বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

বিবিসির প্রতিবেদন: ‘আমাদের আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গেছে’, বলছে নেপালের জেন–জি

হিমালয়কন্যা নেপালে সরকারের দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এরই মধ্যে অন্তত ২৯ জনের প্রাণ ঝরেছে। এরপর নেপালের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করায় সরকারেরও পতন হয়েছে। দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই রাজধানী কাঠমান্ডুর রাস্তায় টহল চৌকি বসানো হয়েছে। আর পুরো ঘটনাপ্রবাহের কারণে দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার মধ্যে পড়ে গেছে।

দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমছিল দীর্ঘদিন ধরেই। গত সোমবার বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। এর পরের দিন আগুন দেওয়া হয় বাড়িঘর, সরকারি ভবন, এমনকি পার্লামেন্ট ভবনেও। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন রাজনীতিবিদদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেন।

তবে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম ‘জেনারেশন জেড’ বা জেন-জি গোষ্ঠী এসব ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছে। তাদের অনেকের দাবি, বিক্ষোভ ‘সুযোগসন্ধানীরা’ ছিনতাই করেছে। আজ বুধবার কাঠমান্ডুর বিমানবন্দর আবার চালু হয়েছে। রাজধানী তুলনামূলক শান্ত। কারফিউ জারি থাকলেও এখনো পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে ধোঁয়া উঠছে।

সেনাবাহিনী বলছে, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। এ জন্য তারা জেন-জি নেতাদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁরা নতুন দাবির তালিকা তৈরি করছেন।

সারা দেশে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। সহিংসতা ও ভাঙচুরে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছে সেনাবাহিনী। এখন পর্যন্ত ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৩১টি আগ্নেয়াস্ত্র। রাজধানীজুড়ে সামরিক চৌকি বসানো হয়েছে। যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। লাউডস্পিকারে ভেসে আসছে সেনাদের সতর্কবাণী—‘বিনা প্রয়োজনে বের হবেন না।’

তবে কিছু তরুণকে রাস্তায় দেখা গেছে। তাঁরা মুখে মাস্ক পরে, হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিয়ে বিক্ষোভে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পরিষ্কার করছেন। তাঁদের একজন ১৪ বছরের ক্ষাং লামা। সে বিক্ষোভে অংশ নেয়নি। তবুও সে চায়, এই আন্দোলন থেকে পরিবর্তন আসুক। তার মতে, ‘নেপালে দুর্নীতি বহুদিন ধরে চলছে। এখন সময় এসেছে পরিবর্তনের। আমি চাই, এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে ইতিবাচক কিছু আসুক।’

আন্দোলনে অংশ নেওয়া ২৪ বছরের পরশ প্রতাপ হামাল গতকাল মঙ্গলবারের সহিংসতার পর এখন জঞ্জাল পরিষ্কারের কাজে নেমেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা অনেক দূষণ তৈরি করেছি, তাই এখন পরিষ্কার করছি।’ তিনি মনে করেন, নেপালের এখন স্বাধীন রাজনৈতিক নেতার প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

পূর্ব নেপালের বাসিন্দা ৩৬ বছরের রাকেশ নিরৌলা বলেন, ‘এই বিপ্লবের পর মানুষ আশাবাদী হয়েছে। আমরা আশা করি, নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে, শাসনব্যবস্থা উন্নত হবে। এটা নেতাদের জন্যও শিক্ষা, যাতে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে।’ তবে অনেকে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞে বিস্মিত হয়েছেন। নিরৌলা বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এমনটা হওয়া উচিত হয়নি।’

ললিতপুরের উদ্যোক্তা প্রভাত পাউদেল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের মতো সরকারি ভবন পোড়ানো দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘এগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ।’

ক্ষোভকারীদের আশঙ্কা, আন্দোলনটি ‘বহিরাগত সুযোগসন্ধারীরা ছিনিয়ে নিয়েছে’। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও একই মন্তব্য করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রাজারাম বসনেত বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা মূলত তাদের নিয়ন্ত্রণে আনছি, যারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন সহিংসতা চালাচ্ছে।’

বিক্ষোভকারীরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের আন্দোলন অহিংস ছিল এবং থাকবে। এটি শান্তিপূর্ণ নাগরিক অংশগ্রহণের নীতির ওপর ভিত্তি করে।’ তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁরা স্বেচ্ছাসেবী হয়ে মাঠে কাজ করছেন, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে, নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া যায় এবং সরকারি সম্পদ রক্ষা করা যায়।

তাঁরা আরও জানিয়েছেন, আজ বুধবারের পর থেকে আর কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি নেই। একই সঙ্গে সেনা ও পুলিশকে প্রয়োজন হলে কারফিউ জারি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

এই সম্পর্কিত আরো