তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি আর নদীনালা–খালবিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় নিচে নেমে গেছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাবের ফলে একের পর এক অকেজো হয়ে পড়ছে হস্তচালিত নলকূপ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষ।
সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলার ১২ উপজেলায় সরকারি পর্যায়ে সচল আছে ২৩ হাজার ৫৬৫টি হস্তচালিত নলকূপ। বেসরকারি পর্যায়ে রয়েছে লক্ষাধিক। তবে শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রায় ১০ হাজার নলকূপ বন্ধ হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলায়, যেখানে লক্ষাধিক মানুষ বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করছেন।
এ পরিস্থিতিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের উদ্যোগে নেওয়া হয় নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প। ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শান্তিগঞ্জে ৩ হাজার ৩০০ এবং জগন্নাথপুরে ২ হাজার ৫০০ হ্যান্ড টিউবওয়েল বসানো হয়। কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার দুই বছরের মাথায় সেগুলোর বেশির ভাগই অকেজো হয়ে গেছে। যেগুলো সচল আছে, সেগুলোতে ঝিরিঝিরিয়ে পানি উঠছে।
শান্তিগঞ্জের শিমুলবাক গ্রামের গৃহবধূ ফুল বেগম প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার হেঁটে বিশুদ্ধ পানি আনেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক দূর থেকে পানি আনতে হয়। এতে অনেক সময় চলে যায়। নদীর পানি ছেলেমেয়েদের খাওয়ালে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই কষ্ট হলেও দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়।’
শুধু শান্তিগঞ্জ ও জগন্নাথপুর নয়, সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজারসহ জেলার সব উপজেলাতেই একই সমস্যা। বিশুদ্ধ পানির জন্য সাধারণ মানুষ ভরসা করছেন গভীর নলকূপের ওপর। কিন্তু স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সংকট নিরসনে জেলায় ৫ হাজার সাবমার্সেবল গভীর নলকূপ বসানোর কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হলে বিশুদ্ধ পানির সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।