রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আইন-আদালত

‘চুপ থাকো, তোমার জন্য এসব হয়েছে’, মতিউরকে তার স্ত্রী

ছাগলকাণ্ডের সেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। কাঠগড়ায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন।

একপর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে মতিউরকে ধমক দিয়ে তার স্ত্রী লায়লা বলেন, 'তুমি চুপ থাকো। তোমার জন্য এসব হয়েছে। এরপর চুপ হয়ে যান মতিউর।‘

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) আসামিদের কারাগার থেকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলামের আদালতে হাজির করে পুলিশ। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে তাদের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এরপর মতিউরের এক হাত থেকে হাতকড়া খুলে দেওয়া হয়। অন্য হাতে ঝুলে থাকে হাতকড়া।

এ ছাড়া মতিউরের মাথা থেকে হেলমেট, বুক থেকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট খুলে ফেলা হয়। তবে তার স্ত্রী লায়লা কানিজের বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরানো ছিল।

পরে তারা তাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। কখনো মতিউর, কখনো লায়লা কানিজ কথা বলতে থাকেন। এ সময় তারা তাদের মামলা ও পারিবারিক বিষয়ে কথা বলতে থাকেন। কীভাবে মামলা মোকাবিলা করবেন, সেটাও আইনজীবী আসামিদের বলতে থাকেন। এ সময় কাঠগড়ায় মতিউর মাথা এগিয়ে কথা বলতে গেলে কথার এক পর্যায়ে লায়লা কানিজ তার স্বামীকে ধমক দেন।

লায়লা কানিজ বলেন, 'তুমি বেশি কথা বলো। চুপ থাকো। আমি বলছি। তোমার জন্য এসব হয়েছে।'

স্ত্রীর ধমকের পর দমে যান মতিউর। পরে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন লায়লা। আর কোনো কথা বলার থাকলে স্ত্রীর কানে কানে ফিসফিস করে বলতে থাকেন মতিউর।

এদিকে কাঠগড়ায় কথা বলার এক পর্যায়ে পাশ থেকে একজন নারী (লায়লার বোন বলে পরিচয় দেন) এসে লায়লা কানিজের কাছে এসে বলেন, ‘এখানে সাংবাদিক আছে। সাবধানে কথা বইল।' তখন সবাই কথা থামিয়ে সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। তবে এতেও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার ছেদ পড়ে না। তারা আস্তে আস্তে কথা বলতে থাকেন। পরে সিএমএম আদালতের হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ কামাল আসামি লায়লা কানিজের কানে কানে কিছু বলতে থাকেন।

পরে ফের আসামিরা কাঠগড়ায় আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। পরে দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে আসামিদের স্বজন সেই লায়লার বোন একটি পানির বোতল দেন। আইনজীবী সেটা নিয়ে তাদের খেতে বলেন। তবে মতিউর সেটি নেননি। পরে তার স্ত্রীকে খেতে বলেন। কিন্তু লায়লা কানিজ অস্বীকৃতি জানান। এরপর মতিউর পানি পান করেন।

এরপর ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে এজলাসে আসেন বিচারক। এরপর আসামিরা কাঠগড়ার সামনে দাঁড়িয়ে শুনানি শুনতে থাকেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার তাদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।

এ সময় শুনানিতে দুদকের পক্ষে মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম রিমান্ডের পক্ষে বলেন, 'ভুয়া কোম্পানি ও কাগজপত্র দেখিয়ে তারা টাকা হাতিয়ে নেন। ওই কোম্পানি আর আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে তারা টাকা আত্মাসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।'

আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান (লিটন ঢালী) রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, 'দুদক প্রসিকিউটর যে বক্তব্য দিল, মামলার এজাহারের সঙ্গে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। মতিউর রহমানের কন্যা ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা দীর্ঘদিন কানাডায় আছেন। তিনি তার সম্পদ বিবরণী আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে জমা দিয়েছেন। ঈপ্সিতা ডেল্টা লাইফে চাকরি করতেন না। তিনি এজেন্সির মালিক ছিলেন। সে অনুযায়ী বেতনও পেতেন। ট্যাক্স ফাইল দেখলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ঈপ্সিতা সম্পদ বিবরণীতেও যদি বলে বাবার সম্পত্তি আছে, এরূপ একটা শব্দ বললে আপনি রিমান্ড দিতে পারেন।'

আইনজীবী আরও বলেন, মতিউর রহমান অসুস্থ। তার প্রেশার ১৫০ থেকে ১০০। তার বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি। প্রয়োজনে তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রার্থনা করেন এ আইনজীবী। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত থেকে তাদের এক দিনের রিমান্ডের আদেশ আসে।

শুনানি শেষে কাঠগড়ায় মতিউরকে স্ত্রীর ধমকানোর বিষয়ে আসামিদের পক্ষের আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধমকানো বিষয়টা এমন না। মতিউর রহমান আদালতে কথা বলতে চেয়েছিল। তখন তার স্ত্রী নিষেধ করেন। কারণ আদালতে বলা না বলা সমান। এখানে বলে লাভ নেই বলেন তিনি।

কী কথা হলো জানতে চাইলে এ আইনজীবী আরো বলেন, তারা কিভাবে মামলা মোকাবেলা করা যাবে সেসব কথা হয়। পারিবারিক কিছু কথাও বলেন।

এদিকে কাঠগড়ায় লায়লা কানিজের সঙ্গে কী কথা হলো জানতে, চাইলে হাজতখানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক শেখ কামাল জানান, 'কাঠগড়ায় এত কথা না বলার জন্য বলি।'

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'লায়লা কানিজ আজ হাজতখানায় দুপুরে খাবারের কথা বলেন। তখন আমি হাজতখানার নিয়মানুসারে বাইরে খাবার দেওয়া যাবে না বলে জানাই। সরকারিভাবে একটি কলা, রুটি ও পানি দেওয়া যাবে বলি। পরে তিনি না করেন।

এদিকে রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান এবং লায়লা কানিজের দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অসদুদ্দেশ্যে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকা মূল্যমানের সম্পত্তির তথ্য গোপন করার এবং ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক যোগসাজশে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকা মূল্যমানের সম্পত্তি অর্জন করে ভোগ দখলে রাখার অপরাধে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তাধীন। তাদের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করার তথ্য রয়েছে। প্লেসমেন্ট শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ে এ জাল-জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন এবং এর সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তা জানা দরকার।

এ ছাড়া মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে জ্ঞাত আয়ের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার বিষয়ে মতিউর রহমান এবং লায়লা কানিজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।

এই সম্পর্কিত আরো