উপজেলা জুড়ে বেড়েছে গবাদী পশুর খাদ্যের দাম। এতে বিপাকে পড়েছে পশু খামারিরা। সম্প্রতি খড়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে ছোট বড় খামারে। যার ফলে মাংস ও দুধ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছে অনেকে।
ধান মাড়াই করার পর পাওয়া খড় এখন প্রায় ধানের সমপরিমান দামে বিক্রি হচ্ছে ৫শত টাকায়। যা ধানের দামের চেয়ে ৫শত টাকা মাত্র কম। যেখানে ১ মন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
উপজেলার রামপুর, আলীপুর, ফাজিলপুর গ্রামে আগে যেখানে ৩শত টাকা মন খড় বিক্রি হতো এখন সেই খড় ৫ শত টাকা মন বিক্রয় হচ্ছে। আলীপুর গ্রামের কৃষক জাহের আলী বলেন তিনি ৫বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। তিনি তার জমি থেকে প্রায় ৮০ মন ধান উৎপাদন হয়েছে। সেই ধান কাটার পর ৮ শত টাকা মন ধান জমি থেকে বিক্রি করেছি। জমি থেকে যে খড় পাওয়া গেছে তা তিনি ৫শত টাকা মন বিক্রয় করেছেন। ইতি মধ্যে ৩০ মন খড় বিক্রয় করেছেন। আরো দশ মন বিক্রয় করতে পারবেন। গত শুক্রবার খামারীরা তার বাড়িতে এসে খড়ের দাম দিয়ে গেছেন। তিনি জানান গত বছর এ জমির খড় বিক্রয় করেছিলেন ৩৫ হাজার টাকা।
ফাজিলপুর গ্রামের কৃষক কালামিয়া বলেন গত বছর ৩ বিঘা জমিতে ধান চাষ করে ধান বিক্রয় করেছেন ৪৫ হাজার টাকা আর খড় বিক্রয় করেছেন ২০ হাজার টাকা।
জামালগঞ্জ উপজেলা খামারী মো: নজির হোসেন বলেন প্রতি বছর বর্ষার আগেই খড় সংগ্রহ করে রাখেন। এতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়। তবে চলতি বছর গত বছরের তুলনায় খড়ের দাম বেড়ে গেছে। তিনি প্রায় দেড় লাখ টাকায় গত বছরের সমপরিমান খড় ক্রয় করেছেন।
তিনি জানান খড়ের এত দাম আগে কখনো ছিলনা। কৃষকেরা খড় বিক্রি করে খুশী হলেও খামারীরা হতাশ। গো খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক খামারীরা গরু বিক্রি করতে চেয়েও পারছেন না। গরুর দামও ব্যপক ভাবে কমে গেছে। খামারে গিয়ে দেখা যায় অনেক গরু পুষ্টি হীনতায় ভুগছে।
খামারী আব্দুস শহীদ বলেন প্রতিটি গরুকে প্রতিদিন দেড়শ টাকার খড় খাওয়াতে হয়। এত খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় গরু বিক্রয় করতে চেয়েছি। কিন্তু দাম কম হওয়ায় বিক্রি করা যাচ্ছেনা। হাওরের কাচা ঘাস না থাকায় খড়ের দাম বেড়ে গেছে। তিনি আরো বলেন গরুর খাবারের তালিকা থেকে খড় বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। খড়ের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় অনেক খামারী দানাদার খাবারের দিকে ঝুকছেন। এতে খামারের খরচ আরো বেড়ে গেছে।
খামারী আব্দুল কাদির বলেন আগে গরুকে জমিতে ঘাস খাওয়ানো যেত এখন পতিত জমি আবাদ হওয়ায় ক্রয় করা খাদ্যে খড়ের উপর নির্ভর হতে হচ্ছে।
জামালগঞ্জ উপজেলা ভেটেরিনীরি সার্জন ডা: সামসুল হক বলেন এই উপজেলায় গরুর রেজিষ্ট্রেশনকৃত খামার রয়েছে ৫০টি, আরোও রেজি: ছাড়া খামার রয়েছে ৪শত থেকে ৫শতটি। সাড়া উপজেলায় প্রায় ১লাখের বেশী গবাদী পশু রয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলাটি হাওর বেষ্টিত হওয়ায় বছরের বেশির ভাগ সময় মাটঘাট পানিতে তলিয়ে থাকে। যার কারনে গবাদী পশু বাহিরে বিচরন করতে পারেনা, এবং খাদ্য খেতে পারেনা। যার কারনে বর্ষাকালে খড় এবং দানাদার খাবারের উপর খামারীদের নির্ভর করতে হয়। যে কারনে পুষ্টির ঘাটতি কমে যায়। যে কারনে কাংখিত উৎপাদনে দুধ এবং মাংস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে খামারীরা। আমরা তাদের পরামর্শে দেই উন্নত জাতের ঘাস উৎপাদন করে (হাইলেস ওহে) উৎপাদন করে আপতকালীন সময়ে বর্ষায় খাওয়ানোর জন্য বলি। যে পরিমান গবাদী পশু আছে সে পরিমান খড় না থাকার গোখাদ্যের দামটা তুলনা মূলক বেড়ে গেছে।