“ মহাসড়কের কাজ হঠাৎ থমকে গিয়ে যেন গলার কাটা ” কৃষক রহিম উল্লার এই কথাটি সাথে জড়িয়ে আছে নবীগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষের কান্না, সুখ-দুঃখ আনন্দ বেদনা।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সিক্স লেনের কাজ কাজ শুরু হয়েছে দুই বছর। নবীগঞ্জের সীমান্তবর্তী শেরপুর থেকে নবীগঞ্জ ও বাহুবল মীরপুর পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলো মিটার মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান। এখানে নির্মিত হচ্ছে ৫০টি অধিক সেতু ও কালভার্ট। এসব সেতু ও বক্স কালর্ভাট গুলো মুলত পানি নিস্কাশনের জন্য নির্মিত হচ্ছে।
এই এলাকায় মহাসড়কের পশ্চিম পাশে রয়েছে ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওর আর পূর্ব পাশে রয়েছে দিনারপুর পাহাড়ি এলাকা। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকার পানি নিস্কাশনের জন্য নবীগঞ্জ ও বাহুবলের পুটিজুড়ি এলাকায় ঘন ঘন বক্স কালভার্ট করা হচ্ছে। ৫০টি কালভার্টের পাশাপাশি ১০টি সেতু করা হচ্ছে। কিছুদিন যাবৎ হঠাৎ করে মহাসড়কের এসব নির্মান কাজ থমকে গেছে। বড় সেতু দুটির কাজ ধীরগতিতে চলছে। কালভার্ট গুলোর কাজ পুরোদমে বন্ধ রয়েছে।
ফলে মহাসড়কটি এখন কয়েক লক্ষ মানুষের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ মহাসড়কের নির্মান কাজের জন্য যে সব ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি সেই সব ডিভাইডার বাঁধে আটকে যাচ্ছে। মহাসড়কের পূর্ব পাশে ৩০/৪০ কিলোমিটার এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল বৃষ্টি হলেই সেই সব পানি গড়িয়ে নীচে ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরে নামে এখন কাজ বন্ধ করে রেখেছে মহাসড়ক নির্মান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
বর্ষা মওসুম শুরুতে চরম দুর্ভোগে পড়বেন কয়েক লক্ষ মানুষ। পাহাড়ির পানি আটকে অকাল বন্যা ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। এবিষয়ে দেবপাড়া গ্রামের বাসিন্ধা রহিম উল্লাহ বলেন, “ মহাসড়ক যেন থমকে গিয়ে গলার কাটা যেন না হয়” কার এসড়কের নীচে দিয়ে আমাদেও পাহাড়ি এলাকায় পানি হাওরে যায়, এখন তারা বাঁধ (ডিভাইডার) দিয়ে রাখছেন এগুলো কেটে না দিলে সমস্যা বড় আকার ধারণ করবো। আমাদের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে। কাজ বন্ধ হয়েছে এটা সমস্যা নয় সমস্যা হলো সব পানি আটকে মহাসড়ক ডুবিয়ে দিবে।
ঈানিউমদা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান, কিছুদিন যাবৎ হঠাৎ করে মহাসড়কের এসব নির্মান কাজ থমকে গেছে। বড় দুই তিনটি সেতুর কাজ ধীরগতিতে চলছে। কালভার্ট গুলোর কাজ পুরোদমে বন্ধ রয়েছে। ফলে মহাসড়কটি এখন কয়েক লক্ষ মানুষের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। কারণ মহাসড়কের নির্মান কাজের জন্য যে সব ডিভাইডার নির্মাণ করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি সেই সব ডিভাইডার বাঁধে পানি আটকে যাচ্ছে। বিষয়টি জরুরিভাবে দেখার দরকার। আমাদেও পাহাড়ির এলাকার পানি নামার আর বিকল্প পথ নেই।
দেবপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহরিয়াজ সুমন বলেন, সেসব স্থানে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে তা পরিকল্পনা মাফিক করা দরকার। সড়কের শেরপুর থেকে বাহুবল পর্যন্ত এই অংশে অন্তত ৫০টি কালভার্ট ও ১০টি সেতু রয়েছে এমন প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান। শুধু বিজনা নদীর সেতু ও করাঙ্গী নদীর সেতু ছাড়া সব কাজই বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার এমন বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, আগে দেবপাড়া থেকে পুটিজুরি পাহাড়ি এলাকার পানি সরাসরি ঘুঙ্গিয়াজুড়ি প্রবাহিত হতো । মহাসড়ক হওয়ার পড়ে এসব এলাকায় ঘন ঘন কালভার্ট করা হয় পানি নিস্কাশনের জন্য। এসব কালভার্ট গুলোর মধ্যে ডিভাইডার বাঁধ দিয়ে নতুন করে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। ইদানিং হঠাৎ করে কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে বৃষ্ট্রির পানি এখন নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে দুটি উপজেলার কৃষকরা এখন চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অকাল জলাবদ্ধতার চিন্তায়। কয়েকদিন আগে সামান্য বৃষ্ট্রি হলে পানি আটকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে সেখানে সেতু বা কালভার্ট স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। ফসলি জমিতে বা এসব কালভার্ট গুলোর সামনে স্থাপনা নির্মাণ করায় বদলে গেছে সেখানকার অবস্থা।
কিন্তু পূর্বনির্ধারিত স্থানেই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনড় কর্তৃপক্ষ। ফলে অনেক জায়গায় আবার এসব কালভার্ট অকেজো হয়ে পড়েছে। সুদুর প্রসারি পরিকল্পনা ছাড়াই এসব নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে এবং এখন আবর পরিকল্পনা ছাড়াই হুট করে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
যে সব এলাকায় সেতু হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে আউশকান্দি ইউনিয়নের সৈয়দপুর হাতিমারা নদীর সেতু, আমুকোনা গ্রামের নিকট শাখা বরাক নদীর সেতু, দেবপাড়া ইউনিয়নের রুস্তমপুর টোল প্লাজার নিকট গোপলা নদীর উপর দুটি সেতু, শেরফরাজপুর ও ভানুদেব গ্রামের নিকট শাখা বিজনা নদীর সেতু, বিজনা বাঁশ বাজারের নিকট বিজনা সেতু, ভরাখাল সেতু, পানিউমদা নদীর সেতু ও করাঙ্গী নদীর সেতু। এছাড়া আউশকান্দি বাজার থেকে বাহুবল মীরপুর পর্যন্ত রয়েছে ৫০টির মতো বক্স কালভার্ট। এসব বক্স কালভার্ট দেওয়া হয়েছে বৃষ্টির পানি ও দিনারপুর পাহাড়ি এলাকার পানি দ্রুত ঘুঙ্গিয়াজুড়ি হাওরের মধ্যে পতিত হতে পারে। বিশেষ করে মহাড়কের পুর্ব পাশে পাহাড়ির এলাকা, জনবসতি বেশি ও পশ্চিম পাশে হাওর তাই পানি হাওরের মধ্যে প্রবাহিত হয়।
এর আশপাশে কোথাও কোনো পানির নামার বিকল্প রাস্তা নেই। তাই মহাসড়কের নীচ দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। এমন অবস্থাতেই সেখানেই কালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল। এখন হঠাৎ করে কেন নির্মান কাজ রাখা হয়েছে সেটা জন সাধারণ অজ্ঞাত।
আলী হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, আউশকান্দি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মাঝখানে নির্মাণাধীন আরও একটি কালভার্টের পূর্ব পাশের সীমানায় রয়েছে বিশাল প্রাচীর। এর আশপাশে পানির কোনো নালা বা প্রবাহ নেই। সেখানেও কালভার্টের কাজ চলছে।
স্থানীয়রা বলছেন, একসময় এখানে সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে পানির প্রবাহ থাকায় কালভার্ট করা হয়। বর্তমানে অনেক স্থানে সেটির প্রয়োজন না থাকলেও চলমান প্রকল্পের আওতায় কালভার্ট নির্মাণের সিদ্ধান্তে অটল সংশ্লিষ্টরা। আউশকান্দি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের পাশে রহমান কমিউনিটি সেন্টার পাশে অপরিকল্পিত ভাবে বিশাল দুটি কালভার্ট নির্মান করা হচ্ছে সেটা পানি নিস্কাশনের কোন কাজে আসবে না বরৈ স্থানীয়রা জানান।
উমরপুর গ্রামে আশিকুর রহমান বলেন, এখানে জোয়াল হাওর ও ভরার বিল রয়েছে পানি মহাসড়কের উত্তর দিকে কুশিয়ারার নদীর পানি প্রবেশের কারণে বন্যার সময় পানির স্তর অনেক উঁচুতে থাকলেও দক্ষিন দিকের পানির স্তর নিচে। এখানে বিভিন্ন খালের ওপর নির্মিত সেতু ও কালভার্ট দিয়ে পূর্ব দিকের পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়। এসব এলাকার খাল-বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। তাতে বন্যার সময় দীর্ঘ হচ্ছে জলাবদ্ধতা সমস্যা সৃষ্টি হবে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেবাশিস রায় বলেন, সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হচ্ছে। কালভার্ট গুলোর কাজ চলমান তাই ডিভাইডার গুলো কেটে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন হয়তো শ্রমিক সংকটের কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করেছে, আমরা খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিবো। যেসব স্থানে এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো আগেই নির্ধারিত। পাহাড়ি এলকায় পানি নিষ্কাশনের জন্য এসব এলাকায় ঘনঘন কালভার্ট করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন বর্ষা মওসুমে এসব ডিভাইডার বাঁধ কেটে দেয়া হবে।