মাদকের ছোবলে নবীগঞ্জ! চারিদিকে মাদকের ভয়াবহ থাবা। যুব সমাজ যখন ধ্বংসে পথে। তখনই রুখে দাড়িয়েছে সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে অনেক পরিবারে মাদকের জন্য বিরাজ করছে নানা অশান্তি। মাদকসেবী ছেলের হাতে মা বাবা নির্যাতনের অনেক খবর পাওয়া গেছে। কিশোর গ্যাং ছড়িয়ে পড়েছে নানা ভাবে। বিশেষ করে ইয়াবা, গাজা ও বাংলা মদ গিলে খাচ্ছে নবীগঞ্জকে। নবীগঞ্জে মাদকরোধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে।
হবিগঞ্জ মাদক নিয়ন্ত্রন অফিস বলছে, ইদানিং বিভিন্ন স্থানে অভিযানে শীর্ষ ৮জন মাদক মাদক সম্রাটসহ ২০ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব মাকদ কারবারিদের কাছে থেকে বাংলা মদ .গাজা ও ইয়াবা বেশি উদ্ধার করা হয়েছে। এদের কাছে থেকে কোটি টাকার মাদক আটক করা হয়েছে।
ইদানিং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে সহযোগিতায় নবীগঞ্জে যৌথবাহিনীর কয়েকটি অভিযানে স্বস্থি ফিরে এসেছে। এসব আটককৃত মাদক ব্যবসায়ীর আধিপত্য শুধু নবীগঞ্জ উপজেলা নয়, সারা জেলা ব্যাপী ছিল। এদেরকে গ্রেফতার করার পর থেকে নবীগঞ্জে মাদকের ভযাবহতা বন্ধ হয়েছে। এসব মাদক বিরোধী অভিযানে ব্যাপক সারা ফেলেছে যুব সমাজের মধ্যে।
হবিগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে ভারতীয় মাদক আসছে। নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকায়। এসব মাদকের চালানের সাথে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল। হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে নিভৃত পল্লী ও পাহাড়ি নির্জন ভুমিতে মাদক ব্যবসায়ীরা আস্তানা করেছে। এসব এলাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা পৌছাতে অনেক কষ্ঠ হয়। তাদের রয়েছে বিভিন্ন সোর্স ও মাসোহারা বাহিনী তাদের মাধ্যমে অভিযানের আগেই খবর পৌছে যায়।
বিশেষ করে নবীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ইদানিং মাদকের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক বিক্রি করে অনেক জিরো থেকে হিরো হয়েছেন। এসব মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের কিছুদিন পর আবারও জেল থেকে ছাড়া পেয়েই নেমে পড়েন তাদের পুরানো ব্যবসায়। নবীগঞ্জে বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় নির্জন স্থানে মাদকের চালান আসে। তারা কিশোরদের পাশাপাশি মহিলাদেরকে এসব মাদক ব্যবসায় ব্যবহার করছে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিশোর গ্যাং। এসব মাদক চোরা কারবারিদের জন্য নানা রকম চুরি ডাকাতি, ছিনতাই ও মারামারির ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর পাহাড়ি এলাকায় গত ১২ সেপ্টেম্বর “মাদককে না বলুন, জীবনে হ্যাঁ বলুন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় গজনাইপুর ফুলতলী বাজারে মাদক বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় দিনার পুর এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলে তিনটি ইউনিয়নকে মাদকের থাবা থেকে রক্ষার জন্য আহবান করা হয়। উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ফুলতলি বাজারে ৬ মৌজা যুবসমাজ কমিটির উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধন সমাবেশে আসা যুবক শাহ ওমর আলী বলেন, মাদক আজকের সমাজের জন্য এক ভয়ংকর অভিশাপ। মাদক কেবল ব্যক্তির জীবনকেই ধ্বংস করছে না, বরং পরিবার ও সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পানিউমদা এলাকার যুবক আমির হোসেন বলেন, “মাদক নির্মূল করতে হলে সবাইকে সামাজিক ও আইনিভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে আগামী প্রজন্মকে বাঁচানো যাবে না।” তারা জোর দিয়ে বলেন, যুব সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হলে প্রতিটি পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচেতন হতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐ অঞ্চলে ৪টি ইউনিয়ন গুলো হলো, দেবপাড়া, গজনাইপুর,পানিউমদা ও বাহুবলের পুটিজুর। এই চারটি ইউনিয়নে রয়েছেন কয়েকজন মাদক সম্রাট। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় মাদকের চালান ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে পানিউমদা ইউনিয়নের পানিউমদা গ্রামের আনোয়ার ও লালন নামে দুইজন মাদক সম্রাটকে গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে হবিগঞ্জ মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরে সহযোগিতায় যৌথবাহিনী আটক করে। এসময় আরও দুইজন পালিয়ে যায়। এসময় তারে কাছে থেকে বিপুল পরিমান গাজা ও ইয়াবা উদ্ধার করলেও যৌথবাহিনীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে দুই ব্যবসায়ী বাড়ির কলাসিবল গেইটে থালা দিয়ে ইয়াবার বড় চালান পুড়িয়ে পেলে। পরে যৌথবাহিনী তাদের কলাসিবল গেইট ভেঙ্গে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
ঢাকা- সিলেট মহা সড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাটে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে ইয়াবা ও গাজাঁর দুই ডিলারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলায় ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট গ্রামে অভিযান চালিয়ে গাঁজা ও মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেটের ডিলার সদরঘাট গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ এর পুত্র মো: জমির আহমদ (৩০) ও দেবপাড়া গ্রামের সামাদ মিয়ার পুত্র মো: মায়েদ মিয়া (৩৪)কে আটক করে। তাদের কাছে থেকে, ইয়াবা ও গাজার চালান আটক করে।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার জিয়াপুর গ্রাম মাদকের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত। অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি পরিবারের হাত ধরে এই গ্রামের প্রায় সবাই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এই চক্রের মূলহোতা রায়েছ আলীকে (৪২) মাদকসহ আটক করেছে সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রায়েছের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তার বাবা আরজু মিয়াও ছিলেন এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ২০১০ সালে আরজু মিয়ার মৃত্যুর পর রায়েছ এই ব্যবসার হাল ধরে এবং পুরো পরিবারকে এই অন্ধকার পথে নিয়ে আসে।
রায়েছের স্ত্রী রুপনা বেগম জানান, তিনি তার বাবার কাছ থেকে মাদক ব্যবসা শিখেছেন এবং এখন তার পরিবারের সবাই এই ব্যবসায় জড়িত। রায়েছের সৎ মা খাদিজা বেগমও স্বীকার করেছেন যে, তাদের বাড়িতে মাদক বিক্রির প্রতিযোগিতা চলে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধি রুপনা আরও অভিযোগ করেন, গ্রামের জুসনা, আহাদ, মঙ্গাই মিয়া, জিলু মিয়া, এবং জিলুর দুই চাচিসহ আরও অনেকে এই ব্যবসার সাথে জড়িত।
দপ্তর (ডিএনসি) হবিগঞ্জের তালিকায় রায়েছ ও তার পরিবারের নাম শীর্ষে রয়েছে। রায়েছের দুই ভাই কয়েছ আলী ও ফয়েজ আলীর বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসার অভিযোগ আছে। মাদক ব্যবসার জের ধরে ফয়েজ আলী কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ হয় ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চুনারুঘাটের ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে জুয়েল নামের এক ব্যক্তি এই পরিবারকে ইয়াবা ও গাঁজা সরবরাহ করে। রায়েছের পরিবার পাইকারি দরে সেই মাদক কিনে গ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে।
যৌথবাহিনী ৫ সেপ্টেম্বর রাতে নবীগঞ্জ উপজেলায় ৪নং দীঘলবাক ইউনিয়নের কামারগাও সাইনবোর্ড মুর্চি বাড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে দেশী মদ ব্যবসায়ী ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় ২ জন পালিয়ে যাই। তাদের কাছে থেকে বিপুল পরিমান বাংলা মদ উদ্ধার করে। আটকৃতরা হলো কামারগাও গ্রামের নুনু রবিদাশের পুত্র গাছা রবিদাশ (৪২) আবু রবিদাশ এর পুত্র লাল রবিদাশ (৩২) ও আবোয়া রবিদাশ এর পুত্র যোগেশ রবিদাশ (২৫)।
২০ আগস্ট বুধবার যৌথবাহিনী নবীগঞ্জ উপজেলায় আউশকান্দি ইউনিয়নের চৈতন্য জালালপুর ও গ্রাম ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভূমিহীন পাড়ায় হাসের ফার্মে অভিযান চালিয়ে কুখ্যাত ২জন গাঁজা ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তারা হলো চৈতন্য জালালপুর গ্রামের মৃত নুরুল ইসলাম এর পুত্র মোঃ বোরহান উদ্দিন (৭০) ও উলুকান্দি ভূমিহীন পাড়ার মৃত রফিক উদ্দিনের পুত্র মোশাহিদ উদ্দিন ওরপে মশন (৬৭)।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ কামরুজ্জামান, বলেন, ইদানিং অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে আমরা যৌথবাহিনীর সহযোগিতায় আটক করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সব সময় জিরো ট্রলারেন্স। বিগত তিন মাসে অনেক মাদক ব্যবসায়ী আটক করেছি ফলে এখন আর নবীগঞ্জে মাদক ছড়াছড়ি নেই। এখনও সাড়াশি অভিযান অব্যাহত আছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হবিগঞ্জ "খ" সার্কেলের পরিদর্শক ফণী ভূষন রায় জানান, অভিযানে শীর্ষ ৮জন মাদক মাদক সম্রাটসহ ২০ জন গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কাছে থেকে কোটি টাকার মাদক আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ আছে এবং খুব শীঘ্রই এই সব গ্রামে আরও অভিযান চালানো হবে । তিনি বলেন, তিনি বলেন, আমাদের লিষ্টের বাহিরেও থৌথবাহিনী অনেক মাদক কারবারিকে আটক করেছে। এখন এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে।