মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

হাওরে পোনা নিধন, বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ

হাওর-বিল আর খাল-ছড়া ঘেরা সুনামগঞ্জের গ্রামীণ জনপদ একসময় ছিল দেশীয় মাছের অফুরন্ত ভাণ্ডার। তবে সময়ের পরিক্রমায় নানা অনিয়ম আর অসচেতনতার কারণে সেই মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। হাওরের পানিতে জাল ফেলেও আর আগের মতো মাছ মিলছে না। স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, পোনা নিধনের কারণে ছোট মাছের অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখে।

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দেখার হাওর, নাইন্দার হাওর, কালিউরি হাওর ও কাংলার হাওর ঘুরে দেখা গেছে—চ্যাং, ট্যাংরা, পুঁটি, কৈ, শিং, মাগুর, বেলে, গজার, ফলি, টেংরা, খৈলসা, বাইমসহ দেশীয় মাছের পোনা নির্বিচারে ধরা হচ্ছে। অবৈধ কারেন্ট জাল, চায়না রিং জাল ও বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে মাছ ধরা হচ্ছে হরহামেশাই। ফলে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ।

নাইন্দার হাওরপারের জেলে সুহেল মিয়া বলেন, ‘আগে বর্ষায় শুধু জাল না, হাত দিয়েও মাছ ধরতে পারতাম। এখন সারা দিন জাল ফেলেও দুই–চারটা চ্যাং-কই ছাড়া কিছুই ধরা পড়ে না।’

দেখার হাওরের জেলে আব্দুল করিম বলেন, ‘আগে মাছ ধরেই সংসার চলত। এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না, সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন বলেন, ‘স্থানীয়দের অসচেতনতা এবং অবৈধ জাল ব্যবহারের কারণেই দেশীয় ছোট মাছ বিলুপ্তির মুখে। চায়না রিং জাল, কারেন্ট জাল, বেড়জাল ও পানি শুকিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা বন্ধ না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।’

স্থানীয়দের অভিযোগ, হাওরে নির্বিচারে মাছ নিধন, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরা, বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহারে পানি দূষণ এবং মাছের প্রজনন মৌসুমে ধরাধরি বন্ধ না থাকার কারণে পরিস্থিতি দিন দিন সংকটজনক হয়ে উঠছে। আগে প্রতিদিন ১০–২০ প্রজাতির দেশীয় মাছ ধরা পড়ত, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫–৬ প্রজাতিতে।

জানা গেছে, মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশীয় মাছের প্রজনন মৌসুম। এ সময় মাছ ধরা বন্ধ না থাকায় প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি হাওরের পানিপ্রবাহ ব্যাহতকারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, জলাশয় ভরাট, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে পানি দূষণসহ নানা কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী মৎস্যসম্পদ।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুপ রতন সিংহ বলেন, ‘দেশীয় মাছ শুধু আমাদের খাদ্যের উৎস নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য ও জীববৈচিত্র্যের অংশ। মাছ সংরক্ষণে শুধু প্রশাসন নয়, সাধারণ মানুষেরও দায়িত্ব রয়েছে। খুব শিগগিরই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অবৈধ মাছ ধরা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

এই সম্পর্কিত আরো