বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

জনদুর্ভোগ চরমে

সেতু, ফায়ার সার্ভিস ও কারিগরি শিক্ষার দাবিতে বালাগঞ্জবাসীর হাহাকার

স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরোলেও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বালাগঞ্জ উপজেলা আজও উন্নয়নের মূলধারার বাইরে। বড়ভাঙ্গা নদীর ওপর সেতু, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও আধুনিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে এখানকার মানুষের জীবন, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,  ঐতিহাসিক বালাগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৮২ সালে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল বর্তমান বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও রাজনগর। পরে ১৯৮২ সালে বালাগঞ্জের ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে এই থানা পূর্ণাঙ্গ উপজেলায় উন্নীত হয়। ২০১৪ সালে ওসমানীনগর আলাদা হলেও বর্তমান ৬ ইউনিয়ন নিয়ে উন্নয়ন-বঞ্চিত বালাগঞ্জই থেকে যায়।

সেতুর অভাব: 
পশ্চিম গৌরীপুর, দেওয়ানবাজার ও সদর ইউনিয়নের বাসিন্দারা কার্যত উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন। বড়ভাঙ্গা নদীর ওপর সেতু না থাকায় স্থানীয়দের ফেঞ্চুগঞ্জ বা ওসমানীনগর হয়ে দীর্ঘপথ ঘুরে যানবাহন নিয়ে যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। বর্ষাকালে ভরসা কেবল নৌকা, যা শিক্ষার্থী, গর্ভবতী নারী ও রোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
২০১৮ সালে শেখ হাসিনা সেতু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও এখনো এর বাস্তবায়ন হয়নি।

ফায়ার স্টেশনের অভাব:

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বালাগঞ্জে ফায়ার সার্ভিস না থাকায় সহায়তা আসে ওসমানী নগর বা জেলা সদর থেকে। এতে বিলম্বিত উদ্ধার কার্যক্রমে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কারিগরি শিক্ষার ঘাটতি:

প্রবাসী অধ্যুষিত এই জনপদের যুবকরা আধুনিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন। ফলে স্থানীয়দের দাবি—এখানে দ্রুত একটি সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হোক।

জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের মতামত:

দেওয়ানবাজার ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল আলম বলেন, আমরা মূলত উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন। বড়ভাঙ্গা নদীর ওপর সেতু শুধু প্রয়োজন নয়, লাখো মানুষের প্রাণের দাবি।

বালাগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন জানান, বর্ষায় জীবন বাজি রেখে নদী পার হওয়া এমন বাস্তবতা। যুগের পর যুগ মানুষ একটি সেতুর অপেক্ষায়। জানি না কবে স্বপ্ন পূরণ হবে।

উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. আব্দুল জলিল বলেন, সেতু, ফায়ার সার্ভিস ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বালাগঞ্জবাসীর উন্নয়ন কল্পনাতীত। আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পশ্চিম গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মুজিবুর রহমান বলেন, সেতু ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান শুধু উন্নয়নের অংশ নয়—এগুলো মানুষের জীবন, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। প্রতিশ্রুতির বন্যা বইলেও বাস্তবে কিছু হয়নি। সরকারের প্রতি আহ্বান—বালাগঞ্জের মানুষের ন্যায্য দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন হোক।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজিত কুমার চন্দ বলেন, সেতু ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়টি প্রসেসিংয়ে রয়েছে। ফায়ার স্টেশন নিয়েও শিগগির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এদিকে, স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে—দ্রুত সরকারি উদ্যোগ ছাড়া বালাগঞ্জের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ঘোচানো সম্ভব নয়। তাই উন্নয়নের মূলধারায় বালাগঞ্জকে ফিরিয়ে আনতে সেতু, ফায়ার স্টেশন ও আধুনিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিগগির বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এই সম্পর্কিত আরো