মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

শ্রীমঙ্গল সেপটি ট্যাংকের বিষক্রিয়ায় ৪ চা শ্রমিক তরুণের রহস্যজনক মৃত্যু

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের সীমান্তবতী হরিণছড়া চা সেপটিক ট্যাংকের গ্যাসের বিষক্রিয়ায় ৪ তরুণের মৃত্যু হয়েছে। সেপটিক ট্যাংকের গ্যাসের বিষক্রিয়ায় এই মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় অপর একজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। টয়লেট করতে গিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, যে চারজনকে রাতে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন কত্যর্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত অবস্থায় পান। অপর একজন রবি বুনার্জীকে নিয়ে এলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবস্থার অবনতি দেখলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। তাদের স্বজনরা জানান, নিহতরা সেপটিক ট্যাংকে নেমেছিল।

নিহতরা হলেন- রানা নায়ক (১৭), শ্রাবণ নায়েক (১৯), কৃষ্ণ রবিদাস (২০) ও নিপেন ফুলমালি (২৭)। এরা সবাই শ্রীমঙ্গল হরিণছড়া চা বাগানের চা শ্রমিকের সন্তান।

হরিণছড়া চা বাগানের পঞ্চায়েতের সাধারন সম্পাদক সুশীল বুনার্জী জানান, বাগানের উত্তর লাইনে রাত সাড়ে ১০ টায় রানা পটনায়েক টয়লেট করতে যায়। বৃষ্টির ফলে টয়েলটি পঁচে যাওয়ার কারণে কাঁচা টয়েলটি ধ্বসে যায়। এসময় রানার বড় ভাই শ্রাবন পট নায়েক তাকে তুলতে গেলে সেও পড়ে যায়। তখন নিপেন ফুলমালি ও কৃষ্ণ রবি দাশ তাদের উদ্ধার করতে গেলে গ্যাসের কারণে তারা আর বের হতে পারেনি। এসময় রবি বুনার্জী উদ্ধার করতে গিয়ে টয়লেটের গর্তের মুখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। কিছুক্ষন পর এলাকাবাসী সবাইকে উদ্ধার করেন।


এদিকে দূর্গম এলাকা হওয়ায় তাদের হাসপাতালে আনতে সময় লাগে ৷ পরে আশংকাজনক অবস্থায় তাদেরকে প্রথমে শ্রীমঙ্গল ও পরে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় রবি বুনার্জী (২০) নামে একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আহমদ ফয়সল জামান বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১টায় প্রথমে ৪টি ডেডবডি আমাদের হাসপাতালে আসে। প্রায় এক ঘণ্টা পর আহত একজন আসে। সেপটিক ট্যাংকে একে একে চারজন মারা যাওয়ার ঘটনাটি অস্বাভাবিক। এক রিঙের একটা সেপটিক ট্যাংকে এত টক্সিক গ্যাস কী করে জমলো এটা ঠিক ক্লিয়ার করে বুঝা যাচ্ছে না। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যাবে।


বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ এ কন্দ বলেন, হরিণছড়া বাগানের ৪ জন তরুণের মৃত্যুর ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। শুনেছি একজন সেপটিক ট্যাংকে পড়ে গেলে এটি উদ্ধার করতে গিয়ে একে একে রানা, শ্রাবণ, কৃষ্ণ এবং নিপেন এই চারজন ট্যাংকের ভেতরে নামলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এই ঘটনাটি দেখে রবি বুনার্জী নামে এক তরুণ ওই অসুস্থ হয়ে পড়া ৪ জনকে উদ্ধার করতে সেপটিক ট্যাংকের নিচে নামলে সেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবশেষে জাস্টিন নামে এক তরুণ এসে দ্রুত রবি বুনার্জীকে উদ্ধার করলেও ওই ৪ জনকে আর উদ্ধার করতে পারেনি। পরে জাস্টিনও অসুস্থ হয়ে পড়ে।

 

শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম তথ্যটি নিশ্চিত করে জানান, বুধবার (৯ জুলাই) রাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী হরিণছড়া চা-বাগানে সেপটিক ট্যাংকের বিষাক্ত গ্যাসে ৪ জন মারা যায়। ময়না তদন্তের জন্য তাদের মরদেহ মৌলভীবাজার মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যাবে।

এই সম্পর্কিত আরো