ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আগামীকাল বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি হবে। সে পর্যন্ত হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিতই থাকবে।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। তিনি বলেন, আগামীকাল বুধবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য ১ নম্বর আইটেম হিসেবে থাকবে।
এর আগে গতকাল সোমবার ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। তাতে ডাকসু নির্বাচনে বাধা কাটে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন ডাকসু নির্বাচনে বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম। এস এম ফরহাদ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি।
গত রোববার বিষয়টি উত্থাপন করা হলে আদালত আজ মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করে দেন। তবে ওই দিন বিকেলে বিষয়টি আবার উত্থাপন করেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী। পরে আদালত গতকাল সোমবার শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দেন। সে অনুযায়ী সোমবার বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর বেঞ্চে শুনানি হয়।
সোমবার ২টা ৪০ মিনিটের দিকে হাইকোর্টে শুনানির জন্য উঠে। শুরুতেই আদালত বলেন, এটা হাইকোর্টে কেন? রিট আবেদনকারীর আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এস এম ফরহাদ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের তার বিভাগের কমিটিতে ছিল। ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতায় দুইজন ২৮ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এস এম ফরহাদ কোথাও বলেননি তিনি জুলাই আন্দোলন সমর্থন করে ওই পদ থেকে সরে এসেছেন। তিনি এখন শিবির সমর্থিত প্যানেলে জিএস পদপ্রার্থী।
হাইকোর্ট বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বারের যখন নির্বাচন হয় তখন প্যানেল হলেও বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা জামায়াত উল্লেখ থাকে না। সেটা তো ছাত্রদের নির্বাচন। ছাত্রলীগ তো নিষিদ্ধ। তাহলে এখন কি তাদের চাকরি দিবেন না? তাদেরকে সেভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে?’
হাইকোর্ট বলেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর সে তো বৈধ প্রার্থী। তার পরিচয় সে একজন ছাত্র। এ সময় আদালত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শুনতে চাইলে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, রিটকারী নিজেও প্রার্থী। তবে সেটা অন্য পদে। আর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি। সেখানে হয়ে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশন অনেকের প্রার্থিতা বাতিলের পর আপিলও নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। ফরহাদের ভোল পাল্টানোর কথা বলা হচ্ছে। অথচ তিনি জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা। ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের ফরহাদের ভূমিকা নিয়ে বলেছেন। একটা পক্ষ বলছে ফরহাদ ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিল ছিল, আর একটা পক্ষ বলছে ছিল না। কমিটিতে থাকার সমর্থনে একটি প্যাড ছাড়া আর কোনো কিছুই নেই। বিষয়টি বিকর্তিত। এ ক্ষেত্রে রিট চলে না।
শিশির মনির বলেন, কর্তৃপক্ষের কাছে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে যাচাই করে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এসএম ফরহাদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ ওঠেনি। সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রচারণা চলছে।
হাইকোর্ট বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো অংশেই জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে কম না। আদালত জ্যোতির্ময় বড়ুয়াকে প্রশ্ন করেন, ‘প্রাথমিক তালিকা হবার পর এস এম ফরহাদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি কেন? চূড়ান্ত তালিকায় বৈধ প্রার্থী ঘোষণার এত দিনপর কেন?’
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত নির্বাচন স্থগিত করেন। তবে হাইকোর্টের আদেশের পর এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যেই হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার আদালতে স্থগিত হয়ে যায়।