হবিগঞ্জের সিআইডি এবং নবীগঞ্জ থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে মিশুক চালক আবিদুর ইসলাম (১৮) হত্যাকান্ডের সন্দেহভাজন আসামী হাফিজুর রহমান (৩৫), হামিদুর রহমান (২৯) ও চৌকিদার ছাও সরকার (৬৫) কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ধৃত হাফিজুর ও হামিদুর পৌর এলাকার চরগাওঁ গ্রামের মৃত ভালু মিয়ার ছেলে এবং ধৃত ছাও সরকার সদর ইউনিয়নের গুজাখাইর গ্রামের নিরানন্দ সরকারের ছেলে। পরে গ্রেফতারকৃত আসামীদের জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, ২০২১ইং সালের ৩১ আগস্ট রাত ৮ টার দিকে নবীগঞ্জ শহর থেকে পৌর এলাকার কেলী কানাইপুর গ্রামের মহিবুর রহমান ওরপে পাতা মিয়ার ছেলে আবিদুর ইসলাম (১৮) মিশুক গাড়ি নিয়ে নবীগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কে ফায়ার সার্ভিস স্ট্যাশনে জনৈক ব্যক্তিকে নিয়ে যায়। যাত্রী নামিয়ে সেখান থেকে কোন দিকে যায় তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন নি। এরপর থেকে তার কোন সন্ধ্যান পায়নি পরিবারের লোকজন।
ঘটনার প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা চালায়। অবশেষে নিখোজেঁর ৩ দিন পর (৩ সেপ্টেম্বর-২০২১ইং) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে পথচারীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ উপজেলার সরিষপুর নামক স্থানে মরা কুশিয়ারা নদী থেকে ঘটনাস্থলে পৌছে কচুরী পেনার নীচে লুকিয়ে রাখা বিবস্ত্র ক্ষতবিক্ষত আবিদুর ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে লাশের পাশে থাকা কাপড় দেখে মৃতদেহ আবিদুর ইসলামের মর্মে সনাক্ত করেন আবিদুরের পরিবার।
পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে মিশুক চালক আবিদুর ইসলামের নির্মম নৃঃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। টমটম ও মিশুক শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছিল আতংক ও উৎকন্ঠা। এ ব্যাপারে নিহত আবিদুর ইসলামের বাবা মুহিবুর রহমান ওরপে পাতা মিয়া অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জ থানায় মামলা নং-০৩, তারিখ- ০৪/০৯/২০২১ইং, ধারা ৩৯২/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ তৎকালীন সময়ে সন্ধিগ্ধ ২ জনকে আটক করে জেলা হাজতে প্রেরন করলেও মামলার তেমন অগ্রগতি না পেয়ে বাদী পক্ষ মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তরের আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আবিদুর ইসলাম হত্যাকান্ডের মামলাটি হবিগঞ্জ সিআইডিতে হস্তান্তর করেন।
দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মীর মোঃ আব্দুন নাসের এর নেতৃত্বে একটি টিম এবং নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন পিপিএম এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে আবিদুর ইসলাম হত্যা মামলার তদন্তে সন্দেহভাজন আসামী হাফিজুর রহমান, তার সহোদর হামিদুর রহমান ও ছাও সরকার কে গ্রেফতার করে নবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে থানা পুলিশ সিআইডি হবিগঞ্জের নিকট ধৃত আসামীদের হস্তান্তর করেন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ কামাল হোসেন পিপিএম এবং সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মীর আব্দুন নাসের।
এ ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা মীর আব্দুন নাসের বলেন, তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাহিরে বলা সম্ভব নয়।
নিহতের পরিবারের দাবী পুর্ব আক্রোশে নির্মম এ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে মিশুক গাড়ীটি নিয়ে পালিয়ে যায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। ঘটনার মাস দেড়েক আগে তিমিপুর গ্রামের দু’টি ছেলের সাথে নিহত আবিদুর ইসলামের বিরোধ হয়। বিষয়টি স্থানীয় মুরুব্বীয়ান নবীগঞ্জ বাজারে শালিস বসে নিঃস্পত্তি করেন। ওই সময় তিমিরপুর গ্রামের ছেলেরা আবিদুর ইসলামকে হুমকী দিয়েছিলেন। ঘটনার ৩ বছর ৮ মাস অতিবাহিত হলেও নিহত আবিদুর ইসলামের সাথে থাকা মিশুক গাড়ীটি এখনও উদ্ধার হয়নি।