সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথরে নজিরবিহীন লুটের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাহাব উদ্দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।
রোববার দুপুরে আদালতে তার ৫ দেনের রিমান্ড চাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের পরিদর্শক (কোর্ট) মো. জামশেদ আলম। তবে সাহাব উদ্দিনকে আদালতে হাজির করা হয়নি।
জানা যায়, দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৭ এ সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার নথিপত্র উপস্থাপন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। এ সময় সাহাব উদ্দিন কতোয়ালি থানার হাজতে ছিলেন। আদালতের বিচারক ধ্রুব জ্যোতি পাল তাকে জেল হাজতে পেরণের নির্দেশ দেন। পরে থানা থেকেই তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এ তথ্য জানিয়ে মো. জামশেদ আলম বলেন, রিমান্ডের শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়নি। মামলার নথি আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে, শনিবার রাতে সাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। কোম্পানীগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত খনি ও খনিজসম্পদ নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন আইনে করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর রাতেই তাকে সিলেট কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আলোচিত সাদা পাথর লুট ছাড়াও সাতটি মামলা রয়েছে।
সাহাব উদ্দিন সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। সাদা পাথর লুটকাণ্ডে তার নাম আসায় কেন্দ্র থেকে তার দলীয় পদ স্থগিত করা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক তদন্তে সাদাপাথর লুটেরার তালিকায় সাহাব উদ্দিনের নাম রয়েছে।
সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-৯ রোববার রাত ২টা ২৯ মিনিটে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে বলা হয়, গত এক বছরে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সাদাপাথর লুটের ঘটনায় দায়ীদের গ্রেপ্তারে র্যাব-৯ গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৩ সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে সাহাব উদ্দিনকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় খনি ও খনিজসম্পদ নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রসঙ্গত, সাহাব উদ্দিন একজন পাথরব্যবসায়ী। ভোলাগঞ্জ পাথর আমদানিকারক সংগঠনেরও নেতৃত্বে রয়েছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তার নেতৃত্বে একটি চক্র সক্রিয় হয় ভোলাগঞ্জে। ৫ আগস্টে ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক পাশের রিসোর্ট ও রোপওয়ে বাঙ্কারে হামলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, ভোলাগঞ্জ শুল্কস্টেশন এলাকার সরকারি সরকারি জমি দখল, পাথরমহালের জমি ভাড়া দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
৫ আগস্টের বছরপূর্তিতে সাদা পাথর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাজি সাহাব উদ্দিনের লোকজনেরা তার নামে রীতিমতো দখলযজ্ঞ করে পাথর লুটপাট শুরু করে।
বিএনপি সূত্র জানায়, ১১ আগস্ট রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে সাহাব উদ্দিনের সব পদ স্থগিত করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিএনপির নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুষ্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের সকল দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।’