শাল্লা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সন্দিপন মজুমদার ৭টি জলাশয়ে পোনা মাছ অবমুক্তকরণে ঘাপলার আশ্রয় নিয়েছেন। অভিযোগ উটেছে মৎস্য কর্মকর্তার ব্যক্তিগত পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে মাছ সরবরাহ করা হয়েছে এবং ভূয়া পয়েন্ট তৈরি করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে যেসব পয়েন্টে পোনামাছ অবমুক্তকরণের কথা রয়েছে অধিকাংশ পয়েন্টই পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়নি। তিনি তার পছন্দের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পোনা মাছ সরবরাহের কার্যাদেশ দিয়েছেন। তাছাড়া কোনদিন, কখন, কোথায়? পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়েছে এসবের কিছুই জানেন না স্থানীয়রা।
তাছাড়া শিডিউলে জামায়াত ইসলামের আমীরের বাড়ির মসজিদের পুকুরে মাছ অবমুক্তের জন্য যে পয়েন্টি দেখানো হয়েছে, সেখানকার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে উল্লেখিত পয়েন্টে কোন পুকুরই নেই। জামায়াতে ইসলামের শাল্লা শাখার আমীর মাওলানা মোঃ নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, আমার ওখানে মসজিদের কোন পুকুর নেই। তিনি বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা হঠাৎ তাকে ফোন দিয়ে বলেন 'আপনি আমার প্রিয় মানুষ' আপনার জন্য কিছু মাছ পাঠাচ্ছি। নূরে আলম সিদ্দিকীর অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মৎস্য কর্মকর্তা সন্ধার দিকে কিছু মরা মাছ তার ব্যক্তিগত পুকুরে পাঠিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে ভূয়া পয়েন্ট দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। জানা যায়, ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে কার্প মিক্সি ৩৬৪ কেজি ও ২৫.৭১৪ কেজি দেশীয় মাছ অবমুক্তকরণের জন্য ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
বরাদ্দে নির্বাচিত জলাশয়ে ১০-১৫ সেমি আকারের ৩৬৪ কেজি রুই, কাতলা, মৃগেল ও দেশীয় প্রজাতির মাছ সহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ সরবরাহের জন্য সিদ্ধান্ত হলেও এসবের কোনকিছুই অনুসরণ করা হয়নি। এরপর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সন্দিপন মজুমদারের একান্ত গোপনে মাছ সরবরাহের জন্য তার পছন্দের ঠিকাদারকে বাচাই করেছেন। এবং পোনা মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, নমুনায়ন ও যথাযথভাবে ওজন পরীক্ষা না করেই নামমাত্র কয়েকটি জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করা হয়। ওদিকে শিডিউলে উল্লেখিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ডাকবাংলোর যে পুকুরটি পোনা অবমুক্ত করণের জন্য পয়েন্ট হিসেবে দেখানো হয়েছে এই পুকুরটি পোনামাছ অবমুক্তকরণের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী। কারন এ পুকুরে রয়েছে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারের অধিকাংশ ময়লা বৃষ্টির পানিতে মিশে ওই পুকুরে গিয়ে পড়ে।
মাছ অবমুক্তকরণে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মাছগুলো আকারে ছোট এবং পোনা মাছের ওজন ঠিক ছিল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুকুরের পাশের স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ছোট ছোট পোনা মাছ অবমুক্ত করার পরই পুকুরের থাকা অন্যান্য ক্ষতিকর জলজ প্রাণীগুলো পোনা খেয়ে ফেলতে পারে। যে কারণে এই পুকুর থেকে পরবর্তীতে আর কোনো মাছ পাওয়া যাবে না। এটা যেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার শুভংকরের ফাঁকি।
সরকারি পোনামাছ অবমুক্ত করণে স্পষ্ট অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করে, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তারেক হাসান মুন্না বলেন, এতো বড় একটা গণঅভ্যুত্থানের পরেও যারা অনিয়ম ও দুর্নীতি জড়িত রয়েছে, তারা কখনো এদেশের ভাল চায় না। নতুন বাংলাদেশে এসব দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। তিনি বলেন, মৎস্য কর্মকর্তা দিরাই বসে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে না জানিয়ে সম্পূর্ণ গোপনীয়ভাবে পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
এবিষয়ে কোন ধরনের তথ্য না দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মৎস্য কর্মকর্তা সন্দিপন মজুমদার (অ:দা) হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে বলেন, আপনি ইউএনও শাল্লা বা ঠিকাদার একরামুলের কাছ থেকে তথ্য নিতে পারেন। ওনাদের কাছেই আছে। তিনি বলেন, আর ভুলে যাইয়েন না, আমি কিন্তু শাল্লার অতিরিক্ত দায়িত্বের অফিসার মূল দায়িত্বে না। আমি সরকারের কাছ থেকে অন্যান্য অফিসারদের মতো অতিরিক্ত দায়িত্বভারের ভাতাও পাই না!!
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাসও তথ্য দিতে গড়িমসি করেন। তিনি বলেন, তথ্য নিতে হলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। কারো ব্যক্তিগত পুকুরে মাছ অবমুক্ত করা হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অধিকাংশ পয়েন্টে পোনামাছ অবমুক্ত করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এই প্রতিবেদকে নিয়ে ট্রল করা শুরু করেন। কতজন ঠিকাদার মাছ সরবরাহে আগ্রহ দেখিয়েছেন জানতে চাইলে এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি তিনি। একপর্যায়ে তিনি বলেন, কমপক্ষে তিনজন হতে পারে।