আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে ৩০০ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী কিংবা সমর্থিত প্রার্থীর মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানানোর পর নির্বাচন কমিশন যথাসময় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবে। জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। এর অংশ হিসেবে ৩০০ সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।
রোববার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়ার কারণে প্রতিটি নির্বাচনি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। করাটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি অবশ্যই গৌরব এবং সম্মানের। দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেককে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন- এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাটিকে মেনে নিবেন। দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করবেন।
দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের নাম দলের পক্ষ থেকে আমরা জানিয়ে দেব। দল যাকেই যে আসনে নমিনেশন দেবে, তাকে বিজয়ী করে আনার জন্য জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রত্যেকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মনে রাখবেন, আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার কিন্তু ওতপেতে রয়েছে। নিজেদের মধ্যে রেশারেশি বিবাদ-বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে করে প্রতিপক্ষ সুযোগ নিতে পারে।
তারেক রহমান বলেন, প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী, যারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সমর্থন পেতে গণসংযোগ করছেন, সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী। খালেদা জিয়ার সৈনিক, বিএনপির কর্মী ধানের শীষের সমর্থক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছেন। চাকরি কিংবা পেশাগত কারণে অনেকে যেমন প্রবাসী হয়েছেন, ঠিক একইভাবে বিগত ১৫-১৬ বছরে কেউ কেউ ফ্যাসিস্টের রোষানলে পড়েও প্রবাসী হতে বাধ্য হয়েছেন। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্নভাবে যার যার অবস্থান থেকে অত্যন্ত সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। দেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিরলস ভূমিকার জন্য প্রবাসীদেরকে অভিনন্দন জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, লাখো প্রবাসী দূর থেকে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠান। জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান এই মুহূর্তে ছয় থেকে প্রায় ৭ শতাংশ। সুতরাং দেশে প্রবাসীদের পরিবার এবং তাদের অর্থসম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম বিশেষ দায়িত্ব। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন থেকেই জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের অধিকার এবং সুযোগ চেয়ে আসছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে তাদের সেই আশা অনেকাংশেই পূরণ হতে যাচ্ছে। এবারই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ লাখের মতো প্রবাসী আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানের সুযোগ পাচ্ছেন। আমি প্রবাসী ভাইবোনদের ভোট প্রদানের এই সুযোগকে একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করি। প্রবাস থেকে এবারই প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কারণে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটি কারো কারো কাছে কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবুও এই সুযোগ চালু করার নির্বাচন কমিশনকে সাধুবাদ জানাই। জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভবিষ্যতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটি আরও কিভাবে সহজ করা সম্ভব হয়, সে পদক্ষেপ আমরা অবশ্যই নেব।
উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে এবং বিদেশে আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। অথচ নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র এবং সমাজের উদাসিনতা ইদানীং মনে হয় একটু প্রকট হয়ে উঠছে। শনিবারের একটি পত্রিকার রিপোর্টে দেখলাম গত আগস্ট মাসে সারা দেশে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এর মধ্যে সাতজনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ৯৮ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন। নারী এবং শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। নারী এবং শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামাজিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।