আশুলিয়ায় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সজলের পুড়ে যাওয়া মরদেহ জুতা দেখে শনাক্ত করেন শাহিনা বেগম। আর চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে নিহত ১৪ বছর বয়সি শিশু মেহেদী হাসান জুনায়েদের মরদেহের বর্ণনা দিতে গিয়ে আদালতে ডুকরে কেঁদে ওঠেন মা সোনিয়া জামাল। সন্তানহারা দুই মায়ের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আদালতের পরিবেশ।
শাহিনা বেগম বলেন, আমার ছেলের (সাজ্জাদ হোসেন সজল) দুই বছরের একটি মেয়ে শিশু রয়েছে। সে প্রতিনিয়ত কবরের বাঁশের খুঁটি ধরে বলে—বাবা উঠো, বাবা উঠো, কিন্তু ওর বাবা কোনো জবাব দেয় না। আমি কী সান্ত্বনা দেব এ ছোট শিশুকে?
অন্যদিকে সোনিয়া জামাল ট্রাইব্যুনালে বলেন, আমার ছেলের (মেহেদী হাসান জুনায়েদ) চোখের বাম পাশে গুলি লেগে মাথার পেছন দিয়ে বড় গর্ত হয়ে বেরিয়ে গেছে। অনেক রক্ত বের হচ্ছিল, তা দেখে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে মানবতাববিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদানকালে এই হৃদয়বিদারক বর্ণনা দেন সন্তানহারা দুই মা।
জুতা দেখে ছেলের পোড়া মরদেহ শনাক্ত মায়ের
আদালতে জবানবন্দিতে শাহিনা বেগম (৪১) বলেন, আমার বর্তমান ঠিকানা আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা। আমি জুলাই আন্দোলনে শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগম। আমার ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সজল ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় আন্দোলনে যোগ দেয়। আমি আশুলিয়ায় নারী ও শিশু হাসপাতালে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করতাম। ঘটনার দিন (৫ আগস্ট) আমার ছেলে আন্দোলনে যায় এবং আমি হাসপাতালে ডিউটিতে যাই।
ওই দিন হাসপাতালে অনবরত গুলিবিদ্ধ রোগী আসছিল উল্লেখ করে শাহীনা বেগম বলেন, আমি বারবার ছেলেকে ফোন করে বলি, বাবা তুমি বাসায় ফিরে আস। হাসপাতালে অনেক গুলিবিদ্ধ আহত রোগী আসতেছে, তোমার আন্দোলনে থাকার দরকার নাই। তখন সে আমাকে বলে, তুমি এমন স্বার্থপর কেন আম্মু? আমি এখন বাসায় যেতে পারব না। আমার সামনে চার-চারটা মরদেহ এবং আমি একজন আহতকে ধরে বসে আছি।
বেলা ১১টা-সাড়ে ১১টার দিকে আমার হাসপাতালে দুটি ডেড বডি (মৃতদেহ) আসে। অনেক আহত রোগী আসে। তখন আমি আমার ছেলেকে আবার ফোন করি। তখন ছেলে বলে, আমাকে তুমি কীভাবে ফেরত আসতে বলো। আমি তখন বলি, তুমি আমার একমাত্র ছেলে। তোমার একটি মেয়ে আছে। তোমাকে আমি ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চাই। তখন সে জবাব দেয়, মা আমি যদি মারা যাই, তাহলে হাজার সন্তান তোমার পাশে দাঁড়াবে। তুমি আমারে নিয়ে চিন্তা করো না।
তারপর আরও দুটি মৃতদেহ আমার হাসপাতালে আসে। আমি দৌড়ে রিকশার কাছে যাই এবং ভাবতে থাকি, এই বুঝি আমার ছেলে হাসপাতালে এলো। এই সময় বুকে গুলিবিদ্ধ একটি ছেলে হাসপাতালে আসে। আমি তাকে এক্স-রে রুমে নিয়ে যাচ্ছিলাম। ওই সময় ছেলেটি তার মাকে ফোন করে বলে, আম্মু আমি ভালো আছি। আহত আরেকজনকে আমি স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। সেই ছেলেটিও তার পাশে থাকা বন্ধুকে বলছিল, আমার অবস্থা আম্মুকে বলো না, তাকে বলো—আমি ভালো আছি। না হলে আম্মুঅনেক চিন্তা করবে। এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে আমি আমার ছেলেকে বারবার ফোন দিতে থাকি, যোগ করেন শাহিনা বেগম।
ছেলেকে সতর্ক করার বর্ণনা দিয়ে ট্রাইব্যুনালে শাহিনা বেগম তার জবানবন্দিতে বলেন, আবার তাকে ফোন করে বলি, যদি আন্দোলন করতেই চাও তবে এখানে না থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাও, সেখানে তোমার মতো আরও আন্দোলনকারীরা আছে। আমার ছেলে তখন উত্তর দেয়, তুমি কি পাগল হয়ে গেছ আম্মু? আমার ভাই-বোনেরা গুলি খাচ্ছে, মারা যাচ্ছে তাদের রেখে আমি কীভাবে জাহাঙ্গীরনগরে যাব? সর্বশেষ বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে আবার তাকে ফোন দেই। তখন সে আমাকে বলে, তুমি কেন আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করছ আম্মু? আমি যদি শহীদ হই, তাহলে আমার আইডি কার্ডদেখে আমাকে শনাক্ত করো।
বেলা ২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আমার হাসপাতালের ডাক্তার বলল—দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, সজলকে আসতে বলো। তাকে দুইবার ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু ফোন কেটে দেয়। পরে অনবরত কল করেছি, কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। পরে মোবাইলফোন বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমি তার বন্ধু-বান্ধবকে ফোন দিয়ে বাইপাইল এলাকায় তার খোঁজ নিতে বলি। তারা বলে, অনবরত গুলি হচ্ছে, আমরা খোঁজ নিতে পারছি না। আশুলিয়া থানার সামনে আমরা যেতে পারছি না। আমি নিজে খোঁজ নিতে ঘটনাস্থলে যেতে পারিনি, কারণ হাসপাতালে প্রচুর গুলিবিদ্ধ আহত মানুষ আসছিল।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ট্রাইব্যুনালে শাহিনা বেগম আরও বলেন, সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার দিকে হাসপাতাল থেকে আমি ছেলের খোঁজে বের হই। আমার সঙ্গে সজলের বন্ধু শান্তকে নিয়ে বের হই। আমি আশপাশে যত হাসপাতাল আছে, সব হাসপাতালে ছেলের খোঁজ করি, কিন্তু পাইনি। আমি আইসিইউতে ঢুকেও রোগীদের মুখ দেখে দেখে ছেলেকে খুঁজেছি। যত বেওয়ারিশ মরদেহ ছিল, সব উল্টেপাল্টে আমি দেখেছি। তারা আমাকে মরদেহ দেখতে নিষেধ করছিল, কারণ তারা বলছিল—আপনি মা, আপনি সহ্য করতে পারবেন না। নিহতদের মাথায়, বুকে গুলি লেগে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, এগুলো দেখলে আপনি পড়ে যেতে পারেন। আমার স্বামীও বিভিন্ন হাসপাতালে ছেলের সন্ধানে খোঁজখবর নেয়, কিন্তু ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। রাত ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করে আমি (শাহিনা বেগম) বাসায় ফেরার উদ্দেশে বাইপাইল মোড়ে আসি। তখন আমি সেখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহাড়ারত ছাত্রদের দেখতে পাই। তাদের কাছে আমার ছেলের সন্ধান জানতে চাই এবং আমার মোবাইলফোনে থাকা ছবি তাদের দেখাই।
তখন একজন ছেলে আমাকে বলে, আন্টি আপনি যদি সহ্য করতে পারেন তাহলে আমি আপনাকে একটা খবর বলতে চাই। তখন আমি বললাম, বাবা আমি আমার ছেলেকে পাওয়ার জন্য সব কিছু সহ্য করতে প্রস্তুত আছি, তুমি বলো। তখন সে ছেলেটি আমাকে বলে, আশুলিয়া থানার সামনে ছয়-সাতটি ছেলেকে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আপনি সেখানে আপনার ছেলেকে খুঁজে দেখতে পারেন।
আমি আশুলিয়া থানায় যেতে চাইলে অন্য ছাত্ররা আমাকে সেখানে যেতে দেয়নি। তারা আমাকে জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। আমি বাসায় গিয়ে তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ পড়ে (৬ আগস্ট) সকাল ৬টার দিকে বাসা থেকে আবার বের হই এবং সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে যাই। সেখানে গিয়ে একটা পুলিশের পিকআপ ভ্যানে বেশ কয়েকটি পোড়া মরদেহ দেখতে পাই। অনেক মানুষ মরদেহগুলোর ছবি তুলছিল এবং ভিডিও করছিল।
ট্রাইব্যুনালে শাহিনা বেগম আরও বলেন, আমি ভিড় ঠেলে সামনে যাই এবং একটা ছবি তুলি। আমি দেখতে পাই, একটি মরদেহ এমনভাবে পুড়েছে যে পায়ের একটি মোটা হাড় উঁচু হয়ে আছে এবং সে হাড়ের সঙ্গে একটি জুতা পোড়া অবস্থায় ঝুলছে। ছুলেই জুতাটা পড়ে যাবে। জুতাটা দেখেই আমি বুঝতে পারি, এই জুতাটি আমার ছেলে সজলের।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
জবানবন্দিতে শাহিনা বেগম আরও বলেন, আমি তখন উপস্থিত সেনা সদস্যদের বলি, এটাই আমার ছেলের মরদেহ। দয়া করে আমার ছেলের মরদেহ আমাকে দিয়ে দিন। তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাকে বলেন, এখন মরদেহ দেওয়ার অনুমতি নেই। অনুমতি পাওয়া গেলে আপনাকে জানাব। আমি নিরুপায় হয়ে আমার ছেলের মরদেহ ফেরত পাওয়ার জন্য আমার কর্মস্থলের হাসপাতালের ডাক্তারদের সহায়তার জন্য অনুরোধ করি।
৬ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সজলের বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে যেখানে মরদেহগুলো পোড়া নো হয়েছিল, সেখানে আসতে বলে। আমি সেখানে বিকেল ৫টার দিকে গিয়ে পৌঁছি। তখন গাড়ি থেকে পোড়া মরদেহগুলো নামানো হয় এবং শনাক্তের চেষ্টা করা হয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাকে মরদেহের কাছে যেতে দেয়। সজলের মরদেহ যখন নামানো হয়, তখন তার সঙ্গে তার কর্মস্থলের আংশিক পোড়া আইডি কার্ডএবং তার মানিব্যাগের ভেতরে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখে আমি আমার ছেলের মরদেহ শনাক্ত করি।
সজলের মা আরও বলেন, আমার ছেলের মরদেহের যখন প্রথম ছবি তুলি, সেখানে আমি দেখতে পাই—তার পোড়া হাতের পাশেই তার মোবাইলফোনটি রয়েছে। এটা দেখে আমি বুঝতে পারি, পোড়ানোর পূর্বমুহূর্তেও সে জীবিত ছিল এবং ফোন দিয়ে তখন সে প্রাণপণে তার অবস্থা আমাদের জানানোর চেষ্টা করছিল বা কোনো মেসেজ লেখার চেষ্টা করছিল। কিন্তু একটার ওপর আরেকটা মরদেহ ফেলার কারণে নিচে পড়ে যাওয়ায় সে আর কোনো মেসেজ লেখা বা কল করার সুযোগ পায়নি।
আশুলিয়া রাস্তার উপরে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে সেনাবাহিনীর গান স্যালুটের পর জানাজা পড়ানো শেষে আমার ছেলেসহ চারজনের মরদেহ সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমার ছেলের মরদেহ গ্রহণ করার পর আমার কর্মস্থল হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করে। তখন তাকে কাফন পরিয়ে কফিনের মধ্যে রেখে হাসপাতালের গাড়িযোগে আমার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে ৭ আগস্ট ২০২৪ তাকে দাফন করি।
শাহিনা বেগম আরও বলেন, আমার ছেলে সজল সিটি ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি পড়ছিল এবং পাশাপাশি সে টেস্টি ট্রিট নামক ফুড শপে চাকরি করত। আমার ছেলের দুই বছরের একটি মেয়ে শিশু আছে। সে তার বাবার কবরের কাছে গিয়ে ডাকাডাকি করে বলে—বাবা উঠো, বাবা উঠো।
শাহিনা বেগম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আমার সন্তানসহ দুই হাজার মানুষকে যারা হত্যা করেছে সেই আসামিদেরসহ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি মামুন, ওবায়দুল কাদের, সাইফুল এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ লীগের বিচার চাই।
গুলিতে ছেলে হারা মা সোনিয়া জামালের মর্মস্পর্শী বর্ণনা
১৪ বছর বয়সী শহীদ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল ট্র্যাইব্যু নালে সাক্ষ্য প্রদানকালে বলেন, আমি একজন গৃহিণী। আমার ছেলে মেহেদী হাসান জুনায়েদ গেন্ডারিয়ার উইল পাওয়ার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমার ছেলে নিয়মিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিত, যা আমি জানতাম না।
ট্র্যাইব্যুনাকে সোনিয়া জামাল বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমি নিজেও অংশ নিই। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার সময় আমার ছেলে নাশতা করার পর আমাকে বলে, মা আমি আমার বন্ধু সিয়ামকে নিয়ে আন্দোলনে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমি আমার মেয়ে নাফিসা নাওয়ালকে সঙ্গে নিয়ে মতিঝিল এলাকায় আন্দোলনে যোগ দিতে রওনা হই। আইডিয়াল স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশ আমার রিকশা থামিয়ে দেয়। রিকশা থেকে নেমে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে হেঁটে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। দুপুর ১টার দিকে মোবাইলফোন চেক করে দেখি অনেকগুলো কল এসেছে। কলগুলো ছিল আমার ছোট ভাই আসিফের।
এরপর আসিফ আবার আমাকে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে বলে। ‘সে বলে জুনায়েদ মাথায় ব্যথা পেয়েছে। তখন আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে যাই। আমি আমার ভাসুরের কক্ষে ঢুকে দেখি, আমার ছেলেকে বিছানায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। তার চোখের বাম পাশে গুলি লেগে মাথার পেছন দিয়ে বড় গর্তকরে বেরিয়ে গেছে। অনেক রক্ত বের হচ্ছিল, তা দেখে আমি কান্নায় ভেঙে পড়ি’-বলে তিনি ট্র্যাইব্যুনালে অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
সাক্ষী সোনিয়া জামাল ট্র্যাইব্যুনালে আরও বলেন, আমি জানতে পারি, ওই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বার্ন ইনস্টিটিউটের (জাতীয় বার্নও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট) অপর পাশে ফুটপাতে জুনায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। তার বন্ধু সিয়াম ও আব্দুর রউফ তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার বলেন, সে আগেই মারা গেছে। তারা আমার ছেলের মরদেহ বাসায় নিয়ে আসে। এরপর তার মরদেহ ধুপখোলা মাঠে জানাজার জন্য নেওয়া হয়। আমি আমার স্বামীর কাছে জেনেছি, সেখানে শাহরিয়ার খান আনাস নামের আরেকজন শহীদের জানাজা হয়েছে। আমার ছেলে ও তাকে (আনাস) জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সোনিয়া জামাল ট্র্যাইব্যুনালে আরও বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে জানতে পারি—চানখারপুলের নবাব কাটরা সংলগ্ন এলাকায় পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান, যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার ও এডিসি আক্তারুল ইসলামের নির্দেশে কনস্টেবল সুজন, ইমাজ, নাসিরুল বেপরোয়াভাবে গুলি চালিয়ে আমার ছেলে মেহেদী হাসান জুনায়েদ, শাহরিয়ার খান আনাস, ইয়াকুব, রাকিব হাওলাদার, ইমতিয়াজ ও মানিককে হত্যা করে।
আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে আরও জানতে পারি—এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মোবাইলে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) দেখেছি, একজন পুলিশ গুলি করার ভিডিও তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেখাচ্ছেন এবং বলছেন—স্যার গুলি করি, মরে একজন, বাকিরা যায় না’, কথাগুলো বলতে গিয়ে শহীদ জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল আবারও কাঁদতে থাকেন।
অন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি মামুন, ওবায়দুল কাদেরসহ দায়ী সব আসামির বিচার চান সন্তানহারা মা সোনিয়া জামাল।