ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে এক বিজেপি নেত্রীর ফ্ল্যাটে মধুচক্রের হদিশ মিলতেই রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। সোমবার রাতে পুলিশ সিগরা এলাকার শক্তি শিখা অ্যাপার্টমেন্টে হানা দেয়। ফ্ল্যাটটি বিজেপি নেত্রী শালিনী যাদবের স্বামী অরুণ যাদবের নামে।
সেখান থেকে পুলিশ নয় নারী ও চার পুরুষকে আটক করে। এই ঘটনায় পুরো এলাকা সরগরম। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে এ ধরনের কাজ অনেকদিন ধরে চলছিল। পুলিশের দাবি, তারা আগে থেকেই গোপন তথ্য পেয়েছিল। সেই সূত্র ধরে সেদিন রাতে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে ফ্ল্যাট থেকে বেশ কিছু সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একাধিক মোবাইল। উদ্ধার নথিগুলো নিয়েও চলছে তদন্ত। পুলিশের বক্তব্য এখানে স্পা সেন্টারের নামে বহুদিন ধরে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছিল। আটক হওয়া নারীরা আশপাশের জেলার বাসিন্দা। তাদের বেশিরভাগই কাজের সন্ধানে এসেছিল। পরে এই চক্রে জড়িয়ে পড়ে।
তদন্তে উঠে এসেছে ভাড়ার ফ্ল্যাট নিয়েই এই ব্যবসা চালানো হতো। ফ্ল্যাটে ঢোকার বিশেষ পদ্ধতি ছিল। সেদিন রাতেও সেই পদ্ধতি অনুযায়ী কয়েকজনকে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ঠিক সেই সময়েই পুলিশ অভিযান চালায়।
ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও চাপা উত্তেজনা। কারণ এই ফ্ল্যাটের মালিকানা বিজেপি নেত্রীর স্বামীর নামে। ফলে বিরোধী পক্ষ এই ঘটনাকে হাতিয়ার করছে। তারা বলছে, যোগী রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আড়ালে এমন কাজ দীর্ঘদিন ধরে চললেও প্রশাসন চোখ বন্ধ করে ছিল। বিরোধী শিবিরের দাবি এই ঘটনা শাসক দলের ভেতরকার অস্বচ্ছ দিকের আরও একটি প্রমাণ।
অন্যদিকে বিজেপি শিবির এই অভিযোগ মানতে নারাজ। দলের নেতাদের দাবি ঘটনাটি ব্যক্তিগত বিষয়। এর সঙ্গে দলের কোন সম্পর্ক নেই। পুলিশের তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে দল তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে। তবে ঘটনার সঙ্গে দলের ইমেজ সরাসরি জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তি ঢাকতে পারছে না শাসক শিবিরও। বিশেষ করে ভোটের আগে বা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সময়ে এমন ঘটনা সামনে আসায় চাপ বাড়ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। শালিনী যাদব এবং তার স্বামী অরুণ যাদবকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা ফ্ল্যাট সম্পর্কে কতটা জানতেন সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী বহুদিন ধরেই সন্দেহ ছিল।
তারা বলছে, সাধারণ ফ্ল্যাটে প্রতিনিয়ত আসা যাওয়া বাড়ছিল। অচেনা মানুষের ভিড় বাড়ায় সন্দেহ তৈরি হয়। পরে তারা ব্যাপারটি পুলিশের নজরে আনে। এরপর থেকেই নজরদারি শুরু করে পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশে এর আগেও এমন ঘটনা সামনে এসেছে। তবে এবার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এল বারাণসীর এই ফ্ল্যাট। প্রশাসন জানিয়েছে আটক সকলকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পেছনে আরও কেউ জড়িত কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
তবে যোগী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ আগামী দিনে এই ঘটনা আরও বড় বিতর্ক তৈরি করতে পারে।