শিউলি ফুটেছে, সাদা কাশবনে সেজেছে প্রকৃতি। চলছে শুভ্র শরতের স্নিগ্ধতা। প্রকৃতির এমন মুগ্ধ নিপুণতা জানান দেয় কিছুদিন পরই শারদীয়া দুর্গাপূজা। আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, মন মাতানো কাশফুল আর শিউলি ফুলের মাতাল গন্ধে জগৎজননী মহামায়া আসছেন। উৎসব-আনন্দে মুখর হবে সকলেই। আগামী পঞ্চমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। শিশিরভেজা দূর্বাঘাসের ওপর ঝরেপড়া শিউলী ফুল কুড়ানোর সময়টাতে মাতৃবন্দনায় মিলিত হবেন মাতৃভক্ত সবাই।
ইতিমধ্যে শিল্পীদের দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় পূর্ণরূপে ফোটে ওঠেছে দৃষ্টিনন্দন অধিকাংশ প্রতিমা। সারা দেশের মতো সিলেটেও চলছে প্রতিমা গড়ার কাজ। এ কাজে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। দেবী দুর্গা আসছেন অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীকে আলোকিত করতে। ঢাক, ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনি দিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নেওয়ার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ভক্তরা।
ত্রিনয়নী দশভুজা দেবীর আসার ক্ষণে সনাতন হিন্দু ধর্মের মানুষরা মেতে উঠছেন আনন্দ-উল্লাসে। পূজোর প্রস্তুতির আমেজ বেড়ে গেছে শতগুণ। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার মহাপঞ্চমীর মধ্যে দিয়ে শারদ উৎসব শুরু হবে। মÐপে মÐপে দেবী দুর্গার বর্ণিল সাজসজ্জার শেষ মুহূর্তের কাজ পুরোদমে চলছে। প্রতিমায় রঙ-তুলির বর্ণিল আঁচড় দিয়ে চলছেন শিল্পীরা। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে শিল্পীরা অবিরাম কাজ করছেন। পূজোর যাবতীয় উপকরণ, পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, চণ্ডীপাঠ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনাসভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতী, ভজন কীর্ত্তন, আলোকসজ্জা ও ডেকোরেশনসহ নানা প্রস্তুতি এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। পূজার আয়োজনকারী প্রতিটি কমিটি ও পারিবারিক পূজা উদ্যোক্তারা এখন সর্বশেষ নান্দনিক সুন্দর আয়োজনের জন্য বিরামহীনভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শারদ উৎসব উপলক্ষে সিলেট নগরের বিপণীবিতানগুলোতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। সনাতন ধর্মের লোকজন নতুন পোশাক কিনতে এ মার্কেট ও মার্কেট ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সর্বত্রই এক সাজ সাজ রব। পূজো আসছে ভেবে সনাতন ধর্মের লোকজন আনন্দ প্লাবনে ভাসছেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর শাখা সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সিলেট মহানগর এলাকায় সার্বজনীন ১৪২টি ও পারিবারিক আয়োজনে ২০টি পূজো অনুষ্ঠিত হবে। সব মিলিয়ে সিলেট মহানগর এলাকায় সর্বমোট ১৬২টি মণ্ডপে পূজো অনুষ্ঠিত হবে।
সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সার্বজনীন পূজো হবে ৪২৭টি এবং পারিবারিক পূজো হবে ২৯টি। সিলেট জেলার সার্বজনীন ও পারিবারিক মিলিয়ে সর্বমোট ৪৫৬টি পূজো হবে। সিলেট জেলা এবং সিলেট মহানগর মিলিয়ে সর্বমোট ৬১৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত হবে।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৫৯টি ও পারিবারিক ৩টি, বালাগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৩০টি ও পারিবারিক ২টি, কানাইঘাট উপজেলায় সার্বজনীন ৩১টি, জৈন্তাপুর উপজেলায় সার্বজনীন ১৯টি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৪১টি ও পারিবারিক ১টি, বিশ্বনাথ উপজেলায় সার্বজনীন ২২টি ও পারিবারিক ২টি, গোয়াইনঘাট উপজেলায় সার্বজনীন ৪০টি, জকিগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ৮৪টি ও পারিবারিক ১টি, বিয়ানীবাজার উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৪৩টি ও পারিবারিক ১১টি, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সার্বজনীন ২৭টি এবং ওসমানীনগর উপজেলায় সার্বজনীন পূজা ৩১টি ও পারিবারিক ৯টি পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সিলেট মহানগরের কোতোয়ালী মডেল থানা এলাকায় সার্বজনীন পূজো হবে ৩০টি ও পারিবারিক ১১টি, জালালাবাদে সার্বজনীন ১৬টি ও পারিবারিক ৪টি, এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় সার্বজনীন ৪০টি ও পারিবারিক ১টি, শাহপরাণ (র.) থানা এলাকায় সার্বজনীন ২৪টি ও পারিবারিক ১টি, দক্ষিণ সুরমায় সার্বজনীন ১৪টি ও পারিবারিক ১টি এবং মোগলাবাজারে সার্বজনীন ১৮টি ও পারিবারিক ২টি পূজো অনুষ্ঠিত হবে।
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষে শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পূজো আয়োজনের মূল ৫টি দিন যথাক্রমে মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়া দশমী নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় দেবীপক্ষ। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া। এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সিলেট নগরের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। তার পাশাপাশি নগরের মণ্ডপগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানোর ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা যায়। প্রতি বছর এই পূজাতে সিলেট নগরে নতুন নতুন সাজসজ্জা দেখা চোখে পড়ে।
সম্প্রীতির নগর সিলেটে হিন্দু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই পূজাতে সকল ধর্মের মানুষকেই আনন্দ ভাগ করে নিতে দেখা যায়। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর রবিবার পবিত্র মহালয়া অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার মহাপঞ্চমী, ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার মহাষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর বুধবার মহানবমী ও ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী।
দুর্গাপূজার প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘সিলেট জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা আয়োজনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবেই হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, প্রতিটি পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা, সার্বক্ষণিক জেনারেটর রাখা এবং সরকারি সকল নির্দেশনা মেনে চলার জন্য আমরা সকল পূজোর আয়োজকদের সবিনয় অনুরোধ করেছি। আশা রাখছি, এবারও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শারদ উৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে।’
এবার দেবীর আগমন ঘটবে গজে ও গমন হবে দোলায়।
এদিকে, আগামী ৬ অক্টোবর সোমবার শ্রীশ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা ও ২০ অক্টোবর সোমবার শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।