মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

অসুস্থতা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: নাছির চৌধুরীর মনোনয়নে দিরাই শাল্লায় অস্থিরতা

দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে গুরুতর অসুস্থ সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দীন চৌধুরীকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নাম নিশ্চিত করেন। তবে মনোনয়ন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় বিএনপি ও সাধারণ সমর্থকদের মাঝে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নাছির চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল, চলাফেরা ও দৈনন্দিন কাজে অন্যের সহায়তার ওপর নির্ভরশীল এবং দীর্ঘ সময় রাজনীতির মাঠের বাইরে থাকায় তাঁকে নিয়ে কঠিন হাওরাঞ্চলে নির্বাচনী লড়াই চালানো কতটা বাস্তবসম্মত এ নিয়ে তৃণমূলে প্রশ্ন উঠেছে। 

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দিরাই-শাল্লার কঠিন মাঠপরিস্থিতি, হাওরের দুর্গম এলাকা এবং জামায়াতের শক্ত প্রার্থীর মুখোমুখি দাঁড়াতে হলে সক্ষম, তরুণ ও মাঠপর্যায়ে সবসময় সক্রিয় নেতৃত্ব দরকার ছিল। এই প্রেক্ষাপটে সব আন্দোলন-সংগ্রাম, গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কাজে সর্বাধিক ভূমিকা রাখা ত্যাগী নেতা তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেলকে উপেক্ষা করায় অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।

শাল্লা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, নাছির উদ্দীন চৌধুরী আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ ও সম্মানিত নেতা হলেও তিনি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ; ঠিকভাবে দাঁড়ানো, হাঁটা বা কথা বলা পর্যন্ত তাঁর জন্য কষ্টসাধ্য। এমন অবস্থায় তাকে নিয়ে হাওরের দুর্গম নির্বাচনী মাঠে জামায়াতের প্রভাবশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করা অত্যন্ত কঠিন হবে। একইসঙ্গে নাছির চৌধুরীর পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তাঁর সমর্থকদের মধ্যেও বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা নির্বাচনী মাঠে দলের জন্য অতিরিক্ত চাপে পরিণত হতে পারে।

দিরাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, নাছির চৌধুরীর অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই, কিন্তু বাস্তবতা হলো তিনি এখন সম্পূর্ণ শারীরিক অক্ষম অবস্থায় আছেন। অন্যদিকে পাবেল চৌধুরী গত কয়েক বছর ধরে দিরাই-শাল্লায় দলের প্রতিটি আন্দোলন, মানববন্ধন, গণসংযোগ, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও কর্মী পুনর্গঠনে সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন। তিনি মাঠে গ্রহণযোগ্য, মানুষের ঘর-দোরে যাওয়া আসা আছে এবং তৃণমূলের আস্থা অর্জন করেছেন। এমন একজনকে বাদ দিয়ে একজন অসুস্থ নেতাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়।

স্থানীয় তৃণমূল নেতারা আরও বলেন, সামনে কঠিন লড়াই। জামায়াতের প্রার্থী এডভোকেট শিশির মনির এলাকায় শক্ত প্রভাব, সংগঠিত কর্মীশক্তি ও মাঠে ধারাবাহিক উপস্থিতি নিয়ে লড়াই করছেন। সেখানে দলের মনোনীত প্রার্থী যদি নিজে মাঠে নেমে প্রচার পরিচালনা করতে না পারেন, তা হলে পুরো সংগঠনই দুর্বল হয়ে পড়বে।

এই বাস্তবতায় যোগ্য, ত্যাগী ও মাঠে প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্ব হওয়ার কথা ছিল তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল। তৃণমূল মনে করছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত ছিল এলাকার বাস্তবতা, প্রার্থীর শারীরিক সক্ষমতা ও সম্ভাব্য নির্বাচনী ঝুঁকি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

গুরুতর অসুস্থ নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি বেকায়দায় পড়তে পারে-এমন আশঙ্কা দিন দিন আরও বাড়ছে।

এই সম্পর্কিত আরো