বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সারাদেশ

শিলাবৃষ্টিতে কৃষকের মাথায় হাত

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে শিলাবৃষ্টিতে কৃষকদের পাট, বোরো ধান ও তিলসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর কথা বলেছে কৃষি বিভাগ। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইলা রানী। এর আগে সোমবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে হঠাৎ ৮-১০ মিনিট বৃষ্টির সাথে ব্যাপক শিলা বর্ষণ হয়।
 
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় ৮৬ হাজার ৫শ ৩০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩১২ মেট্রিক টন। এ ছাড়া ২৩ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে।

সেখানে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন। জেলার শুধু বোয়ালমারীতেই শিলাবৃষ্টি পড়ায় ৩ হেক্টর জমির পাট এবং ০.১৮ হেক্টর জমির বোরো ধান শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া তিল ও মরিচেরও ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের নয়নীপাড়া ও উমরনগর এবং শেখর ইউনিয়নের দুর্গাপুর ও তেলজুড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে পাট, ধান, তিল ও মরিচের ফসল।

এসব ফসলের মধ্যে শিলাবৃষ্টিতে পাটের ডগা ভেঙে পড়ে গেছে মাটিতে। এ ছাড়া কাঁচা-পাকা অবস্থায় থাকা বোরো ধান জমিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জমিতে ধানের শীষ ভেঙে পড়েছে। এসব কারণে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। চাষিরা অনেকেই এনজিও থেকে লোন নিয়ে এবং জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন।

স্থানীয় কৃষক ইউসুফ শেখ বলেন, সোমবার জোহর নামাজ শেষ হতেই আকাশ মেঘে ঢেকে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির সাথে ৮ থেকে ১০ মিনিট শিলা পরে। বৃষ্টি থামলে ক্ষেতে গিয়ে দেখি ক্ষেতের পাটের বেশি অংশের মাথা ভেঙে গেছে এবং নুইয়ে পড়েছে। আমি, আমার ভাই ও বাবা মিলে ১৯ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ক্ষেতের ফসলের প্রায় সব পাটের আগা ভেঙে শেষ হয়ে গেছে। এমন ক্ষতি হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্ট। এখন এই জমিতে অন্য ফসল আবাদেরও সুযোগ নেই।

আরেক চাষি মান্নান শেখ বলেন, ‘৮ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম। আবাদে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। সব শেষ হয়ে গেছে। টাকাও গেল, ফসলও গেল। এই ফসলের ওপর ভরসা করেই সারা বছরের সংসার খরচ, সন্তানদের পড়ালেখা চলে। ধারদেনা করে আবাদ করেছিলাম।’

আরেক চাষি আরশাদ মোল্লা বলেন, ‘গত রাতে ক্ষেতের চিন্তায় দুই চোখের পাতা এক করতে পারিনি। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পাট এবং ধানের আবাদ করেছিলাম। আর কিছুদিন পর ধান ঘরে তুলব, এমন সময় এমন ক্ষতি হয়ে গেল। ধানের কিছু অংশ বিক্রি করে দেনা শোধ করতে চেয়েছিলাম আর বাকি অংশ নিজেরা খেয়ে বাঁচতাম, এখন সবই শেষ হয়ে গেল।’ 

গৃহবধু নাজমা আক্তার নিজেই সংবাদকর্মীদের দেখে চলে এসেছেন ক্ষেতের জমিতে। মলিন চেহারা নিয়ে কোনো কথাই বলছেন না তিনি। শুধু চেয়ে আছেন পাট ও ধান ক্ষেতের দিকে। তিনি বলেন, গয়না বন্ধক রেখে পাট আবাদ করেছিল আমার স্বামী, তিনি বলেছিল পাট বিক্রি করে সেগুলো ছাড়িয়ে দিবে। গয়না পরে থাক এখন কি খেয়ে বাঁচবো সেই চিন্তাই মাথা ঘুরে।

এ ব্যাপারে বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইলা রানী জানান, শিলা বৃষ্টির পরেই ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের নিয়ে পাট ও ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করা হয়েছে। এ উপজেলার গুনবহা, শেখর, পৌরসভার আংশিক ও সদর ও চতুল ইউনিয়নে পাট, ধান ও তিল ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকার কাজ চলছে। তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। 
 
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, বোয়ালমারী উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে ৩ হেক্টর জমির পাট আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় আগাম পাটের বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে পাট ছোট থাকায় ক্ষতির পরিমাণ কম হয়েছে। ক্ষতি নিরূপণে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। দ্রুত ক্ষতির তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে সেই মোতাবেক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এই সম্পর্কিত আরো