শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

জামালগঞ্জের হাওরে হাস পালন করে ভাগ্য বদল খামারিদের

জামালগঞ্জ উপজেলার হাওরাঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হাস পালন। নানা প্রজাতির হাস পালন করে ভাগ্য বদল করেছে অনেক খামারিরা। বিশাল হাওরে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বা সুবিধা মতো স্থানে হাস পালনে ঝুঁকে পড়েছেন হাওরের মানুষ। মাঠে-ঘাটে দেখা যায় হাসের ঝাক। হাওরে মাঠে-ঘাটে, খাল, বিল, ডুবা বা ফসলের ক্ষেতে হাস চড়ানো হয়। সেখাই দলবেধে ছুটে চলে হাস। খাবার সংগ্রহ করে আবার দিন শেষে দলবেধে ফিরে আসে খামারে। খামারিরা হাস পালন করে আয় করে তাদের পরিবার সহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। অল্প পরিশ্রমে স্বল্প পুজিতে লাভবান হওয়ায় হাস পালনে ঝুকছে অনেকে। হাওরের খামারি জয়নাল আবেদীন ও সামছুল হক জানান, হাওরে হাসের খাবার ও হাস চড়াতে কোন ঝামেলা নেই। 

শুধু একটি ছোট নৌকা হাসের পালের সাথে একজন লোক থাকলে চলে। হাস পালনে লাভজনক হওয়ায় দারিদ্রতা দূর করে অনেকে ঘুরে দাড়িয়েছেন। উপজেলার পাকনা, হালি ও মিনি পাকনা, বাশকার হাওরে দেখা যায় হাস পালনের ধুম। অধিকাংশ বাড়িতেই রয়েছে হাসের খামার। হাস থেকে উৎপাদিত ডিম বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে। খামারি আব্দুস সামাদ জানান, হাস পালনে যেমন সহজ তেমনি রয়েছে ঝুঁকি। একবার মরক দেখা দিলে শত শত হাস মারা যায়। তবে যথাযথ পরিচর্যা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন খামার এবং হাসের প্রতি বাড়তি নজরদারি রাখলে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হাস পালনে হাতে গুনা কয়েকজনের লোকসান হলেও বেশির ভাগ খামারি লাভবান হচ্ছেন। এতে করে একজনের পাশাপাশি অন্যজন হাস পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন।

সারা বছরেই হাস পালন করা যায়। তবে শীতের সময় হাস এবং হাসের ডিমের চাহিদা বেশি থাকায় হাট বাজারে হাসের এবং ডিম জমজমাট কেনা বেচা হয়ে থাকে। তারা আরো জানান, বছরের ৬ মাস হাস বিল ও ডুবায় সামুক-ঝিনুক সহ প্রাকৃতিক খাবার খায়। বর্ষায় হাসের খাবারের জন্য অন্যকোন বাড়তি খরচ লাগে না। হাওরে খাবারে সংস্থান থাকায় খাবারের প্রায় অর্ধেক খরচ কমে যায়। হেমন্তে হাওরে বিলের মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে বিলে হাসের খাবার খাওয়াতে হয়। কাশিপুর গ্রামের হাস খামারি মহারাজ মিয়া বলেন, আমি ঋণের জ্বালায় ছেলে সন্তান নিয়ে ঢাকা কামরাঙ্গীরচড় চলে গিয়ে ছিলাম। ঢাকায় ২ বছর চাকুরি করে এক বন্ধুর পরামর্শে এলাকায় এসে হাসের খামার শুরু করি। প্রথম ২ শত হাস দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে আমার খামারে দেড় হাজার হাস রয়েছে। সব ঋণ শেষ করে এখন আর আমাকে পেছনে থাকাতে হয় না। হাস পালন করে এখন আমি স্বাবলম্বী। বর্তমানে আমার খামারে হাস ও অন্যান্য সামগ্রী সহ পুজি আছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। হাসের খামার দিয়ে ঋণ সুদ করে ভাগ্য বদল হয়েছে আমার। আগামীতে আরো ৫ শত হাস কিনবো।

উপজেলা ভ্যাটেরিনারি সার্জন ডাক্তার সামছুল হক বলেন, জামালগঞ্জ উপজেলা হাওর বেষ্টিত হওয়ায় হাস পালনের মাধ্যমে ডিম উৎপাদন একটি লাভজনক ফার্মিং তৈরি হয়েছে। বর্ষায় হাস খামারিদের বেশির ভাগ খাদ্য হাওর থেকে সংগ্রহ করতে পারে। যার কারণে হাস পালন করে শত শত বেকারে কর্মসংস্থান হয়েছে। নারীরাও হাস পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভ্যাটেরিনারি হাসপাতালে টিকা কর্মসূচি সম্পর্কে উঠান বৈঠক করে খামারিসহ নারীদের উদ্ভোদ্দ করা হচ্ছে। যার কারণে খামারিরা সচেতন এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাস পালন করে লাভবান হচ্ছে। এই উপজেলায় ৪০ টির অধিক রেজিষ্ট্রেশনকৃত খামার রয়েছে। এছাড়াও অন্য খামারসহ ৪ থেকে ৫ লক্ষ হাস পালন করা হচ্ছে।

এই সম্পর্কিত আরো