গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই সময় তিনি সব যুদ্ধ বন্ধে জোরশোরে চেষ্টা চালানোর কথা বলেছিলেন। একইসঙ্গে নিজেকে শান্তি প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্যের দূত হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
তবে, ট্রাম্পের ক্ষমতার ছয় মাস না যেতেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উড়ছে ক্ষেপণাস্ত্র। ইসরাইল হামলা চালালো ইরানে। এতে করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যুদ্ধের সংকটকে আরও ঘণীভূত করছে। আঞ্চলিক সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদেরও টেনে নিচ্ছে।
আকস্মিকভাবে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে সায় ছিল ট্রাম্পেরও, যা পরে স্পষ্ট হয়েছে। মসদনে বসার সময় নিজেকে শান্তির দূত আখ্যা দেওয়া ট্রাম্প এখন যুদ্ধের সঙ্গী হয়ে গেছে। এর ফলে ট্রাম্পের ভিতে বিভক্তি দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ডানপন্থি রাজনৈতিক ও বিশ্লেষক ইসরাইলকে নিঃশর্ত সমর্থনের বিপক্ষে। তারা বলছেন, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্টের’ বিরোধী অবস্থান ইসরাইলকে নিঃশর্ত সমর্থন।
যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক ও কুয়িনন্সি ইন্সটিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট তিরতা পার্সি বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে থাকা অনেকে যুদ্ধের বিরোধী। তারা চায় না আমেরিকা সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক। আমেরিকা ফার্স্ট ভিতের অনেকে নিজেদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি হয়েছে বলে বিশ্বাস করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের অনেক সমর্থক ইসরাইল নিয়ে সন্দেহপ্রবণ। তাদের বিশ্বাস, ইসরাইলের যুদ্ধ প্রেসিডেন্টকে ব্যর্থতার দিকে নিয়ে যাবে। এর ফলে আমরিকার ঘরোয়া এজেন্ডাগুলো বাস্তবায়িত হবে না।’
ইসরাইলের শুক্রবারের হামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অনেক রক্ষণশীল। তাদের ধারণা, এ সংঘাত যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিবে।
ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ প্রচারণার একজন প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন। তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ ক্ষুধার্ত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। নেতানিয়াহু সরকারকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকতে ট্রাম্পকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার ওনটওয়ার্ক মর্নিং নিউজলেটারে টাকার কার্লসন লেখেন, ‘যদি ইসরাইল এ যুদ্ধকে বৃহৎ আকারে নিতে চাই তাহলে সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। ইসরাইল একটি সার্বভৌম দেশ এবং তাদের সেই অধিকার রয়েছে। তবে, আমেরিকার উচিত তাদের সমর্থন না দেওয়া।’
‘ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ আগামী প্রজন্মকে সন্ত্রাসবাদের দিকে ঠেলে দিবে। পররাষ্ট্র এজেন্ডার জেরে হাজার হাজার মার্কিনি প্রাণ হারাবে,’ যোগ করেন কার্লসন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধে জড়ালে আমেরিকার কোনো লাভ হবে না। বরং আমেরিকার হাতে একটি
অপশন সৃষ্টি হবে, যা হলো, ‘‘ড্রপ ইসরাইল’’। তাদেরকে নিজেদের যুদ্ধ নিজেদেরকে করতে দেওয়া উচিত।’
রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পাউল ইসরাইলের নতুন যুদ্ধে জড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ওয়াশিংটনকে যুদ্ধে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে র্যান্ড লেখেন, ‘আমেরিকার জনগণ না শেষ হওয়া যুদ্ধের বিরোধী। তারা যুদ্ধ বন্ধের আশ্বাসেই ২০২৪ সালে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিল। আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এ সংঘাতের থেকে দূরে থাকতে বলবো। তার উচিত, আমেরিকা ফার্স্ট নীতিতে অটল থাকা।’
ডানপন্থি কংগ্রেসম্যান মারজরি টেইলর গ্রিন্নেও ট্রাম্পকে সংঘাত থেকে দূরে থাকার জন্য একটি বার্তা দিয়েছেন। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম এক্সে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি শান্তির জন্য প্রার্থনা করছি। এটাই আমার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য ও অবস্থান।’
ট্রাম্পের অনেক সমর্থক ইরনাকে পারমাণবিক ক্ষমতাধর দাবি করে ইসরাইলকে সমর্থনের কথা বলছে। তবে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা থাকার কথা বার বার অস্বীকার করে আসছে তেহরান। গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ইরানকে থামানোর কথা বলেছিলেন।
রিপাবলিকান অ্যাক্টিভিস্ট ও দলটির হয়ে কথা বলা চার্লি ক্রির্ক ইরানে ইসরাইলের হামলাকে সমর্থন করছেন না। নিজের পডকাস্টে ক্রির্ক বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, আমাদের মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগাইন (এমএজিএ) যুদ্ধের বিরোধী। এমএজিএরা চাই না যুদ্ধে আমেরিকার সংশ্লিষ্টতা থাকুক।’
গত শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা এবং আবাসিক অবকাঠামোতে হামলা চালায় ইসরাইল। এ হামলার কয়েখ ঘণ্টা আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তার প্রশাসন তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলাপ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘দেখ, বিষয়টি খুবই পরিষ্কার। এখানে জটিল কিছু নেই। ইরানের কাছে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র নেই। আমি তাদের সফলতার চূড়ায় দেখতে চাই। এর জন্য তাদের সাহায্য করতেও প্রস্তুত রয়েছি।’
রোববার ওমানে ষষ্ঠ দফায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের বৈঠক করার কথা ছিল। তবে, ইসরাইলের হামলায় সেই বৈঠক পণ্ড হয়ে গেছে।
এদিকে, শুক্রবার ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘ইসরাইলের হামলা নিয়ে তিনি অবগত ছিলেন।’ জেনেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরাইলকে হামলা করতে না করেননি। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইসরায়েলের পদক্ষেপকে ‘একতরফা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।