মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
নতুন ধারায় রাজনীতি শুরু করতে চাই: জামায়াত আমির বিজয়ের অঙ্গীকার হোক বিভাজন ও হিংসা ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়ানো একাত্তর ও চব্বিশের দালালদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ: নাহিদ ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ঢাকায় নামবেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল জামায়াতের যুব ম্যারাথনে লাখো নেতাকর্মীর ঢল প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক চোরাচালানকারী জাহাজে মার্কিন হামলা, নিহত ৮ নিলামের রেকর্ড তছনছ, কলকাতা নাইট রাইডার্সে ক্যামেরন গ্রিন এবারের বিজয় দিবস হোক জাতীয় জীবনে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা হাদিকে গুলি করা অস্ত্রের ম্যাগাজিন উদ্ধার
advertisement
রাজনীতি

রাজনীতিতে নয়া শক্তির আওয়াজ, নানা গুঞ্জন

হঠাৎই যেন গোলপোস্ট বদলে গেছে। চিরচেনা বন্ধুরা জড়াচ্ছেন বিরোধে। শত্রুদের কাছে টানার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতার লড়াই অবশ্য চিরকাল এমনই। কঠিন এবং নিষ্ঠুর। এ ভূমের রাজনীতি ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত পার করছে। শেখ হাসিনার পলায়নের  পর দৃশ্যপটে নানা পরিবর্তন আসছে। বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন মূলত দু’টি-এক. আগামী নির্বাচন কবে হবে? দুই. নির্বাচনে কারা জয় পাবেন।
   

এই প্রশ্নের প্রেক্ষাপট সামনে রেখেই আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দলের। বলে রাখা ভালো, এদেশে রাজনৈতিক দল নিয়ে  ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কম হয়নি। গবেষকদের শ্রম ও মেধারও হয়তো ঘাটতি ছিল না। সামরিক-বেসামরিক, তন্ত্র-তত্ত্ব। বৈচিত্র্য ছিল নানা রকম। কিন্তু সফলতার হার একেবারেই নগণ্য। দল আসে, দল যায়। এটাই যেন এখানে নিয়ম।

তবে এবারের দৃশ্যপট কিছুটা হলেও ভিন্ন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই নতুন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নেতাদের কেউ কেউ তীব্র ভাষায় জামায়াত-শিবিরের সমালোচনা করছেন। নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের নেতাদের নিয়েও নানা বক্তব্য দিচ্ছেন। ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা’ নিয়েও একদফা নাটক হয়ে গেছে। মুখোশে যাই থাকুক এটাও আসলে রাজনীতিরই লড়াই। যেকারণে বিএনপি এতটা রিঅ্যাক্ট করেছে। বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা রুহুল কবির রিজভী কারও নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, ‘রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা একটি দল গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগকে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে অভিহিত করছেন। নাগরিক কমিটির সমর্থকরাও অবশ্য এর জবাব দিচ্ছেন। সংগঠনটির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, বাংলাদেশের প্রথম কিংস পার্টি হচ্ছে বিএনপি।


বিএনপি সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো সূত্র মনে করে, নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের নেপথ্যে জামায়াতের সমর্থন রয়েছে। এটা বিএনপি’র মধ্যে একধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে। নির্বাচন কবে হবে এ নিয়েও দলটির শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে নানা জিজ্ঞাসা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এ নিয়ে একধরনের ডেটলাইন দিলেও তা বিএনপিকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএনপি কি সরকারের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাবে? বিএনপি’র একজন নেতা বলেন, এখনো তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এ প্রশ্ন বিএনপি’র জন্য বেশ কঠিন। কিছু কিছু সূত্র দাবি করছে, আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে ফেরার চেষ্টা করবে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গেও যদি তারা যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তা বিস্ময়কর হবে না। 

এই অবস্থায় জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নেতাদের নেতৃত্বে দল গঠনের জোরদার চেষ্টা চলছে। আগামী দুই মাসের মধ্যেই নতুন দল দেখা যেতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এরইমধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে সারা দেশে কমিটি দেয়া হচ্ছে। ৩৬ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্র সমন্বয়করাও বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি দিচ্ছেন। তবে শীর্ষ সমন্বয়কদের কারও কারও মধ্যে মতবিরোধের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। 

ট্র্যাক রেকর্ডে যেখানে নতুন রাজনৈতিক দলের সফলতার হার নেই বললেই চলে; তবুও কেন নতুন দল? এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন সরলভাবে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে, ছাত্ররা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। তারা বিশ্বাস করেন রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তনেও তাদের আহ্বানে জনগণ সাড়া দিবে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ভারত বিরোধিতা ছিল প্রবল। এ আন্দোলনের নেতারাও প্রায়শ’ই ভারতের নানা ভূমিকার বিরোধিতা করেন। এটাও স্পষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন সহজভাবে নেয়নি নয়াদিল্লি। এই ছাত্রনেতাদেরও যে প্রতিবেশীরা উষ্ণভাবে গ্রহণ করছে না তারও ইঙ্গিত মিলছে। নতুন দল গঠনের পেছনে এ বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের ভূমিকা। অতিসম্প্রতি আওয়ামী লীগের বিবৃতিতেও ছাত্রনেতাদের সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সমন্বয়কদের প্রতি তাদের মনোভাব কী হবে তা সহজেই বুঝা যায়। 

নেতারা আশাবাদী: নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আকতার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর একটি নির্দিষ্ট জনসমর্থন থাকলেও এ দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে প্রত্যাশা রয়েছে। বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার নেতৃত্বের প্রতি তাদের অনেক ভরসা রয়েছে। তারা মনে করে এদের মাধ্যমে দেশের জন্য ভালো কিছু করা সম্ভব। তাই পুরাতন বন্দোবস্তের বাইরে নতুন একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে। যেটি বিভিন্ন জরিপ এবং বিভিন্ন এলাকার সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ফুটে উঠেছে। মানুষ  তরুণদের ওপর আস্থা ও ভরসা রাখছে। তারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চায়। সেই দিক বিবেচনা করেই আমাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ। নির্বাচনে অংশ নেয়ার কৌশল প্রসঙ্গে আকতার হোসেন বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় জোট হতে পারে আবার নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা তখনকার পরিস্থিতি ও দলগুলোর আদর্শিক দিক বিবেচনা করেই জোট করবো। তবে এ মুহূর্তে আমরা জোট নিয়ে ভাবছি না। সময় হলে সেটি দেখা যাবে। এখন আমরা দল গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে তরুণদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেটি তারা নিতেই পারে। যে কারও রাজনৈতিক দল গঠন করার বা রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানের একটি প্ল্যাটফরম। আমরা এটিকে কোনো রাজনৈতিক দলে রূপ দিতে চাই না। কেউ যদি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে চান তাহলে তাকে আমাদের প্ল্যাটফরম থেকে অব্যাহতি নিতে হবে। কারণ এটি অভ্যুত্থানের সম্পদ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। 

তিনি বলেন, যারা রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছেন জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তারা মনে করছেন রাজনীতিতে তরুণদের অংশীদারিত্ব থাকা দরকার। তাই তারা দল গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। গত ১৫ বছর এদেশের মানুষ নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করতে পারেনি। এটাকে আমি বলবো সময়ের ব্যর্থতা বা সিস্টেমের ব্যর্থতা।      

অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারির মত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নুরুল আমিন বেপারি নতুন রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে নিজের মতামত তুলে ধরেন মানবজমিনের কাছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল করার অধিকার সবার আছে। তার কিছু প্রেক্ষাপটও আছে। প্রশ্ন হচ্ছে- যারা করতে চাচ্ছেন তারা কতোটুকু সফল হবেন। 

ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেছে। তারা আওয়ামী লীগের গুম- খুনের বিরুদ্ধে যে সেন্টিমেন্ট সেটির দখল নিজেদের পক্ষে নিয়ে নিয়েছে। এ ছাড়া ভারতবিরোধী পক্ষকেও তারা তাদের পক্ষে টানতে পেরেছে। এখন কথা হচ্ছে ছাত্ররা কি কিংস পার্টি হবে না ধীরে ধীরে নিজেদের গুছিয়ে  নেবে। কিংস পার্টি না হয়ে তারা যদি আসলেই দল হিসেবে গড়ে উঠতে চায় তাহলে তাদের সেভাবে কাজ করা উচিত। এটা ঠিক যে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা  দেবে। কারণ এরা ক্ষমতায় আসলে তাদের লাভ। বৈষম্যবিরোধীরা আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে এসেছে। সেখানে বিএনপি পরোক্ষভাবে তাদের সমালোচনা করছে। 

বিএনপি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চাইলে ভুল করবে: নির্বাচন যত দেরি হবে তত ছাত্ররা ভালো করবে। নির্বাচন হলে হয়তো ক্ষমতায় যাবে না তবে ভালো করতে পারে যদি তারা জামায়াতসহ অন্যান্য দলকে জোটে নিয়ে নিতে পারে। এমন হলে পাশার দান উল্টেও যেতে পারে। এতে যে জামায়াতের প্রত্যক্ষ সমর্থন রয়েছে বুঝাই যায়। আন্দোলনের সমন্বয়কদের অধিকাংশ শিবিরের। শিবিরের প্রোগ্রামে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভ্যুত্থানের  ক্রেডিট তাদের দিয়ে দিচ্ছে। অথচ এ আন্দোলনে তারেক রহমান ও তার দলের নেতাকর্মীদের অনেক ত্যাগ রয়েছে। জামায়াত তাদের ছাত্রসংগঠন দিয়ে বৈষম্যবিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন ডাকসু নির্বাচনের বিষয় সামনে আসছে। এটা যদি হয় তাহলেও শিবির ও  বৈষম্যবিরোধীরা ভালো করবে। আর ডাকসুতে যারা ভালো করবে তাদের জাতীয় রাজনীতি ভালো হবে- এটাই স্বাভাবিক।

এই সম্পর্কিত আরো

নতুন ধারায় রাজনীতি শুরু করতে চাই: জামায়াত আমির

বিজয়ের অঙ্গীকার হোক বিভাজন ও হিংসা ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়ানো

একাত্তর ও চব্বিশের দালালদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ: নাহিদ

২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ঢাকায় নামবেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল

জামায়াতের যুব ম্যারাথনে লাখো নেতাকর্মীর ঢল

প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক চোরাচালানকারী জাহাজে মার্কিন হামলা, নিহত ৮

নিলামের রেকর্ড তছনছ, কলকাতা নাইট রাইডার্সে ক্যামেরন গ্রিন

এবারের বিজয় দিবস হোক জাতীয় জীবনে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন

জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

হাদিকে গুলি করা অস্ত্রের ম্যাগাজিন উদ্ধার