তপশিল ঘোষণার আগে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীরা মাঠে সক্রিয় হলেও দীর্ঘ দোটানা কাটিয়ে শেষ মুহূর্তে নির্বাচনী লড়াইয়ে পূর্ণশক্তিতে ফিরছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। সিলেটের সংসদীয় আসনগুলোতে দলটির প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নতুন সমীকরণ। বিশেষ করে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ যখন জয়ের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই জাপার অংশগ্রহণ নির্বাচনী ফলাফলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সিলেট-১ আসনে মকসুদ ইবনে আজিজ লামা, সিলেট-৩ আসনে আতিকুর রহমান আতিক এবং সিলেট-৪ আসনে মুজিবুর রহমান ডালিমকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে। এছাড়া সিলেট-২ আসনে জাপার একাংশ ও জেপির সমন্বয়ে গঠিত ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ থেকে ইয়াহইয়া চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সিলেট-৫ আসনে জেলা সভাপতি সাব্বির আহমদ ও সিলেট-৬ আসনে আমেরিকা প্রবাসী আব্দুন নুর মনোনয়ন পেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যেই জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ বিভক্তি আরও স্পষ্ট হয়েছে। রওশন এরশাদ ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের অনুসারী অংশটি ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ নামে আলাদা কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ইতোমধ্যেই ১১৯ জন প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এই বিভক্তি দলটির একক শক্তিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাপা প্রার্থীরা দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকায় তারা এবার আওয়ামী সমর্থক ও নিরপেক্ষ ভোটারদের একটি বড় অংশ নিজেদের বাক্সে টানতে পারেন। বিশেষ করে সিলেট-৪ আসনে ডালিম যদি আওয়ামী লীগ ও জমিয়তের একাংশের ভোট সংগ্রহ করতে পারেন, তবে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীদের জন্য জয়ের পথ কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সিলেট-৫ আসনেও আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন ও জেলা সভাপতি সাব্বির আহমদ। সেলিম উদ্দিন প্রবাসে থাকলেও দুটি আসন থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন, যা স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিলাল আহমদ বলেন, "গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রতিটি দলই তাদের নিজ নিজ ভোট পাবে। তবে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেওয়ায় কিছু আসনে আঞ্চলিক ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে, যা মূল লড়াইয়ের সমীকরণে প্রভাব ফেলবে।"
অন্যদিকে, জাপা নেতা সাব্বির আহমদ জানান, প্রার্থী ঘোষণায় কিছুটা বিলম্ব হলেও মাঠ পর্যায়ে জাপার সাংগঠনিক প্রস্তুতি রয়েছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই প্রার্থীরা একযোগে প্রচারণায় নামবেন।
সিলেটের ছয়টি আসনেই শেষ মুহূর্তের এই রাজনৈতিক চালবাজি এবং জাতীয় পার্টির সক্রিয় অংশগ্রহণ নির্বাচনী ফলাফলকে কোনো নাটকীয় মোড় দেয় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় এখন সাধারণ ভোটাররা।