এর চারদিকে নদী বেষ্টিত। সড়কপথে সেখানে পৌঁছার কোনো ব্যবস্থা নেই। নৌযানই যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। এর ফলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রের জন্য এটি সুবিধাজনক জায়গায় পরিণত হয়েছে।
রাত বাড়লেই ঠাণ্ডার বাজার এলাকায় মেঘনায় শুরু হয় অবৈধ বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নদীর বুক চিরে চলে এই তৎপরতা। দিনের আলো ফোটার আগেই চক্রটি গায়েব হয়ে যায়। তিন সপ্তাহ ধরে আবার রাতভর বালু তোলা শুরু হয়েছে।
নদী থেকে নির্বিচারে বালু তোলায় ইতোমধ্যে কোদালপুর ইউনিয়ন ঠাণ্ডা বাজার ও এর আশপাশের চর এলাকার প্রায় ১০০ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। এতে তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ধসে যাচ্ছে, বাড়ছে ভাঙনের ঝুঁকি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, নদীর পাড় ঘেঁষে বালু তোলার কারণে বসবাসরত মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আজ না হয় কাল তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সব নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। এ অবৈধ বালু তোলা বন্ধ করার জন্য আপনারা কাজ করেন। আমার পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করব।
কোদালপুর ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানান, বালুখেকোদের লাগামহীন দৌরাত্ম্যে এলাকার কৃষিজমি ও বসতভিটা হারিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বালু উত্তোলনকারীরা কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর প্রায় তিন মাস কাজ বন্ধ ছিল। তবে তিন সপ্তাহ ধরে আবার রাতভর বালু তোলা শুরু হয়েছে।
তারা জানান, বালুখেকোরা বাল্কহেডগুলো দিনের বেলায় কোদালপুর ও কুচাইপট্টি ইউনিয়নরে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ও পট্টি লঞ্চঘাটে রাখে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী চরজালালপুর ও ঠাণ্ডার বাজারের বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার লুকিয়ে রাখা হয়।
বালুবাহী বাল্কহেডগুলো পার্শ্ববর্তী ডামুড্যা উপজেলা থেকে জয়ন্তী নদীর পট্টি ব্রিজের লঞ্চঘাট ও কুচাইপট্টি ব্রিজের নিচ দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়।
বালু তোলার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দিতে গেলে বা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের অবগত করলে তাদের মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। ফলে আতঙ্কিত হয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে এ অপরাধে নিয়মিত মামলা হয়েছিল। অবৈধ বালু তোলার বিষয়ে অভিযুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
নরশিংহপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইয়াছিনুল হক বলেন, কোদালপুরে বালু উঠানোর বিষয়টি আমি জানি না, খোঁজখবর নিচ্ছি।
কোদালপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মতিন খান বলেন, প্রতিদিন বালু তোলার বিষয়ে ইউএনও জানেন। আমিও তাকে জানিয়েছি অভিযানে করবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, আমি সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।