বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

ওসি আহাদের পদায়নে উত্তাল গোয়াইনঘাট, রুখে দেওয়ার হুঁশিয়ারি স্থানীয়দের

সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে আবারও আব্দুল আহাদের পদায়নের খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা উপজেলায়। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের ৫২৭টি থানায় লটারির মাধ্যমে ওসি পদায়নের তালিকায় গোয়াইনঘাটের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গোয়াইনঘাট থানার ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ওসি দ্বিতীয়বারের মতো একই থানায় পোস্টিং পেলেন।


তবে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণ জনতা—সকলেই এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বিতর্কিত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর কর্মসূচি ও প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয়রা।


নেটিজেনরা ওসি আহাদকে ‘স্বৈরাচারের দোসর’ ও ‘আওয়ামী পুলিশ লীগের সদস্য’ আখ্যা দিয়ে তার ফিরতি পদায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।


কে এম গাজী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর দুর্নীতিবাজ পুলিশ অফিসার আহাদকে অপসারণ করা উচিত। এই ওসি সাধারণ মানুষের নামে শতশত মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। স্বর্ণপদক পাওয়ার জন্য লিটনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভুয়া মামলা দিয়েছিল।’


ছাত্রদল নেতা মো. আনোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘ওসি আব্দুল আহাদ ছিলেন পাক্কা একজন স্বৈরাচারের অনুগত লোক। আবারও নাকি তিনি গোয়াইনঘাটে আসছেন। জেগে উঠো গোয়াইনঘাটবাসী।’

হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হয়রানি প্রসঙ্গে ইয়াসিন আহমদ লিখেন, ‘এই ওসি সাহেবের নাটকীয়তায় গোয়াইনঘাটের শত শত উলামায়ে কেরাম বাড়িঘর ছাড়া ছিলেন।’


ওসি আহাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগটি ওঠে ২০১৯ সালে ছাত্রদল নেতা আন্নু মালিক লিটনকে কেন্দ্র করে। লিটনের পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, লিটনকে প্রথমে ৩ দিন গুম করে রাখা হয় এবং জাফলং চা-বাগান এলাকায় ‘ক্রসফায়ারের’ প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে ১ কেজি হিরোইনসহ আটক দেখানো হয়, যা প্রকৃতপক্ষে ময়দা ছিল বলে পরিবারের দাবি।


লিটনের পরিবারের অভিযোগ, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমদ ও আওয়ামী লীগ নেতা জামাই সুমনের নির্দেশে ওসি আহাদ লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এমনকি রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে জোরপূর্বক জবানবন্দি নেওয়া হয়। ২০২৩ সালে নিম্ন আদালত লিটনকে ফাঁসির আদেশ দিলেও মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ওসি আহাদের ফিরে আসার খবরে লিটনের পরিবার বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।


২০১৮ ও ২০২১ সালে ওসি আহাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালে হুন্ডির মাধ্যমে ৪৫০ কোটি টাকা ভারতে পাচার এবং সাড়ে ৪ কোটি টাকা ঘুষ আদায়ের মামলার আসামি ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে ২০২১ সালে জাফলংয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনছান আলী বাদী হয়ে ওসি আহাদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে সহযোগিতা ও কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা করেন। স্থানীয়দের মতে, তার আমলে সীমান্তে চোরাচালান ও বালু-পাথর খেকোদের দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছিল।


ওসি আহাদের পদায়ন প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক বলেন, ওসিদের পোস্টিং আমরা করি না। আদৌ উনার পোস্টিং সেখানে হয়েছে কি না, তা অফিসিয়ালি আমাদের কাছে আসেনি।

 

একই সুর শোনা গেল সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. সম্রাট তালুকদারের কণ্ঠেও। তিনি জানান, ১১ থানায় ওসি বদলি হলেও পদায়নের বিষয়ে অফিসিয়ালি কোনো কাগজপত্র এখনো তাদের হাতে পৌঁছায়নি।

 

এদিকে, ওসি আহাদের পদায়ন বাতিলের দাবিতে গোয়াইনঘাটের সচেতন মহল ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অনড় অবস্থানে রয়েছেন। ন্যায়বিচার ও এলাকার শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

এই সম্পর্কিত আরো