রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
জাতীয়

পলাতক আসামিকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা চায় ইসি

কোনো আসামিকে আদালত পলাতক ঘোষণা করলে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না, এমন বিধান আইনে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধানও বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে সাংবিধানিক এই সংস্থা।

এ দুটিসহ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আরও বেশ কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে ইসি। গত মঙ্গলবার ইসির প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

প্রস্তাবে সশস্ত্র বাহিনীকে সংজ্ঞাভুক্ত করা হয়েছে। এতে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর সদস্যরা ভোটকেন্দ্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন। এ ছাড়া কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা রাখা, ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো, জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা, প্রার্থীর হলফনামায় দেশ ও বিদেশে থাকা সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব আছে।

বুধবার দুপুরে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর কিছু সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এর আগে গত ১১ আগস্ট আরপিও সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল ইসি। তখন পলাতক আসামিকে অযোগ্য করার বিধানটি ইসির প্রস্তাবে ছিল না। পরে এটি যুক্ত করা হয়।

কখন আদালত একজন আসামিকে পলাতক ঘোষণা করেন, তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটোরিয়াল উপদেষ্টা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, কোনো মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে আদালতে হাজির না হলে তাঁকে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। হাজির না হলে তিনি পলাতক আসামি হিসেবে গণ্য হন। পলাতক আসামি হাজির না হলে ফৌজদারি মামলায় তিনি আইনি প্রতিকার পাওয়ার অধিকারী নন বলে জানান এহসানুল হক সমাজী।

পলাতক আসামিকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করার প্রস্তাবটি ছিল মূলত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের। তখন ইসিও এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছিল। গত মার্চে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে লিখিতভাবে ইসি বলেছিল, এমন বিধান অসদুদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে, এটি নিয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রয়োজন রয়েছে।

আগে দ্বিমত জানিয়ে এখন কেন ইসি এই প্রস্তাব গ্রহণ করল, এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করেছে। আলোচনায় উভয় কমিশন সন্তুষ্ট হয়েছে এবং মনে করেছে এমন বিধান রাখা ভালো হবে।

ইসি সূত্র জানায়, যেভাবে বিধানটি প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে এটি কার্যকর হলে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও যদি পলাতক আসামি ঘোষিত হন, তাহলে তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারাবেন।

বুধবার ইসির ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনো একজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নামে মামলা দেওয়া হলো, তাঁকে আদালতে যেতেও বাধা দেওয়া হলো, আদালত তাঁকে না পেয়ে পলাতক ঘোষণা করল।

জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছি, আপনাদের এই বক্তব্যের কারণেই কিন্তু আমরা ওই ধরনের একটা অবস্থান (সংস্কার কমিশনের সঙ্গে দ্বিমত) নিয়েছিলাম। বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়ে আইনগুলো পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন হয়ে থাকে। সমসাময়িক বাস্তবতায় আমাদের কাছে মনে হয়েছে, না, এটা যৌক্তিক। যদি ভবিষ্যতে দেখা যায় যে এটার মিসইউজ (অপব্যবহার) হচ্ছে, তখন আমাদের আবার রিভিউ করতে হবে।’

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এ অবস্থা বহাল থাকলে দলগতভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে না। তবে দলটির নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা নেই।

আওয়ামী লীগের নেতারা আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, সেটা সময়ই বলে দেবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কেউ অভিযুক্ত হলে তাঁকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান করারও প্রস্তাব ছিল সংস্কার কমিশনের, তবে এটি ইসির প্রস্তাবে রাখা হয়নি।

এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, এ ধরনের বিধান করা আরপিওর দু-তিনটি ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ইসির কাছে মনে হয়েছে। আরপিওতে বলা আছে, কেউ যদি আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন, তবে তিনি অযোগ্য হবেন।

তাহলে পলাতক আসামিকে অযোগ্য ঘোষণা করা সঠিক হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বিশদ আলোচনা করে এটি ঠিক করা হয়েছে। সাধারণভাবে দেখা যায়, বড় কোনো কারণ ছাড়া কেউ ফেরারি হবেন না। আর আদালত কর্তৃক ফেরারি ঘোষিত হতে হবে।

এই নির্বাচন কমিশনার জানান, যে বা যাঁরা প্রার্থী হতে চাইবেন, তাঁরা নিজ নির্বাচনী এলাকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদে থাকতে পারবেন না।

আরও যা আছে প্রস্তাবে
লাভজনক প্রতিষ্ঠানে থাকা ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। ইসির সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এখানে লাভজনক প্রতিষ্ঠান বলতে যার ৫০ ভাগের বেশি শেয়ার সরকারের। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন, দেশে ও দেশের বাইরে থাকা সম্পদের হিসাব দিতে হবে।

প্রার্থী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে ইসি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারবে। মিথ্যা তথ্যের জন্য প্রার্থিতা বাতিল করা যাবে এবং নির্বাচিত হওয়ার পরও তাঁর সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। নির্বাচনে প্রার্থীর জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হবে ৫০ হাজার টাকা। নির্বাচনী ব্যয় হবে ভোটারপ্রতি ১০ টাকা। রাজনৈতিক দল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অনুদান নিতে পারবে। ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান নিলে তা ব্যাংকের মাধ্যমে নিতে হবে।

বিদ্যমান আইনে সরাসরি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনেও দেওয়ার সুযোগ আছে। তবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিধান বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে ইসি। যদিও নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, বিদ্যমান আইনে এটি নেই। তাঁরা অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিধান যুক্ত করার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু এখন এটা করা হচ্ছে না, এটি ভবিষ্যতে যুক্ত করা যায়।

নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ভোট বন্ধ ও ফলাফল স্থগিতে ইসির আগের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ক্ষমতাও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

এই নির্বাচন কমিশনার জানান, সংবাদমাধ্যমের কর্মীসহ কে কতক্ষণ ভোটকক্ষের ভেতরে থাকবেন, তা নির্ধারণের ক্ষমতা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের জন্য ইসি আলাদা পরিচয়পত্র দেয়। এরপর আবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হলে অনিয়মের খবর সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আপনি যে ইলেকশনের কথা বলছেন, সেই ইলেকশনে সম্ভবত ভোটারও ছিল না। যে ভোটার লাইন আমরা দেখেছি, সেই ভোটার লাইনটাও সঠিক ছিল না। সেই ইলেকশনে সম্ভবত ভোটকেন্দ্রের ভেতরে এজেন্টও ছিল না। অনুরূপভাবে যথাযথ সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল না, অবজারভারদের (পর্যবেক্ষক) উপস্থিতি ছিল না। ইনশা আল্লাহ সেই ইলেকশন বাংলাদেশে আর হবে না। এই ইলেকশনে সর্বপ্রথম চোখ হবে ভোটার নিজে। তারপর হচ্ছে ভোটারের এজেন্ট। আর সহযোগী হিসেবে থাকবেন সাংবাদিক ভাইয়েরা এবং অবজারভাররা।’

এই সম্পর্কিত আরো