মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

১৪৪ ধারা জারি

৫দিনের উত্তেজনার পর নবীগঞ্জে ভয়াবহ সংঘর্ষে, আহত কয়েক শতাধিক

নবীগঞ্জ শহরে সম্প্রতি দফায় দফায় একাধিক সংঘর্ষের জের ধরে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী হাসপাতাল ও যানবাহনে ভাঙচুর- লুটপাট এবং ট্রাক, বাস ,সিএনজি, ভাংচুর এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছিল বিগত ৪দিন যাবৎ। ভাঙচুর ও লুটপাটে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে। বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে । বিকাল ৪ ঘটিকার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন নবীগঞ্জ শহরের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু ১৪৪ ধারা জারির পরেও ৩ ঘন্টা সংঘর্ষ চলে। পরে যৌথবাহিনীর সদস্যরা মাইকিং করে সকল লোকজন এবং মিডিয়া কর্মীদের সরে যাওয়ার জন্য। যৌথবাহিনী ব্যাপক লাটিচার্জ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থেমে থেমে চোরাগুপ্তা হামলা চলছিল। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এসময় বিদ্যূতের টান্সমিটার পুড়ে যায়, নবীগঞ্জ শহরে বিদ্যূৎ বিহীন রয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা গন অধিকার পরিষদের সহ সভাপতি ও যুবলীগের সাবেক নেতা আশাইদ আলী আশা ও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও নবীগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্য সেলিম তালুকদার এর মধ্যে রেসারেসির জের ধরে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম তালুকদার এর শালা খসরু মিয়া তালুকদার তার সাথীদের সাথে আশাইদ আলী আশার কথা কাটাকাটি ও মারপিট হয়। এর জের ধরে গত ৪দিন ধরে উত্তেজনা ও হামলা পল্টা হামলা চলে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়।

গতকাল সোমবার সকালে আনমনু ও পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পুর্ব ঘোষনা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পুর্ব প্রস্তুতিমুলক মিটিং করেন। এর পরে বিকাল ৩ ঘটিকার পূর্ব ঘোষনা দিয়ে উভয় গ্রামের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে শহরের মারামারিটি সাম্প্রদায়িক ধাঙ্গায় রুপ নেয়। নবীগঞ্জ শহরে আশপাশের তিন চারটি মৎস্যজীবি গ্রামের লোকজন এক পক্ষে, পূর্ব তিমির পুর, পশ্চিম তিমিরপুর ও চরগাও গ্রামের নারী পুরুষ দুটি পক্ষ হয়ে কয়েক হাজার মানুষ সংঘর্ষে জড়ান। এতে সংঘর্ষ চলাকালে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে উভয় পক্ষে কয়েক শতাধিক নারী পুরুষ আহত হয়েছেন। কেউ নিহত হয়েছেন কিনা জানা যায়নি। শহরের মধ্যে দুই শতাধিক দোকান পাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হয়। বিশেষ করে কয়েকটি মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের মালিকাধীন ইউনাইডেট হসপিটাল ভাংচুর , মাছ বাজার ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। এছাড়া শহরের পশ্চিম বাজারে প্রতিটি মার্কেট ও দোকানপাট ভাংচুর লুটপাট হয়েছে। এক অরাজকতা শহরের মধ্যে চলে প্রায় ৪/৫ ঘন্টা ব্যাপী চলছে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যৌথবাহিনী সংঘর্ষ থামানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । 

এদিকে শহরজুড়ে এক ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। গুজব ছড়িয়ে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে উসকে দিয়ে ধাঙ্গা সৃষ্টি করে একটি বিশেষ মহল।কারন আনমনু গ্রাম হচ্ছে মৎস্যজীবি আর তিমিরপুর গ্রাম হচ্ছে সাধারন বাঙ্গালী।

গত শনিবার রাতের সংঘাতের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান শহরের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করলেও পরদিন শনিবার সকাল থেকে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আনমুনু গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নবীগঞ্জ শহর ও আনমনু পয়েন্টে জড়ো হতে থাকলে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এর জের ধরে শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। রবিবার সকালে ও রাতে সংঘর্ষ ও চোরাগুপ্তা হামলা হয়। এর জের ধরে সোমবার সকালে উভয় গ্রামের লোকজন পুর্ভ প্রস্তুতি সভা করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। 

শনিবার (৫ জুলাই) সকালে নবীগঞ্জ শহরে উপজেলার ৬নং কুর্শি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার এক নিরীহ গাড়ি চালকের ওপর আনমনু গ্রামের লোকজন নৃশংস হামলা চালায়। চালককে আটকে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি তার গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এমনকি তার গলা বরাবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করা হয়। ভাগ্যক্রমে চালক সরে গিয়ে প্রাণে বেঁচে যান। এসময় গাড়ির চাবি, গাড়ির কাগজ এবং গাড়িতে থাকা দুটি ফোন ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে জানান শ্রমিকরা। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শহরের সংঘর্ষের সময় সুযোগ নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। শামীম আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাজারে যখন আতঙ্কে নিরবতা নেমে আসে এবং কেউ থাকে না, তখন এই চক্রটি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ঢুকে হামলা ও লুটপাট চালায়।

গত ৪ দিনে বাজারের অন্তত ৫০টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটের ঘটনা ঘটে। ব্যাটারিচালিত মিশুক ভাঙচুর করে ব্যাটারি চুরি করা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি মিশুক ভাংচুর ও মোটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন। 

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, নবীগঞ্জ শহরের মারামারি ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা বিকাল ৪ টা থেকে ৮ জুলাই রাত ১২ টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছি। পরিস্থিতি বুঝে ১৪৪ ধারার সময় বর্ধিত করা হতে পারে। তিনি বলেন পরিস্থিতি এখন প্রশাসনে নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।

নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো. কামরুজ্জামান জানান, “আমরা বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছিলাম।এখন সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে পুরো বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।” শহরে শান্তি শৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ, সেমনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

এই সম্পর্কিত আরো