সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার ৮নং কসকনকপুর ইউনিয়নে সরকারি ভূমি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নিয়াগুল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, চক্রটি সরকারি সীমানা পিলার উপড়ে ফেলে এবং গাছ কাটার চেষ্টা চালায়, যা নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) কয়েস আহমদ ও তার সহযোগী রুবেল (আরোয়া রুবেল), সয়ফুল এবং মুজিবসহ একদল লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে মহড়া দেয়। এসময় তারা সরকারিভাবে স্থাপিত সীমানা পিলার উপড়ে ফেলে এবং সরকারি গাছ কাটার পায়তারা করে।
স্থানীয়রা জানান, জায়গাটি একসময় খাল ছিল, যা ভরাট করে এলাকাবাসীর চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা নির্মাণ করা হয় এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে গাছ লাগানো হয়। কিন্তু অভিযুক্তরা রাস্তা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় মুরুব্বিরা ঘটনাস্থলে গেলে সেখানে সরকারি খুঁটিগুলো দেখতে পাননি। স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে অভিযুক্ত কয়েস ও রুবেলের চাচাতো ভাই রিয়াজ ঘটনাস্থলে এসে মুরুব্বিদের কাছে একদিনের সময় প্রার্থনা করেন এবং উপড়ে ফেলা খুঁটি পুনরায় স্থাপন করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মুরুব্বি বলেন, কয়েস ও রুবেল বাহিনী পিলার উপড়ে ফেলার পর মানুষের তোপের মুখে তা আবার বসিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু তারা আদৌ তা করবে কি না সন্দেহ রয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে বেহাত হওয়া সরকারি জায়গা উদ্ধার এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য (৯নং ওয়ার্ড) কমরুল ইসলাম বলেন, কয়েস ও রুবেল বাহিনী সরকারি সার্ভে করে বসানো পিলার উপড়ে ফেলে স্থানীয় মুরুব্বি ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত রুবেল তা অস্বীকার করে বলেন, সবকিছু মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি ভালো মানুষ, সাংবাদিকরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে।
এদিকে ৮নং কসকনকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুছ সাত্তার মইন বলেন, ওখানে একটি খাস খাল ছিল, বর্তমানে স্থাপনা হয়েছে। পিলার তোলার বিষয়টি আমিও শুনেছি, তবে আমি শহরের বাইরে ছিলাম।
খবর পেয়ে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং সদ্য পিলার উপড়ে ফেলার আলামত পেয়েছি। স্থানীয়রাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক জানান, এ ঘটনায় আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত রাখতে এবং অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।