যানজটে স্থবির ঐতিহ্যবাহী সাচনা বাজার সহ জামালগঞ্জের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা। যুগের পর যুগে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় ভেঙ্গে পড়েছে বাজারে জীবনযাত্রা।
পরিবহন সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে উপজেলাবাসী। সড়কের বিভিন্ন মুড়ে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা আর যত্রতত্র অটো, সিএনজি, মিনি ট্রাক রাখার বিষয়ে প্রশাসনও নিরুপায়। সাচনা বাজারে উপর দিয়ে ট্রাক, মিনি ট্রাক, সিএনজি, অটো, মোটরবাইক বিভিন্ন পয়েন্টে স্যান্ড করলেও তাদের নেই কোন বৈধ পারমিট। এমন কি বেশির ভাগ গাড়ির নেই কোন কাগজপত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্স। বাজার জুড়ে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা আর সিএনজি, মোটরবাইকের অবৈধ স্ট্যান্ডের ছড়াছড়ি থাকলেও এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন গুরুত্ব দিচ্ছে না।
সরজমিনে দেখা যায়, সাচনা বাজারের সিএনবি রোডে সিএনজি স্ট্যান্ড, পাশেই রয়েছে ইজিবাইকের স্ট্যান্ড ও মোটরবাইকের স্ট্যান্ড। এছাড়াও পুরো বাজারের রাস্তায় রয়েছে ফল, সবজি সহ বিভিন্ন ধরণের দোকান, যার কারণে পুরো রাস্তাই হকারদের দখলে। সাচনা ফেরিঘাট পাড় হয়ে রয়েছে মোটরবাইকের স্ট্যান্ড, এক কথায় বাজারের ৩০ ফুট গলিতে ২ থেকে ৩ ফুট জায়গায় রয়েছে মানুষ চলাচলের জন্য। ব্যাস্ততম সাচনা বাজারের প্রবেশ মুখ, বেহেলি ইউনিয়নের লোকজনের সাচনা বেহেলী রোড, জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের লোকজনের যাতায়াতের জন্য মমিনপুর-সাচনা সড়ক, সাচনা বাজার ইউনিয়নের লোকজনের জন্য রামনগর-সাচনা সড়ক এছাড়াও ফেনারবাক, ভীমখালী, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়নের লোকজন সুরমা নদীর ফেরি পাড় হয়ে সাচনা বাজার হয়ে সুনামগঞ্জ, সিলেট সহ যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সাচনা-সুনামগঞ্জ সড়ক। সব জায়গায় রাস্তার প্রবেশ মুখে রয়েছে অটোরিকশা, মোটরবাইক, সিএনজি,মিনি ট্রাক সহ শত শত গাড়ির যানজট। মানুষজন আঁকাবাকা হয়ে সড়কে চলতে হয়।
সাচনা বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, রাস্তায় যানজট লাগে মানুষের স্বভাবের কারণে। এই মানুষগুলো হলো বিভিন্ন পরিবহনের ড্রাইভার। সকালে তারা বিভিন্ন পরিবহন নিয়ে রাস্তায় বের হন। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড না থাকলেও, অস্থায়ী স্ট্যান্ড থেকে বের হয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে, বাজারের অলিতে-গলিতে বসে থাকে যাত্রী তোলার আশায়। কিছু যাত্রী তোলে আবার আরো কিছু যাত্রী তোলার জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে যায় অটোবাইকগুলো। যাত্রীর জন্য রাস্তা দখল করে বসে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সাচনা বেহেলী রোড, সাচনা মমিনপুর রোড রাত ১০ টা পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে।
এছাড়াও দাড়িয়ে থাকা যানবাহনের হর্ণের শব্দে পথচারীদের কান ঝালাপালা। এব্যাপারে সাচনা বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ আল আজাদ জানান, আমরা প্রশাসনের নির্দেশে কয়েকবার রাস্তায় দোকানপাট না বসার জন্য বিভিন্ন সভা করে তাদের জানিয়ে দিয়েছি। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর আবার ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে বসে পড়ে। বিভিন্ন যানবাহন রাস্তায় যাত্রী নেওয়ার জন্য থামালে যানজট তৈরি হয়। আবার হকার উঠিয়ে দেওয়ার পরও যানজট থাকে আগের মতোই।
যতদিন পর্যন্ত সিএনজি, অটোরিকশা এবং মোটরবাইকের জন্য আলাদা স্ট্যান্ড করা না হবে ততদিন পর্যন্ত যানজটের কারণে এই দুর্ভোগ আমাদের পোহাতে হবে। আমি প্রশাসনের উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা যানবাহনের জন্য সাচনা বাজারের ৩ টি পয়েন্টে ৩ স্ট্যান্ড করার জন্য।
এব্যাপারে জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো সাইফুল ইসলাম জানান, যানজট নিরসনে আমরা সর্বত্র চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে ফুটপাত হকার মুক্ত রাখতে প্রায়ই অভিযান চালানো হয়। ফুটপাত হকার মুক্ত রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সাচনা বাজারে স্ট্যান্ডের কোন ব্যবস্থা না থাকায় সকল যানবাহন রাস্তায় যাত্রী ও মালামাল উঠা নামা করে।
আমরা বার বার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও অদৃশ্য মদদে তারা আবার রাস্তায় বসে পড়ে। সাচনা বাজার যানজট মুক্ত করতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বাজারের ব্যবসায়ীবৃন্দ এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও হকারদের এগিয়ে আসতে হবে।