সিলেটে যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্সের পাথর উদ্ধারের ষষ্ঠ দিনের অভিযানেও টিনের বেড়া ও বালুচাপা দিয়ে লুকানো অবস্থায় পাথর মিলেছে। ছয় দিনের অভিযানে (সোমবার পর্যন্ত) সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে চুরি হওয়া প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে প্রতিস্থাপন করার কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়া আরও প্রায় চার লাখ ঘনফুট পাথর বিভিন্ন স্থানে জব্দ অবস্থায় রয়েছে।
তবে সাদাপাথর থেকে সাম্পতিক সময়ে প্রায় ২ কোটি ঘনফুট পাথরলেুট করা হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
এর মধ্যে সোমবার অভিযানে প্রায় ৩১ হাজার ৭০০ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে অভিযান চালিয়ে এসব পাথর উদ্ধার করা হয়। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছে।
সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে গত বুধবার রাত থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযানে নামে টাস্কফোর্স ও যৌথ বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়।
অভিযান–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেট সদর উপজেলার টিলাপাড়া এলাকায় আজ দুপুরে অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ৫০০ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় একজনকে আটক করা হয়। পরে বিকেলে রঙ্গিটিলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ২০০ ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ জানান, অভিযানে উদ্ধার হওয়া পাথরগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা বাসিন্দাদের জিম্মায় দেওয়া হচ্ছে। পরে পাথরগুলো ভোলাগঞ্জে নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হবে।
সোমবার কোম্পানীগঞ্জের কলাবাড়ি ও শিমুলতলা এলাকায় সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর হোসাইন সজীবের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে কলাবাড়ি এলাকায় একটি পেয়ারাবাগানে বালুর স্তূপের নিচে সাদাপাথর পাওয়া যায়। এই অভিযানে শিমুলতলা এলাকায় একটি বাড়ির সামনে টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া অবস্থায়ও পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া পাথরের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার ঘনফুট। তানভীর হোসাইন সজীব বলেন, উদ্ধার হওয়া এসব পাথর ভোলাগঞ্জে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জে আজ যৌথ বাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে তদারকির কাজ করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইফ্রাহিম ইকবাল চৌধুরী। তিনি বলেন, তল্লাশিচৌকিতে পাথরবোঝাই ট্রাকগুলোয় তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, আমদানি করা পাথরের সঙ্গে সাদাপাথর মিশ্রণ করে সিলেটের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তল্লাশিচৌকিতে সেগুলো জব্দ করা না হলেও ট্রাকগুলো যেতে দেওয়া হচ্ছে না, ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে গোয়াইনঘাটের জুমপার এলাকায় সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী। তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া পাথরগুলো জাফলং জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার বলেন, ছয় দিন ধরে অভিযানে উদ্ধার হওয়া পাথরগুলোর মধ্যে সোমবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ ঘনফুট পাথর সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া জব্দ অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে প্রায় চার লাখ ঘনফুট পাথর রয়েছে, সেগুলোও সাদাপাথরে প্রতিস্থাপন করা হবে।
সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর ও বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) আছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরও ১০টি জায়গায় পাথর আছে। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে এসব পাথর আসে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।
সিলেটের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সব সময় পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। বিগত পাঁচ বছরে তাঁরা নানাভাবে কোয়ারি ইজারা আবার চালুর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। এ অবস্থায় রাতের বেলা আড়ালে মানুষ অবৈধভাবে পাথর তুলতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টানা এক বছর দেদার পাথর লুটপাট চলে।