বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

ডিসির প্রতি কেন এতো ক্ষোভ আরিফের

হঠাৎ করেই সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়লেন  সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।

বুধবার (২ জুলাই) সকালে নগরের কোর্ট পয়েন্টে সমাবেশ করে ডিসি মুরাদকে প্রশাসনিকভাবে ‘অদক্ষ ও ব্যর্থ’ আখ্যা দিয়ে করে তার প্রত্যাহার দাবি করেন আরিফ।

ওই সমাবেশে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, স্টোন ক্রাশার মিলের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধসহ আরিফ বিভিন্ন দাবি জানালেও  নিজের বক্তৃতার বেশিরভাগ অংশজুড়ে আরিফ মূলত জেলা প্রশাসকের প্রতিইিবিষেদগার করেন।

এরপর থেকেই নগরজুড়ে প্রশ্ন ওঠেছে জেলা প্রশাসকের প্রতি কেন এতো ক্ষোভ আরিফের।

সকালে কোর্ট পয়েন্টের সমাবেশে জেলা প্রশাসকের উদ্দেশ্যে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, জেলা প্রশাসক, আপনি যদি মনে করেন, আমাদের মধ্যে বিভাজন করার পায়তারা যেটা করছেন, দুএকজন নেতাকে বশ করে আপনি মনে করবেন না পার পেয়ে যাবেন। আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যারা যাবে তারা জেলা প্রশাসকের দালাল হিসেবে চিহ্নিত হবে।

তিনি বলেন, এই জেলা প্রশাসক বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে বিব্রত করার জন্য কাজ করছেন। জনগনকে সরকারের বিরুদ্ধে দাড় করাচ্ছেন। আর না হলে এসব কাজ (স্টোন ক্রাশার মিল ও কিছু স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান) করার আগে প্রত্যকটা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বসতেন। তাদের পরামর্শ নিতেন।

আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই যে জালালাবাদ অন্ধ কল্যান হাসপাতালের মার্কেট গুড়িয়ে দেওয়া হলো এটির অনুমোদন তো উনার মতোই একজন জেলা প্রশাসক দিয়েছিলেন। অথচ এই জেলা প্রশাসক কারো সঙ্গে কথা না বলেই মার্কেট গুড়িয়ে দিচ্ছেন।

ডিসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনি বলেন, আপনি আমাদের লোক। কিসের আপনি আমাদের লোক। আপনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আপনি চোখ রাঙিয়ে জনগনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন না। আপনাকে সাবধান করে বলে দিতে চাই, সিলেটের মানুষকে অপমান করবেন না।  

গত ১৭ বছর সিলেটে লুটপাট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত ১৭ বছর অবৈধ চোরাচালান, পাথর তোলা-বালু তোলা ছিলো। তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক জবাব দিতে হবে। ১৭ বছর যারা লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন তার সঠিক উত্তর দিতে হবে। ...আজকে শুধু বলে গেলাম। ৫ তারিখের পরে কিন্তু তুমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আর কোন আলোচনা হবে না। এই জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা না হলে ৫ তারিখের পরে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।

‘জেলা প্রশাসক নাকি বলে, আরিফুল হক এখন আর জপ্রিতিনিধি নয়’ এমনটি উল্লেখ করে সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘সিলেটের মানুষ দশ বছর আমাকে জনপ্রতিনিধি করেছেন। তুমি জেলা প্রশাসক, কোথাকার কি, তোমার মতো কয়েকজন জেলা প্রশাসক তো আমার আন্ডারে কাজ করেছেন। কথাবার্তা সাবধান করে বলবা। জনপ্রতিনিধি কে আছেন কে নাই, এটা তোমার নির্ধারণ করার কথা না।’

ডিসি পাথর–সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে আজ (বুধবার) এক সভা ডাকেন জানিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন,  তবে পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী কিংবা পরিবহনশ্রমিক নেতা, কেউ তার বৈঠকে যাননি। নির্যাতন–নিষ্পেষণ করার পর ডিসি বলছেন, এখন এসো। তাই সবাই ঘৃণাভরে এ বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এদিকে স্থানীয় বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ‘কিছু বিষয় নিয়ে’ আরিফুল হক চৌধুরীর মনোমালিন্য ও দূরত্ব চলছে। এখন ইজারা বন্ধ থাকা সিলেটের পাথরকোয়ারি চালুর দাবিতে পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং মেজরটিলা এলাকায় উচ্ছেদের শিকার ব্যবসায়ীদের ক্ষুব্ধতার সুযোগে আরিফুল হক ‘জেলা প্রশাসক হটাও’ কর্মসূচিতে নেমেছেন।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী  বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর জেলা প্রশাসক হটাও কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা একান্তই তাঁর নিজস্ব কর্মসূচি। তবে সিলেটে একটা অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের পাথরকোয়ারিগুলো ইজারা দিয়ে এবং পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ আবার চালুর দাবিতে সম্প্রতি পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা কর্মবিরতি, পরিবহন বন্ধ রাখাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে রাজনৈতিক নেতা, পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে বৈঠকে বসেন ডিসি। সেই বৈঠকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলীসহ পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন।

তবে ওই বৈঠকে আরিফুল হক চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে জানা গেছে।

এদিকে, আরিফুল হক চৌধুরীর অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণকাজের অংশ হিসেবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) তাদের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে। সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের কাজের অংশ হিসেবেই এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন হঠাৎ করে আমার অপসারণ চেয়ে এমন কর্মসূচি পালন করার বিষয়টি একেবারেই দুঃখজনক।’

এদিকে,  কোর্ট পয়েন্টের সমাবেশ থেকে আরিফুল হক এ কর্মসূচিকে শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের কর্মসূচি বলে ঘোষণা দেন। কর্মসূচিতে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ–সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পাশাপাশি পরিবহন শ্রমিকনেতারাও যোগ দেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় আরিফুল কোর্ট পয়েন্ট এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার একাংশে প্রায় দেড় শ মানুষ নিয়ে অবস্থান নেন। তবে কর্মসূচি শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। এ সময় মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন আহমদ মাসুকের সঞ্চালনায় সমাবেশ শুরু হয়। বেলা ১টার দিকে সমাবেশ শেষ হয়।

সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্রঋণ–বিষয়ক সহসম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম, জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবদুর রহিম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসম্পাদক মো. আবদুস সালাম, জেলা শ্রমিক দলের সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ থেকে পরিবহনমালিক ও শ্রমিকনেতারা আগামী শুক্রবারের মধ্যে সিলেটের ডিসিকে অপসারণ না করলে শনিবার থেকে সিলেটের সব সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন।

সমাবেশ চলাকালে আরিফুল হক বলেন, সম্প্রতি কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই জেলার বিভিন্ন স্থানে পাথর ভাঙার যন্ত্রের (ক্রাশার মেশিন) ব্যবসায়ীদের বৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। কোনো ধরনের সময় কিংবা নোটিশ না দিয়ে নগরের মেজরটিলা এলাকায় রাস্তার পাশে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে। ডিসি এই অঞ্চলের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করছেন। তাই ভুক্তভোগী বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্র হয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ডিসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছেন।

এই সম্পর্কিত আরো