সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যদের অনুপ্রবেশ ও স্থানীয় কৃষকদের ফসল নষ্টের ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে এ বৈঠকে বিএসএফ তাদের সদস্যদের বেআইনি প্রবেশ ও ফসল নষ্টের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে।
জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার জানান, পতাকা বৈঠকে বিএসএফ কর্মকর্তাদের কাছে সীমান্তের ম্যাপসহ বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। তাতে অনুপ্রবেশের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে আসে। বিএসএফ প্রতিনিধিদল তাদের টহল দলের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি পরবর্তীতে জানানো হবে।
এর আগে রবিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওইদিন ভারতের চরবাগান সীমান্ত চৌকি থেকে বিএসএফের চার সদস্য স্পিডবোটে করে সুরমা নদী পার হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য স্থাপন করা বাঁশের খুঁটি উপড়ে ফেলেন।
স্থানীয়রা জানায়, বিএসএফ সদস্যদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে কয়েকজন যুবক প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন এবং পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, বিএসএফ সদস্যরা বাঁশের খুঁটি উপড়ে ফেলছেন, আর স্থানীয়রা জিজ্ঞেস করছেন, “এটি বাংলাদেশের মাটি, আপনারা কেন সীমান্ত অতিক্রম করেছেন?” কিছুক্ষণ পর স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও ভিডিও ধারণের মুখে পড়ে বিএসএফ সদস্যরা স্পিডবোটে চড়ে ভারতের দিকে ফিরে যান।
ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও আলোচনার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি নজরে আনেন।
মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আব্দুশ শহীদ বলেন, “ফেসবুকে ভিডিওটি দেখেছি। ঘটনাস্থল সুরমা নদীর তীরের এপারেই বাংলাদেশের এলাকা। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে বিএসএফ সদস্যদের ফিরে যেতে দেখা গেছে।”
বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্তের পর বিএসএফের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়। জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গেছে, পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে সীমান্ত চিহ্নিত ম্যাপের মাধ্যমে দেখানো হয় যে ঘটনাস্থল বাংলাদেশের ভেতরে পড়েছে এবং তাদের টহলদলের এমন অনুপ্রবেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের শামিল।
বিজিবির পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। এ সময় বিএসএফ প্রতিনিধি দল নিজেদের ভুল স্বীকার করে অনুশোচনা প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ ঘটনা এড়াতে টহল কার্যক্রমে সতর্কতা অবলম্বনের আশ্বাস দেয়।
সীমান্তে এ ধরনের অনুপ্রবেশে স্থানীয় কৃষকেরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের দাবি, অনুপ্রবেশের ফলে ফসল ও বাঁধের ক্ষতি হয়েছে, যার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সীমান্ত এলাকায় স্থায়ী নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বর্ষা মৌসুমেই সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বিএসএফ সদস্যরা টহলের অজুহাতে সীমান্ত অতিক্রম করে আসেন। এ কারণে কৃষক ও নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।