মৌলভীবাজারের বড়লেখায় সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে পরিকল্পিতভাবে এক জামায়াত নেতার প্রবাসী ভাইয়ের ওপর হামলার পর উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে বড়লেখা সদর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতের অভিযোগ, ওয়ার্ড জামায়াত নেতা মো. সিরাজুল ইসলামের ভাই প্রবাসী ফয়ছল আহমদ মুন্নার ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখনও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু ঘটনার ১১ দিন পর উল্টো অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ উদ্দিনের ভাই আব্দুল গণি ভুক্তভোগী জামায়াত নেতার ভাইসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ঠুকে দিয়েছেন। এমনকি মামলায় একজন প্রবাসী, এক ছাত্রদল নেতা এবং নবম শ্রেণির দুই ছাত্রকে বয়স বাড়িয়ে আসামি করা হয়েছে। রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বড়লেখা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বড়লেখা সদর ইউনিয়ন জামায়াত এসব অভিযোগ তুলে ধরেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বড়লেখা সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি রবিউল ইসলাম সোহেল। এসময় সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি হাফিজ জয়নাল আবেদীন, ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ফয়জুর রহমান, ভুক্তভোগী ৯ম শ্রেণির ছাত্র আবু বকর ও আবু সাঈদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে রবিউল ইসলাম সোহেল বলেন, গত ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের জন্য ডিমাই বাজারে সমবেত হয়। সমাবেশে বড়লেখা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ উদ্দিন নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আজেবাজে স্লোগান, গালিগালাজ এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে। এসময় তারা বড়লেখা সদর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর ৯নং ওয়ার্ডের সেক্রেটারি মো. সিরাজুল ইসলামের ভাই ফয়ছল আহমদ মুন্নাকে বাজারে একা পেয়ে হত্যার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে সিরাজ উদ্দিন কোমরে থাকা খাসিয়া দা দিয়ে গলায় ধরে হত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আব্দুল আজিজ বসু রড দিয়ে মাথায় আঘাত করলে মুন্না মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে আওয়ামী যুবলীগের ক্যাডাররা মিলে এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে কয়েকজন নিরীহ মানুষের উপর দা, রড, লাঠি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। বাজারের সিসিটিভি ফুটেজে এই ঘটনার প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও আব্দুল আজিজ বসু জামায়াত নেতা মো. সিরাজুল ইসলামকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। হামলাকারীরা বেলাল আহমদের দোকানে প্রবেশ করে নগদ টাকা ও মালামাল লুট করে নেয়। বাজারের লোকজন এসে আহতদের উদ্ধার করে এবং পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
রবিউল ইসলাম সোহেল অভিযোগ করেন, প্রবাসী ফয়ছল আহমদ মুন্না ওপর হামলার পর হামলা ও লুটপাটে জড়িত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা করা হয়। কিন্তু পুলিশ এখনও হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ উদ্দিন এবং জড়িত আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের গ্রেপ্তারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ঘটনার ১১ দিন পর আওয়ামী লীগ নেতার ভাই আব্দুল গণি আদালতে জামায়াতের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের নামে একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করেছে। যা বর্তমানে ডিবিতে তদন্তাধীন রয়েছে। মামলায় নবম শ্রেণির ছাত্র আবু সাইদ ও আবু বক্করকে বয়স বাড়িয়ে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া একজন প্রবাসী জুনেদ আহমদ ও ছাত্রদল নেতা সাকিল আহমদকেও আসামি করা হয়েছে।
রবিউল ইসলাম সোহেল এসব ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক হিসেবে উল্লেখ করে ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই স্কুল ছাত্রসহ নিরীহ মানুষদের ওপর থেকে মামলা প্রত্যাহার, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি তিনি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বানও জানান।