বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সারাদেশ

ওজন বাড়াতে ছাগলকে জোরপূর্বক খাওয়ানো হচ্ছিল পানি, হঠাৎ হাজির ইউএনও


দক্ষিণ কুমিল্লায় গরু-ছাগলের বড় বাজার মিরশ্বানী বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতা বিক্রেতারা এই বাজারে ক্রয় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আসেন।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে আরও জমে উঠেছে বেচা-কেনা। গরুর পাশাপাশি ছাগল বেচাকেনা হয় পুরোদমে।

এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ছাগলের পেটে পাইপ ঢুকিয়ে পানি ঢেলে ওজন বাড়িয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে অনেকে ছাগল কিনে নিয়ে যাওয়ার পর মারা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দীর্ঘদিনের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (০৯ এপ্রিল) দুপুরে বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা ছাগলের ওজন বাড়াতে জোর করে নল দিয়ে পানি খাওয়ানোর সময় অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন।

এসময় ছাগলের পেটে জোরপূর্বক পানি ঢুকানোর সরঞ্জাম ও ৬৮টি ছাগলসহ আটক করা হয় নয় জনকে। তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় উপজেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের উদ্দেশ্যে ছাগলগুলো প্রতি অমানবিক আচরণ করছে। তারা প্রতি বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে হাটের পাশের নির্জনস্থানে জোরপূর্বক নল দিয়ে বোবা প্রাণী ছাগলের পেটে পানি ঢুকায়। এতে সাময়িক সময়ের জন্য ছাগল দেখতে সুন্দর ও মোটাতাজা দেখায়। কিন্তু ক্রেতা ছাগল ক্রয় করার ১-৩ দিনের মধ্যে অধিকাংশ ছাগল মারা যায়।

জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জামাল হোসেন নিজে ক্রেতা সেজে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হন এবং ছাগলের পেটের মধ্যে পাইপ ঢুকিয়ে পানি ঢালতে থাকা অবস্থায় হাতেনাতে তাদের আটক করেন। পরে মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী, চারজনকে এক মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচজনকে সাতদিনের কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়।

আটককৃতরা হলো- বেপারি খান্নাপাড়া গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেন, হেদায়েত উল্লাহ, চৌগুরীর নুরুল আমিন, মৌকরার মহিবুল্লাহ ও সদর দক্ষিণের মঙ্গলমুড়া গ্রামের আবদুল লতিফ ও শ্রমিক নাঙ্গলকোট উপজেলার চৌগুরী গ্রামের মো. মাসুদ, জাকির হোসেন, সবুজ, শাহিন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গীয় আনসার বাহিনীর সদস্য ও কার্যালয়ের স্টাফ এবং থানা পুলিশের একটু চৌকস টিম এই মোবাইল কোর্টকে সহায়তা করেন। কোর্ট চলাকালে স্থানীয় জনগণ, বাজার কমিটি ও বাজারের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজন, মহাসড়কের বিভিন্ন গাড়ির ড্রাইভারগণ এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ছাগল ক্রেতা চুপুয়া গ্রামের বাচ্চু মিয়া বলেন আমিও গত এক মাস পূর্বেই এই হাট থেকে ছাগল ক্রয় করে ঠকিয়েছি। এদের কঠিন বিচার হওয়া উচিত বোবা প্রাণীর সাথে অমানবিক আচরণ। ছাগল বিক্রেতা কিশোর মিজান বলেন ছাগলের পেটে পানি ঢুকালে মোটাতাজা দেখা যায়, তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়, বাজারে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না।

ছাগল বাজারের ইজারাদার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন মজুমদার বলেন, আমরা প্রত্যেক হাটে সকল ব্যাপারে কে আগে থেকেই নিষেধ করি কোন প্রকারে ছাগলের পেটে জোরপূর্বক পানি প্রবেশ না করার জন্য, তারা আমাদের কথা শুনে না।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, অসৎ উপায়ে বোবা প্রাণিগুলোকে জোরপূর্বক নল দিয়ে খাওয়ানোর কারণে ওজন বেড়ে যাচ্ছে। বেশি লাভের উদ্দেশ্যে প্রাণিগুলোর সাথে অমানবিক আচরণ করছে। এটা প্রাণী সংরক্ষণ আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, অবুঝ প্রাণী ছাগলের পেটে জোরপূর্বক পানি ঢুকানো হচ্ছে এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালিয়ে আটককৃত ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের এই অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।

এই সম্পর্কিত আরো