বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

মৌলভীবাজারে সাজায়ও থামছে না বালু লুট

মৌলভীবাজারে প্রশাসনের একের পর এক অভিযান ও জেল-জরিমানার পরও বন্ধ হচ্ছে না ছড়া থেকে নির্বিচারে সিলিকা ও সাধারণ বালু লুট। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অবৈধভাবে চলছে এই বালু উত্তোলন। এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে গত ১১ মাসে জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৫০টি অভিযান চালায় প্রশাসন। জব্দ করা হয় অন্তত ৪ কোটি ঘনফুট বালু; যা ১৭ কোটির বেশি টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়। সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বালু লুটের প্রভাবে পরিবেশের ক্ষতিসহ ছড়ার পাড়ে ভাঙন, বালু পরিবহনে রাস্তায় ভাঙনসহ নানাভাবে দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ছড়ায় বালু তোলার পথ বন্ধ করে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে, তবু থামছে না বালু লুট।

জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে বেশি সিলিকা বালু রয়েছে শ্রীমঙ্গল উপজেলায়। এই উপজেলায় গত ১১ মাসে সিলিকাসহ সাধারণ বালু লুটের ঘটনায় ১৬টি মামলা করা হয়। এ ছাড়া সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৭১ হাজার ২৮৫ ঘনফুট বালু জব্দ করে তিনবার নিলামে বিক্রি করা হয়। কমলগঞ্জ উপজেলায় বালু লুটের ঘটনায় গত ১১ মাসে ২১টি অভিযান চালানো হয়। এ সময় অপরাধীদের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। কুলাউড়া উপজেলায় অভিযানে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ১৯২ ঘনফুট বালু জব্দ করা হয়। গত রোববার নিলামে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬০ হাজার টাকায় এসব বালু বিক্রি করে উপজেলা প্রশাসন।


শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় উপজেলার শান্তিবাগ এলাকায় ভুড়ভুরিয়া ছড়া থেকে ১০০ ঘনফুট সিলিকা বালু জব্দ করা হয়। ২৭ আগস্ট গোপলা ছড়ায় সেতুর পাশ থেকে বালু তোলা বন্ধ করে প্রশাসন। এ ছাড়া ২৬ আগস্ট রঘুনাথপুর কালীবাড়ি এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫০০ ফুট সিলিকা বালু জব্দ করা হয়। একই দিনে সিন্দুরখান ইউনিয়নের সিক্কা ও ডোবাগাও ‍এলাকায় আরও দুই অবৈধ ঘাটে এবং ১৯ আগস্ট সিন্দুরখান, আশিদ্রোন ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ও ৩১ আগস্ট কমলগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ধলাই নদের চৈত্রঘাট বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু তোলায় দুজনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গত ২১ আগস্টে মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার মনু নদের চাঁদনীঘাটে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলায় সাতজনকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ জেলায় সিলিকা বালুর কোয়ারির তালিকায় রয়েছে ৫২টি ছড়া। এর মধ্যে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর অনুমোদিত ৩৩টি সিলিকা বালু কোয়ারি রয়েছে। শুধু শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৩১টি ছড়া রয়েছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলায় দুটি ছড়াসহ বিভিন্ন নদীর ২৬টি সাধারণ বলুমহাল রয়েছে। এর মধ্যে ধলাই ও মনু নদের সব কটি মহাল ইজারার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

শ্রীমঙ্গলের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মহিবুল্লাহ আকন বলেন, ‘আমি যোগদান করেছি এক সপ্তাহ হয়েছে। এর মধ্যে তিন দিনই অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে অভিযানে বের হতে হয়েছে।’

শ্রীমঙ্গলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘ইজারাবিহীন ঘাট থেকে বালু তোলার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে। যাঁরাই এই অবৈধ কাজের সঙ্গে জড়াবেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

কমলগঞ্জের ইউএনও মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে বালু তুলছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘যাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

এই সম্পর্কিত আরো