ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর হল সংসদ নির্বাচনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন নবীগঞ্জের কৃতি সন্তান তাসনিম আক্তার আলিফ নাবিলা। তার গ্রামের বাড়ি নবীগঞ্জে বইছে আনন্দের জোয়ার। গ্রামের মধ্যে সবার বাড়ি বাড়ি মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। সারা হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে সবার ফেসবুকে ভাইরাল নাবিলাকে শুভ কামনা ও অভিনন্দন।
বিজয়ী নাবিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং উপজেলার ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের প্রয়াত আক্তার মিয়ার কন্যা।
গত সোমবার দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার ভোরে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এতে নাবিলা ৫১৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দিলরুবা পলি ও সানজিদা সাবরিন পান ৩৪৮ ভোট। ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট প্রদান করেন, আর প্রার্থীদের সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
বিজয়ী হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তাসনিম আক্তার আলিফ নাবিলা বলেন, “এই বিজয় কেবল আমার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়। এটি নবীগঞ্জ এবং হবিগঞ্জ জেলার মানুষের ভালোবাসা ও প্রার্থনার ফসল। আমি সবসময় চেষ্টা করব শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতে। শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়ন, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।”
নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই নাবিলা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও তিনি শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেন। তাঁর সততা, আন্তরিকতা এবং সরল জীবনযাপন শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। ফলে ফলাফল ঘোষণার পর হল প্রাঙ্গণে সমর্থক ও শুভাকাঙ্খীদের উল্লাসে ভরে যায়।
এদিকে, নাবিলার বিজয়ে নবীগঞ্জ উপজেলায়ও আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনেরা এ সাফল্যে গর্বিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দ এবং তরুণ-তরুণীরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অনেকেই মন্তব্য করেছেন- “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় নবীগঞ্জের কন্যার এই বিজয় আমাদের জন্য গৌরবের।”
নবীগঞ্জের পানিউমদা এলাকার শিক্ষার্থী ও নাবিলার ভাতিজা জাবেদ তালুকদার বলেন, নাবিলার এ অর্জন তাঁদের অনুপ্রাণিত করেছে। এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, নাবিলা ফুফু সত্যিই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবেন। তাঁর মতো মেধাবী ও সাহসী নেতৃত্ব আমাদের জন্য আশার প্রতীক।”
নাবিলার শিক্ষা জীবনের শুরু নবীগঞ্জ থেকেই। সেখান থেকে ঢাকায় গিয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় সাফল্যের সাথে এগিয়ে যান। তাঁর সহপাঠীরা জানান, তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী, পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রমেও সক্রিয়। এর আগে হলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই বিজয় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। শিক্ষার্থীরা এখন যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নিতে সক্ষম হচ্ছে।
নাবিলার চাচাতো ভাই সাংবাদিক সেলিম তালুকদার বলেন, এ ফলাফল ঘোষণার পর নাবিলার গ্রামের বাড়ি বড়গাঁওয়েও আনন্দের আবহ বিরাজ করছে। আমাদের এলাকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আমরা পরিবারে সবাই তাকে গর্ব করছি। এলাকাবাসী তাকে নিয়ে অনেক উচ্চাস প্রকাশ করছেন।
তাঁর মা রহিমা আক্তার লুবনা বলেন, আমার মেয়ের এ বিজয় তাঁদের জন্য গর্বের, আর আমার স্বামী প্রয়াত আক্তার মিয়া জীবিত থাকলে নিশ্চয়ই অত্যন্ত আনন্দিত হতেন। তার বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে একদিন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের নেতা হবে। ভর্তি করে সেই কথা আমাকে বলেছিলেন, আজকে আমাদের সেই স্বপ্ন পুরন হয়েছে। কিন্তু তাঁর বাবা নেই, এক বছর আগে মারা গেছেন। তিনি আরও বলেন নাবিলার এ অর্জনকে শুধু পরিবারে অর্জন নয়, নবীগঞ্জ উপজেলা তথা হবিগঞ্জ জেলার জন্য বড় ধরনের গৌরব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নবীগঞ্জের কন্যা নেতৃত্বে আসা নিঃসন্দেহে পুরো জেলার জন্য সম্মানের।” তিনি প্রত্যাশা করেন,তাসনিম আক্তার আলিফ নাবিলা তাঁর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে সহপাঠীদের কল্যাণে কাজ করবেন এবং তাঁদের আস্থা অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন।