সিলেটের ওসমানীনগরে আলোচিত অটোরিকশা চালক শিপন আহমদ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক কবির আলম টিপু (৩০)। অনলাইন জুয়ায় জেতা টাকা দিয়ে অটোরিকশা কেনা নিয়ে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ঘাতক টিপু নিহতের অটোরিকশাটি ছিনতাই করে নেত্রকোনায় পালিয়ে গিয়েছিল।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেটের জুডিশিয়াল আমলী ৪ নম্বর আদালতের বিচারক ইয়াছমিন আক্তারের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি দেয় টিপু। সে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার শিবপুর গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে ঘাতক টিপু অনলাইন জুয়া খেলে ৭০ হাজার টাকা লাভ করে। সেই টাকা দিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা কিনে দেওয়ার জন্য সে চালক শিপনকে প্রস্তাব দেয়। গাড়িটি দেড় লক্ষ টাকায় কেনার কথা থাকলেও টিপু শিপনকে নগদ ৮০ হাজার টাকা দেয়। বাকি ৭০ হাজার টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে টিপু তার মায়ের জন্য কেনা একটি ‘ছরতা’ (ধারালো দা-সদৃশ অস্ত্র) দিয়ে শিপনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর লাশটি সেতুর নিচে ফেলে দিয়ে অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৫ ডিসেম্বর ভোরে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বাউশারী গ্রামে ফুফাতো ভাইয়ের বাড়ি থেকে টিপুকে গ্রেফতার করে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছরতাটি ওসমানীনগরের চাতলপাড় নদী থেকে এবং লুুণ্ঠিত অটোরিকশাটি নেত্রকোনা থেকে উদ্ধার করা হয়।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মুরশেদুল আলম ভূইয়া জানান, শিপন হত্যার প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের পর সে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও ছিনতাইকৃত গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলাম বলেন, “সিলেটের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমের সরাসরি দিক-নির্দেশনায় এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) মানছুরা বেগমের সহযোগিতায় তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘাতককে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।”
উল্লেখ্য, ১৪ ডিসেম্বর ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের চাতলপাড় কেশবপুর সেতুর নিচ থেকে দয়ামীর ইউনিয়নের রাইকদাড়া গ্রামের আশরফ আলীর ছেলে শিপন আহমদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।