বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

শ্রীমঙ্গলে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীতেও বন্ধ হচ্ছেনা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীতেও বন্ধ হচ্ছেনা অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ। কেউ প্রভাব খাটিয়ে, কেউ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে, কেউ বাড়ি ঘরের কাজের কথা বলে প্রতিনিয়তই বালু উত্তোলন করে আসছেন। এতে সরকারের রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ক্ষতিসহ ছড়ার পাড় ভাঙ্গন, বালু পরিবহনে রাস্তা ভাঙ্গনসহ নানাভাবে দূর্ভোগে পড়েন এলাকাবাসী। এ অবস্থায় প্রশাসনকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হচ্ছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণকারীদের বিরোদ্ধে অভিযানে করে। 


শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শহরের শান্তিবাগ এলাকায় ভুড়ভুরিয়া ছড়া থেকে বালু উত্তোলণের অভিযোগ আসে শ্রীমঙ্গল পৌর বিএনপির আহবায়ক  শামীম আহমদের বিরুদ্ধে। এরকম একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় দলীয় পদবীর প্রভাব খাটিয়ে তারা এ বালু উত্তোলণ করছেন।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল পৌর বিএনপির আহবায়ক  শামীম আহমদ জানান, আমি কখনো বালুর ব্যবসা করিনি ভবিষতেও এই ব্যবসা করার ইচ্ছা নাই। তবে শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বালু উত্তোলণের ভিডিও ভাইরাল এর বিষয়ে তিনি বলেন, তার বাসা ছড়ার পাড়ে। পাহাড়ী ঢলে তার বাসা ও রাস্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তিনি দুইজন শ্রমিক লাগিয়ে ছড়া থেকে বালু তুলে বস্তায় ভরে ছড়ার পাড়ে ও রাস্তায় দিচ্ছেন।

এ ব্যপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ইজারাবিহীন ঘাট থেকে কারোই বালু তোলার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কড়া নজরদারী রয়েছে। যারাই এ প্রকৃয়ার সাথে জড়িত হবেন তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিগত এক বছরে ইতিমধ্যে ১৬ নিয়মিত মামলা, ৭টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালানা করা হয়েছে। এতে প্রচুর পরিমানে বালু ও যানবাহন জব্দ করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে। জব্দকৃত বালু ইতিমধ্যে তিনবার নিলাম করা হয়েছে যার পরিমান ৭১২৮৫ ফুট।।

তিনি বলেন, খবর পেয়ে শনিবার শ্রীমঙ্গল শান্তবাগ এলাকায়ও অভিযানে যায় মোবাইল কোর্ট। সেখানে জনৈক শামীম আহমদ তার বাসার পাশে ছড়ার পাড় রক্ষার জন্য ছড়া থেকে বালু তুলে তা বস্তায় ভরছিলেন। তবে এটিও করা যাবেনা বলে জানান, তিনি স্থানীয় লোকজনদের ডেকে শামীম আহমদসহ সবাইকে বলেন, এরকম কাজ ভবিষতে না করার জন্য। আর তার পুনরাবৃত্তি করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো: মহিবুল্লাহ আকন জানান, শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শান্তিবাগ এলাকায় অভিযানে যান। সেখানে কিছু লোক কর্তৃক অবানিজ্যিকভাবে বালু উত্তোলণের সত্যতা পান এবং একশত ঘনফুট বালি জব্দ করেন আর যিনি উঠাচ্ছিলেন তিনি ভবিষতে আর কখনো বালু উত্তোলণ করবেননা মর্মে তার কাছ থেকে মুছলেখা নেন। এ সময় তারা ঐ ঘাট বন্ধ করে স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করে আসেন। তিনি বলেন, ইজারাবিহীন কোন ঘাট্ থেকে বানিজ্যিক কিংবা অ-বানিজ্যিক কোনভাবেই বালু উত্তোলণ করা যাবেনা। 
এ সময় তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। তিনি শ্রীমঙ্গল ভূমি অফিসে যোগদান করেছেন মাত্র একসাপ্তাহ এরই মধ্যে তিনদিনই বালুর অভিযানে বের হতে হয়েছে। গত ২৭ আগষ্ট ইজারাকৃত গোপলা ছড়ায় ব্রীজের পাশ থেকে বালু উত্তোলণ বন্ধ করান। 

২৬ আগষ্ট উপজেলার রঘুনাথপুর কালীবাড়ি এলাকায় যৌথবহিনীর অভিযানে ৫শত ফুট বালি জব্দ করেন। একই সাথে ওইদিন বিকেলে উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের  সিক্কা ও ডোবাগাও এলাকায় আরো দুটি অবৈধ ঘাটে অভিযান করেন। এ সময় বালুসহ অবৈধ উত্তোলণকারীরা পালিয়ে যায়। তবে উভয় স্থানে বাঁশের গড় দিয়ে অবৈধঘাট বন্ধ করে আসেন।

তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৩১টি বালু মহাল রয়েছে যে গুলো হলো ভুরভুরিয়াছড়া, জৈনকাছড়া, খাইছড়া, জাগছড়া,সুমইছড়া শাওনছড়া, নারায়নছড়া লংলিয়াছড়া, উদনাছড়া বিলাসছড়া, ডিংডিংগাছগা, পুটিয়াছড়া নলুয়াছড়া হুগলিয়াছড়া, গান্ধিছড়া, আমরইলছড়া, আলীয়াছড়া, মাকড়ীছড়া, শুয়ারীছড়া পাত্রীয়াছড়া, জৈতাছড়া, ইছামতিছড়া, বৌলাছড়া, বড় ছড়া, মুড়াছড়া, কালিছড়া কলমছড়া, ফুলছড়া, গোপলাছড়া ও শিয়ালছড়া।

যার মধ্যে ইজারা দেয়া হয়েছে ৬টি। ইজারাধিন ছড়াগুলো হচ্ছে জৈনকাছড়া, জাগছড়া (পশ্চিম অংশ), সুমইছড়া, নারায়নছড়া, বৌলাছড়া ও বড়ছড়া।,  


এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন ছড়া, ও জমির মাটি কেটে তার নিচ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র । এতে একদিকে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে সড়ক ও জনপদের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা বলেন, ইজারা নিয়ে নিয়ম মেনে বালু উত্তোলন করার সরকারী নিয়ম রয়েছে। শ্রীমঙ্গলের সবগুলো ছড়া যদি বৈধ ইজারার আওতায় আসে তবে এ প্রকৃয়া কমে যাবে। 

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসলাম উদ্দিন আরো বলেন, প্রতিটি ছড়ার দৈঘ্য ৮/১০ কিলোমিটার কোনটা তারও বেশি। এই ছড়াগুলোতে সিলিকাবালু উৎপন্ন হয়। এই দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ছড়াগুলো নজরদারীতে রাখতে তাদের হিমসীম খেতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে জনগণের সচেতন হওয়া ছাড়া তা রক্ষা করা কষ্টকর। তবে কষ্ট হলেও আমরা অভিযান অভ্যাহত রাখবো। যারাই তা করবে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এই সম্পর্কিত আরো