দিন শেষ হতে তখনো বাকি আরও ৫ ওভার। ৩০ বলে শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেট পড়ে যাবে এমন ভাবাটা আকাশ-কুসুম কল্পনার মতো। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তাই বাস্তবতা মেনে নিয়ে ছুটে গেলেন লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে করমর্দন করতে। বাকিরাও তা অনুসরণ করতে থাকেন।
শেষ দিনে বৃষ্টির সঙ্গে লুকোচুরি খেলা গল টেস্ট রূপ নিল ড্রয়ে। এক যুগ ও ২৬ টেস্ট পর গলে এই প্রথম জিততে পারেনি কোনো দল। এখানে সবশেষ ড্রয়ের দেখা মিলেছিল ২০১৩ সালে। সেই ম্যাচও ছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার।
বাংলাদেশের ছোড়া ২৯৬ রানের লক্ষ্য পাড়ি দিতে এক সেশনের কিছুটা বেশি সময় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ৩২ ওভার ব্যাট করে ৪ উইকেটে ৭২ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা। এর ফলে নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রের শুরুটাও হলো ড্র দিয়ে।
বৃষ্টির বাগড়ায় আজ পঞ্চম দিনে খেলা বন্ধ ছিল প্রায় তিন ঘণ্টা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ৫ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে তাদের স্কোর হয়ে যায় ৭৯ ওভারে ৬ উইকেটে ২৪৯ রান। নিজের পরপর দুই ওভারে থারিন্দু রত্নায়েকে নিয়েছেন লিটন দাস (৩) ও জাকের আলী অনিকের (২) উইকেট।
বাংলাদেশের স্কোর অবশ্য ৭৯ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪৯ রান হতে পারত। ৭৮তম ওভারের প্রথম বলে প্রবাথ জয়াসুরিয়াকে সুইপ করতে গিয়ে যান শান্ত। স্কয়ার লেগে লাহিরু উদারা ক্যাচ তালুবন্দী করতে পারেননি। ৯০ রানে বেঁচে যাওয়া শান্তর সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে যে ১০ রান বাকি ছিল, সেই পথ পাড়ি দিতে লেগেছে ২১ বল। ১৯০ বলে সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখালেন শান্ত। টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা ১৬ তম ক্রিকেটার হলেন শান্ত। টেস্টে বাংলাদেশের অধিনায়কদের মধ্যে প্রথম এই রেকর্ড গড়লেন তিনি। সঙ্গে জিতে নেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও।
সেঞ্চুরির পর শান্ত আরও বিস্ফোরক হয়েছেন। ১৯৯ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। তিনটি ছক্কাই মেরেছেন সেঞ্চুরির পর। ৮৭ ওভারে ৬ উইকেটে ২৮৫ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ।
২৯৬ রানের লক্ষ্যে নেমে চা বিরতিতে যাওয়ার আগে ৮ ওভারে ২ উইকেটে ৩৪ রান করে শ্রীলঙ্কা। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে উদারাকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল ইসলাম। এরপর সপ্তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পাথুম নিশাংকাকে ফেরান নাঈম হাসান। নাঈমের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বল পাথুম নিশাংকা লেগ সাইডে ঘোরাতে যান। শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ধরেছেন শান্ত। ২৫ বলে ২৪ রান করেন নিশাংকা।
চা বিরতির পর ম্যাথুসকে মুমিনুলের ক্যাচে পরিণত করেন তাইজুল। শেষ ইনিংসে ৮ রানের বেশি করতে পারেননি ম্যাথুস। ১১৮ টেস্ট খেলে ইতি টানলেন ৮ হাজার ১৬৭ রান নিয়ে। ম্যাথুসের পর দিনেশ চান্দিমালকে বোল্ড করেন তাইজুল। এরপর মাটি আকড়ে পড়ে থাকার চেষ্টা করেন কামিন্দু মেন্ডিস ও ডি সিলভা। দুজনে অপরাজিত থাকেন ১২ রান করে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট শিকার তাইজুলের।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহিম ও শান্তর সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে পাথুম নিশাংকার সেঞ্চুরিতে ৪৮৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। ১০ রানের লিড পেয়ে বাংলাদেশ বড় লক্ষ্যে চাপেই ফেলতে চেয়েছিল স্বাগতিকদের। কিন্তু বাগড়া দিল বৃষ্টি।