সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পর বিদেশে পাচারের অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযুক্তদের মধ্যে অপরজন হলেন- গাজীপুর সিটি করপোরেশনে দীর্ঘদিন কর্মরত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া।
রোববার প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তিনি জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া পরস্পর যোগসাজশে ভুয়া টেন্ডার ও বিল প্রস্তুতপূর্বক নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে সরকারি উন্নয়ন তহবিল ও সিটি করপোরেশনের রাজস্ব তহবিল থেকে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাত হাজার পাঁচশত কোটি টাকা আত্মসাৎপূর্বক বিদেশে পাচারের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য ধারায় একটি মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত কমিশন কর্তৃক গৃহীত হয়েছে।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা সিটি করপোরেশনে ভুয়া টেন্ডার ও বিল তৈরি করে নিজেদের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন। এর মাধ্যমে উন্নয়ন ও রাজস্ব তহবিল থেকে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন।
মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলম বরখাস্ত হওয়ার সাত মাস পর তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগের অনুসন্ধানে নামে দুদক। সেই সময় বলা হয়, জাহাঙ্গীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে, সিটি করপোরেশনের নামে ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং সেখান থেকে অর্থ উত্তোলন করেন।
এছাড়া ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ওই ভুয়া অ্যাকাউন্টে সিটি করপোরেশনের নামে কয়েক কোটি টাকা জমা ও উত্তোলন করে জাহাঙ্গীর আলম তা আত্মসাৎ করেন বলেও দুদক জানিয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক সরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাবেক মেয়র ও তার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে জানান- আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।
আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে মেয়রের দলীয় সদস্যপদ কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগ। তারপর বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও। পটপরিবর্তনের পর ভারতে পালিয়ে যান।