সিলেটের খনিজসম্পদে ভরপুর সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা—গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ নির্বাচনী এলাকা। এই এলাকা এখন অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় একটি প্রভাবশালী চক্র দিনে-রাতে অবৈধভাবে পাথর ও বালি উত্তোলন, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং চোরাচালানের মতো গুরুতর অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অপকর্মে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকের জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরাধীদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও মূলহোতারা বরাবরই থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি কোম্পানীগঞ্জে চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৩ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হলেও মূল অভিযুক্ত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপদে বহাল রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন মহলকে ‘ম্যানেজ’ করেই এই তিন উপজেলায় অপরাধের মহোৎসব চলছে, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। মামলার আসামি থেকে শুরু করে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চোরাকারবারীরা পুলিশের সঙ্গে সখ্যতার সুবাদে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
গোয়াইনঘাট: নামেই জিরো টলারেন্স, বাস্তবে সখ্যতা
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার মো. তোফায়েল আহমদ দায়িত্ব গ্রহণের পর অপরাধের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা দিলেও পরিস্থিতি বদলায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক এবং পাথর ও চোরাচালান চক্রের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। এর ফলে উপজেলায় দিনে-দুপুরে হাজার কোটি টাকার পাথর ও বালি লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং চোরাচালান পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
পরিবেশ অধিদপ্তর পাথর লুটের ঘটনায় ৯টি মামলা করলেও আসামিরা পুলিশের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সিলেট জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শাহ আলম স্বপন, বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা শাহপরাণ, মান্নান মেম্বার, কামাল মেম্বার, বহিষ্কৃত যুবদল নেতা জাহিদ খান ও আবুল কাশেম এবং ছাত্রদল নেতা আজির উদ্দিনের নেতৃত্বে বিশাল চক্র পাথর লুট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, জাফলং পর্যটন এলাকায় প্রায় ৩০০ ভাসমান দোকান বসিয়ে কুদ্দুস মিয়া, সেলিম আহমদ, কাওছার ও মান্নান মেম্বার চক্র মাসে কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে।
এদিকে চোরাচালান জগতের অন্যতম নিয়ন্ত্রক মান্নান মেম্বার ও কামাল মেম্বার তাদের সহযোগীরা পুলিশ ও বিজিবির নামে টাকা তুলে চিনি, কসমেটিকস, মাদক ও গরুর বিশাল চালান দেশে ঢোকাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ডিআইজির নির্দেশে বসানো চেকপোস্টেও একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চোরাচালানের গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি নদীতে পাথরবাহী নৌকা থেকে গোয়াইনঘাট পুলিশের নামে চাঁদা তুলতে গিয়ে পাভেল মিয়া নামে এক যুবকের নিখোঁজ ও পরে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। এছাড়া, এসআই উৎসব কর্মকার ও এসআই রাকিবের বিরুদ্ধে পাথর লুটপাটকারী ও চোরাকারবারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জৈন্তাপুর: সেনা-বিজিবি’র ওপর হামলা, থামেনি চোরাচালান
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের জৈন্তাপুরে ওসির দায়িত্বে আসেন আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামান। জৈন্তাপুর উপজেলায় চোরাকারবারীরা এতটাই বেপরোয়া যে, তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর হামলা চালাতেও দ্বিধা করে না। এই অপরাধ কর্মকাণ্ডে জৈন্তাপুর থানার কিছু অসাধু কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং পতিত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৭ মার্চ হরিপুর বাজারে চোরাই মহিষ জব্দ করতে গেলে সেনাবাহিনীর একটি টহল দলের ওপর হামলা চালায় চোরাকারবারীরা, এতে কয়েকজন সেনা সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় ৭০ জনের নাম উল্লেখসহ মামলা হয়।
এতে ৯ শীর্ষ চোরাকারবারী আটক হলেও বাকীরা ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এতকিছুর পরও থামেনি চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম্য। পুলিশের ছত্রছায়ায় হরদম চলছে চোরাচালান। এর আগে, ১৬ মার্চ সীমান্তে চোরাকারবারিদের হামলায় দুই বিজিবি সদস্য আহত হয়েছিলেন। গোইয়ানঘাট ও জৈন্তাপুর দিয়ে আসা চোরাচালানের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী, মাদকদ্রব্যের নিরাপদ রুট সিলেট মহানগর শাহপরাণ থানা এলাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবারহ করা হয়। শাহপরাণ থানার যোগসাজশে এসব পণ্য নিরাপদে গন্তব্যে পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়া ভারতীয় চিনির বড় চালান শাহপরাণ থানাধীন বিসিক শিল্পনগরী খাদিম ও মোগলবাজার থানাধীন গোটাটিকরে অবস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে প্রবেশ করছে নিরাপদে। এসব চোরাচালানের প্রধান সবরাহকারীদের মধ্যে সাংবাদিকদের একটি বড় অংশ জড়িত।
কোম্পানীগঞ্জ: ১৩ পুলিশ প্রত্যাহার হলেও অধরা মূলহোতা
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনানের দায়িত্বকালে এ অঞ্চলটি বালি ও পাথর লুটপাটকারী এবং চাঁদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের (বাঙ্কার) সংরক্ষিত এলাকায় পাথার লুটের সাথে জড়িত সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাকিম আহমদ ফরহাদ। সিলেট জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ নেতার ছত্রছায়ায় ফরহাদ বেপরোয়াভাবে পর্যটন স্পট উৎমা ছড়া, রোপওয়ের (বাঙ্কার), ধলাই সেতুসহ একাধিক স্থানে বালি ও পাথর লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় প্রেসক্লাবের কয়েকজন শীর্ষ সাংবাদিকও জড়িত রয়েছেন এসব অপকর্মে। গত ১৯ জুলাই ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের (বাঙ্কার) সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধভাবে পাথর তুলতে গিয়ে বালি চাপায় মারা যান হাবিবুর রহমান নামের এক শ্রমিক। তাছাড়া এর আগে এই বাঙ্কারে আরো কয়েকজন নিরীহ শ্রমিক পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে প্রাণ হারান।
এদিকে ১০ ফেব্রুয়ারি শাহ আরেফিন টিলা থেকে অবৈধ পাথরবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৩ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে এই ঘটনার মূলহোতা হিসেবে অভিযুক্ত ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে স্বপদে বহাল রয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
থানার সামনে ধলাই নদী থেকে পরিবেশ বিধ্বংসী বোমা মেশিন দিয়ে প্রতিদিন বালি, পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এই কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ নেতা আলী আব্বাস, জুয়েল মিয়া, আঙ্গুর আলী ও শাহীন মিয়ার মতো প্রভাবশালীরা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে হামলা-মামলার শিকার হতে হয়। বারবার অভিযোগ সত্ত্বেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ধলাই সেতুও এখন হুমকির মুখে।
ওসি আদনানের বিরুদ্ধে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাকিম আহমদ ফরহাদের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি এসি উপঢৌকন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, পতিত সরকারের প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা রাসেল আহমদের সঙ্গে রয়েছে তার সখ্যতা। অবৈধ বালি ও পাথরের উত্তোলনের মূলহোতা রাসেল ওসিকে ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন।
সম্প্রতি সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে বালু ও পাথরখেকো সিন্ডিকেটের হাত থেকে পরিত্রাণ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উপজেলার সালিস ব্যক্তিত্ব ও ব্যবসায়ী মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী ছালাতুন নেছা। ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নির্বিচারে পাথর ও বালু লুটের অভিযোগ করেছেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ছালাতুন নেছার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেলাল আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ছালাতুন নেছা স্বামী মারা যাওয়ার পর সহায়-সম্পত্তি নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ-কালাইরাগ কোয়ারিতে থাকা সম্পত্তি নিয়ে উপজেলার কুখ্যাত বালু-পাথর সিন্ডিকেটের হোতা সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহার ও তার লোকজনের রোষানলে পড়েছে তার পরিবার। তার সন্তানদের মারধর করাসহ মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আর এই সুযোগে ওই সিন্ডিকেট ছালাতুন নেছার সম্পত্তি থেকে প্রায় ২ কোটি টাকার পাথর ও বালু লুট করে নিয়ে যায়। তিনি এখন বিচার পাচ্ছেন না। বরং তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে ৭-৮ মাস ধরে বালু ও পাথর লুট করা হচ্ছে। আর এই লুটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুবদল নেতা বাহার ও আজিদ সিন্ডিকেট। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শওকত আলী বাবুল। সঙ্গে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান। তাদের অবাধ লুটপাটের কারণে এবার ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে শতকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
আরও বলা হয়, ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে কালাইরাগ সীমান্তে ভারত থেকে এলসির পাথর আমদানি করতে একটি ল্যান্ডপোর্ট চালু করে সরকার। এই পোর্টের জমি ও সড়ক নির্মাণে ছালাতুন নেছার পারিবারিক সম্পত্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে এই জমি দেওয়া হয়। তাদের বাড়ি কালিবাড়ি গ্রামে। গ্রামের পাশেই ভোলাগঞ্জ-কালাইরাগ কোয়ারি। ওই কোয়ারিতে বিভিন্ন দাগে তাদের ১৫-১৬ একর ভূমি রয়েছে। এসব ভূমির মধ্যে বাড়ির পশ্চিম অংশে ৪-৫ একর ভূমি লিজ সূত্রে তাদের নিজের।
৮ এপ্রিল পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা বাহার, তার ভাই গিয়াস ও নাজিম উদ্দিনসহ পাথরখেকো সিন্ডিকেটের কয়েকজন সশস্ত্র সদস্য ছালাতুন নেছাদের ভূমি থেকে পাথর লুট শুরু করে। এ সময় বাড়িতে থাকা তার ছেলে বিলাল, হেলাল ও ইউনুছ মিয়া সেখানে গিয়ে বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে বাহারের নেতৃত্বে তার ভাই ও সিন্ডিকেট সদস্যরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তার ছেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করেন।
পরে এলাকার লোকজন এগিয়ে গিয়ে ছেলেদের উদ্ধার করেন। আহত তিন ছেলেকে নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে রওয়ানা হলে সন্ধ্যায় লাখাল সেতুর কাছে যাওয়ামাত্র ফের বাহার, গিয়াস, নাজিম, জুবায়ের, আজিদ, হেকিম মিয়া ও হাবিবসহ কয়েকজন তার ছেলেদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় তারা লাঠিসোঁটা দিয়ে তিন ছেলেকে বেদম মারধর করেন।
কিন্তু পুলিশ আহত তিন ছেলে বিলাল, হেলাল ও ইউনূসকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে না পাঠিয়ে থানায় নিয়ে রাখে। অসুস্থ তিন ছেলেকে চিকিৎসা প্রদানের জন্য ওসি উজায়েরকে বারবার অনুরোধ করার পরেও তিনি কালক্ষেপন করেন। পরে মধ্যরাতের দিকে পাথরখেকো চক্রের প্রধান বাহার ও তার লুটপাটের সহযোগী বিএনপি নেতা শওকত আলী বাবুলের নির্দেশে ওসি উজায়ের আহত তিন ছেলের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে গ্রেপ্তার দেখায়। মামলায় বাদি করা হয় বাহারের ভাই নাজিমকে।
আরও বলা হয়, মামলা দিয়ে ছালাতুন নেছার তিন ছেলেকে গ্রেফতারের পর থেকে তাদের বাড়ির পাশের ভূমিতে যন্ত্র ব্যবহার করে অবাধে বালু ও পাথর লুট শুরু করে ওই সিন্ডিকেট। এখনও তারা লুটপাট চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২ কোটি টাকার বালু ও পাথর লুট করে নিয়েছে তারা। ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় একাধিকবার অভিযোগ দিলেও বিএনপি নেতা বাবুল ও যুবদল নেতা বাহারের নির্দেশে কোনো মামলাই কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রহণ করেনি।
পরে ছালাতুন নেছা বাদী হয়ে গত ২০ এপ্রিল সিলেটের আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ছালাতুন নেছা অভিযোগ করেন, ভোলাগঞ্জের কোয়ারিতে বাহার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যেই অস্ত্র নিয়ে বালু ও পাথর লুট করছে।
তাদের ভয়ে অনেক জায়গার মালিক মুখ খুলছেন না। ওসি নিজে তাদের পক্ষে থাকায় কেউ অভিযোগ করার সাহসও পাচ্ছেন না। বালু ও পাথর লুটের ফলে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে পুরো এলাকা। অনেক মানুষের ঘরবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। অনেকের ভূমি দখল করে পাথর লুট করার কারণে তাদের বসতঘরও বিলীন হওয়ার পথে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, এসি আমার নিজের টাকায় লাগিয়েছি।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমদ জানান, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছি না, সাধ্যমতো আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মো. বদরুজ্জামান চোরাচালান প্রসঙ্গে বলেন, জৈন্তাপুরে চোরাচালান হয় সেটি আমি জানি না। আমরা চোরাচালান রোধে তৎপর।
শাহপরাণ (রহ.) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন জানান, আগের মতো চোরাচালান হচ্ছে না। তবে টুকটাক হচ্ছে, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি।
মোগলাবাজার থানার ডিউটি অফিসার শিদুল দাশ মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের পক্ষে তিনি জানান, ভারতীয় চোরাচালানের চিনি বিসিক শিল্পনগরীর গোটাটিকরে প্রবেশে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার প্রশ্নে, এখানে পুলিশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি ওসি স্যারকে অবগত করব।
সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. সম্রাট তালুকদার জানান, সিলেট জেলা পুলিশ অপরাধ দমনে সদা তৎপর পুলিশ সুপার। অপরাধের সাথে পুলিশ সদস্যদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, সিলেটের সীমান্ত এলাকা শুধু ৩টি নয় আরও আছে। আমরা সব সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা উন্নতির জন্য কাজ করছি। তারপরও যারা চোরাচালান, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাফলংয়ে ভাসমান দোকান বসিয়ে দুটি সংগঠনের চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। ভাসমান দোকান উচ্ছেদে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।