জৈন্তাপুরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)'র গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন আলমাস উদ্দিন (৩৫) নামের এক যুবক। নিহত যুবক আলমাস উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে।
বিজিবির পক্ষ থেকে আলমাস উদ্দিন চোরাকারবারি দাবি করা হলেও স্থানীয়রা বলছেন তিনি একজন কৃষক। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে চারিকাটা ইউনিয়নের বালিধারা কান্দির মুখ মসজিদের দক্ষিণ পাশে তাজ উদ্দিনের বাড়ির সন্নিকটে চতুল-লালাখাল রাস্তার উপর এ ঘটনা ঘটে। এসময় চোরাইপণ্য ভর্তি পিকআপ জব্দ করা হয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি)র অধীনস্থ সুইরঘাট বিওপির চারজন বিজিবি সদস্য দু'টি মোটরসাইকেল যোগে ভারতীয় চোরাই সুপারি বহনকারী একটি পিকআপকে ধাওয়া করে। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে পথচারি কৃষক আলমাস উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা বেলা ১১ টায় আলমাছ উদ্দিনকে দ্রুত জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক থাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে উপস্থিত হয়। বিকেল ৩ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমার উপস্থিতিতে নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করা হয়।
এ ঘটনায় স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিহতের পরিবারসহ এলাকাবাসি দাবি নিহত আলমাস উদ্দিন রামাই (বরবটি) বাগানের কৃষক। তিনি চোরাকারবারে জড়িত নন। ঘটনার সময় আলমাস উদ্দিন জমিতে কাজ শেষে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ ঘটনায় সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানিয়েছে স্থানীয়রা।
তবে বিজিবি জানিয়েছে তাদের ওপর হামলা এবং একজন বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন। তবে নিহত যুবকের ব্যাপারে ১৯ বিজিবিরি পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দেওয়া হলেও উপরোক্ত স্থানে প্রায় ৫ রাউন্ড ফাঁকা ফায়ারের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ১৯ বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সকাল ১০টার দিকে জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি)-এর অধীনস্থ সুরাইঘাট বিওপির একটি টহলদল জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নের ভিত্তিখাল সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান বিরোধী অভিযানে যায়। অভিযান চলাকালীন টহলদল একটি অবৈধ পণ্যবাহী পিকআপ আটক করে। এ সময় অজ্ঞাতনামা একদল সশস্ত্র চোরাকারবারী দেশীয় ধারালো অস্ত্র, দা, বল্লম, লাঠি-সোটাসহ টহলদলের উপর আকস্মিকভাবে হামলা চালায় এবং আটককৃত মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
চোরাকারবারিদের ক্রমাগত আক্রমণ থেকে সরকারি সম্পদ (অস্ত্র ও গোলাবারুদ) ও টহলদলের সদস্যদের জান-মাল রক্ষার্থে বিজিবি সদস্যরা নিরুপায় হয়ে ৪ থেকে ৫ রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলাকারীদের আক্রমণে একজন বিজিবি সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।তবে, গুলিবিদ্ধ হয়ে আলমাস উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করা হয় নি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, 'জৈন্তাপুর থানা পুলিশের উপস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। পোস্টমর্টেমের জন্য মরদেহ ওসমানী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আলমাস উদ্দিন মারা গেছেন। এ ব্যাপারে দুই পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য আসছে। স্থানীয় এলাকাবাসী বলছেন নিহত ব্যক্তি কৃষক ছিলেন। তবে স্থানীয় বিজিবি বলছে নিহত ব্যক্তি চোরাকারবারি ছিলেন। বিজিবির ওপর চোরাকারবারিরা হামলা চালালে তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই এখনো কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'
১৯ বিজিবির কমান্ডার লেফটনেন্ট কর্নেল জুবায়ের আহমদ জানান, গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। তার মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহত ব্যক্তি চোরাকারবারি দাবি করে তিনি বলেন, চোরাই পণ্যবাহী ট্রাকের সাথেই তিনি ছিলেন।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, নিহতের দেহে তিনটি বুলেট আঘাতের চিহ্ন সনাক্ত করা হয়েছে। নিহতের মরদেহ পুলিশের হেফাজতে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
