দৈনিক সবুজ সিলেটে 'রাতারগুলে 'রক্ষকই ভক্ষক': জীববৈচিত্র্য ও পর্যটনে মারাত্মক হুমকি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের পর টনক নড়েছে উপজেলা প্রশাসনের। ২ অক্টোবরের সেই সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে স্থানীয় প্রশাসন। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারীর নির্দেশে আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) রাতারগুলে অবৈধভাবে মাছ শিকারের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছে বন বিভাগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি। অভিযানে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল উদ্ধার করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। তবে উদ্ধারকৃত জালের সংখ্যা নিয়ে বন বিভাগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পরিচালিত এই অভিযানে গভীর জলে পেতে রাখা ১১টি নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল উদ্ধার করা হয় এবং তা পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। বন কর্মকর্তা শাহ আলম ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উদ্ধারকৃত এসব জালের বাজারমূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা বলে জানা গেছে। অভিযানে অংশ নেন বন বিভাগের কর্মকর্তা, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং তিনঘাট এলাকার নৌকা মাঝিরা।
সারি রেঞ্জের রেঞ্জার শাহ আলম ইসলাম বলেন, আমরা সরেজমিন অভিযানে গিয়ে ১১টি জাল উদ্ধার করি এবং পরবর্তীতে জালগুলো ধ্বংস করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহবুব আলম দাবি করেছেন, সম্প্রতি স্থানীয়দের কাছ থেকে অবৈধ মাছ ধরার অভিযোগ পেয়ে আমরা সাঁড়াশি অভিযানের অংশ হিসেবে ৩১টি নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জাল উদ্ধার করি।
যৌথ অভিযানে বন বিভাগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য নিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, যেহেতু এটি যৌথ অভিযান ছিল, তাই তাদের ভিন্ন বক্তব্য রহস্যজনক।
পরিবেশ ও জলবায়ু ও বন বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ‘লিগাল ইনিশিয়েটিভ ফর ফরেস্ট অ্যান্ড এনভাইরোমেন্ট’ (লাইফ)-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি এম. আলী বলেন, "এই নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের ফলে ছোট মাছ ও ডিমপাড়া প্রজাতি ধ্বংস হচ্ছে। এর প্রভাবে রাতারগুলের জলজ বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ছে। রাতারগুলের মতো সংবেদনশীল জলাবনে এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।" তিনি প্রশাসনের এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, আমি সবুজ সিলেট পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আজ সোমবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বন বিভাগ ও সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন তা খোঁজ নিচ্ছি। তাছাড়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আমি সরজমিনে রাতারগুলে পরিদর্শন করব।
এই অভিযানের মাধ্যমে রাতারগুলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসনের সদিচ্ছা প্রকাশ পেলেও, উদ্ধারকৃত জালের সংখ্যা নিয়ে মতবিরোধ এবং সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বিষয়টি আরও তদন্তের দাবি রাখে।