বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

সিলেটবাসীর চরম দুর্ভোগ

৩ ঘণ্টার পথ ১২ ঘণ্টায়! ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরকযন্ত্রণা

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভয়াবহ যানজটে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাত্র ৩ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লাগছে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের যাত্রী ও সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

শুক্রবার নবীগঞ্জ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে পৌঁছাতে লেগেছে ৮ ঘণ্টা, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে লাগে মাত্র ২ ঘণ্টা। টানা দুই দিন ধরে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানজট অব্যাহত থাকায় শত শত গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে।

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি গোলচত্বর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ গোলচত্বর, সেখান থেকে মাধবপুর হয়ে সরাইল বিশ্বরোড মোড় এবং শাহবাজপুর সেতু পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বুধবার ভোর থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট দেখা গেছে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে আশুগঞ্জ পর্যন্ত।

এছাড়াও ঢাকা যাওয়ার পথে নরসিংদী মাধবদী, কাচপুর ও নারায়ণগঞ্জ বিশ্বরোড এলাকাতেও স্থায়ী যানজট দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন— “আমি নিজে পুরো এক রাত যানজটে আটকে ছিলাম। আশুগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জ-আউশকান্দি ও শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা যানজট থাকে। বিষয়টি সমাধানে জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”


সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিকল্পনাহীনভাবে চলমান সড়ক নির্মাণকাজ এবং সড়কে বড় বড় গর্ত ও ডাইভারশন না থাকাই এই ভয়াবহ যানজটের মূল কারণ।

সরেজমিনে গত দুই দিন দেখা গেছে, মহাসড়কের নির্মান কাজের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের কয়েকটি স্থান বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড গোল চত্বর ও শায়েস্থাগঞ্জ নতুর ব্রীজ এলাকা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জায়গাটি অতিক্রম করার জন্য চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। 

ফলে দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে থেমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর সেখানে গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে, কোনোটি আবার বিকল হয়ে পড়ছে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাককে আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি টোল প্লাজা, শায়েস্থাগঞ্জ গোল চত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।


স্থানীয় লোকজন জানায়, বুধবার দিবাগত রাত থেকে মহসড়কের যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল শুক্রবার ভোর ছয়টার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। বিকেল পর্যন্ত নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি থেকে শায়েস্থাগঞ্জ থেকে মাধবপুর, আশুগঞ্জ গোলচত্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় অনুমানিক ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটে।

গত দুই দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়েতে দেখা গেছে।

নবীগঞ্জ উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ শামীম আলম বলেন, শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। গতকাল দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম চলাচল করতে দেখা গেছে। হবিগঞ্জসহ নবীগঞ্জ, বাহুবল,সহ সিলেট বিভাগের দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

জামাল উদ্দিন তাহেরী নামে একজন ফেসবুকে লাইভে বলেন, তিনি ৫কিলো মিটার পায়ে হেটে যানজট মুক্ত হতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হয়ে অনেক যাত্রী তাঁর মতো পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন । 

সিলেট থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী নবীগঞ্জের ট্রাকচালক আমির হোসেন বলেন, ‘রাত ২টায় ছিলাম চান্দুরা আর এখন বেলা ১১টায় আছি বিশ্বরোড এলাকায়। মনে হচ্ছে আমরা কারও কাছে জিম্মি হয়ে আছি। একটু জায়গা ঠিক করে ড্রাইব্রেশন করে দিলে আমরা ভালো করে চলতে পারি, কিন্তু তা হচ্ছে না।’

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা হানিফ বাসের চালক রহিম আলী বলেন, ‘আমাদের কপাল খারাপ। না হলে মাসের পর মাস ধইরা এইখানে এ দশা কেন অইবে! এইখানে আসলেই আমাদের ঝামেলা অয়।’ “আইলাম রাতে অখন দুপুর ১২ টা বাজে যাত্রীদের নিয়া বসে আছি। কত কষ্ট কওয়া যায় না ভাই”

এব্যাপারে শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি দেওয়ান আবু তাহের বলেন, আমরা এসব যানজট রোধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেই। আমার এলাকা নবীগঞ্জে খুবই কম যানজট হয়।

শায়েস্থাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, আমার এলাকায় যানজট হয় মুল মহাসড়কের ব্রীজ গুলো নির্মানের জন্য কাজ চলছে তাই। আমরা যানজট নিরসনে সব সময় কাজ করছি।

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভোর ছয়টা থেকে রোডে আছি। এখন পর্যন্ত কিছু খাই নাই। পা ফুলে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। এক একটি যানবাহন ওঠানে ৫ থেকে ১০ মিনিটও সময় লাগে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মহাসড়কটিকে যানজটমুক্ত রাখতে। কিন্তু পারছি না। কয়েক দিন পরপর ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করেছি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। 

সড়ক ও জনপথ (সওজ), জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীতকরণ কাজ ধীরগতিতে চলছে ৫ বছর ধরে। ৫ আগস্টের পর কাজের গতি আরও কমে যায়। 

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সেতু ও কালভার্টগুলো পরিকল্পনা করেই তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন হয়তো শ্রমিক সংকটের কারনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে।  আমরা দ্রুততম সময়ে ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মান কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। নির্মান কাজ চললে জন দুর্ভোগ সামান্য কিছ হয় এটাই স্বাভাবিক।  আমরা এখনও সর্বোচ্চ ১৫ % ভাগ কাজ করেছি। আমরা কাজের গতি বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রনালয়ে নির্দেশনা পেয়েছি। কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে কাজ চলমান রয়েছে।  

এই সম্পর্কিত আরো