গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাধার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে না পারায় অন্তত ৯০০ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। লেবানিজ সংবাদমাধ্যম আল–মায়েদিনের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
মূলত চিকিৎসার জন্য গাজার বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা আর ভ্রমণ-অনুমতিতে কঠোর বাধা তৈরি করায় ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে পড়ে ৯ শতাধিক ফিলিস্তিনি রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, আরও হাজার হাজার মানুষ জীবন-হুমকির ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ, তারাও জরুরি চিকিৎসার জন্য গাজা ছাড়ার অনুমতির অপেক্ষায় দিন গুনছে।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এখনো প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার রোগী চিকিৎসার জন্য গাজা ত্যাগের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজারই শিশু। যাদের জীবন রক্ষার জন্য দ্রুত বাইরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বিলম্ব কার্যত এসব রোগীর জন্য মৃত্যুদণ্ড।
গাজার হাসপাতালগুলো এখন অর্ধেকের কম সক্ষমতা নিয়ে চলছে। জ্বালানি, ওষুধ আর জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের ভয়াবহ সংকটে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাস থেকে ডব্লিউএইচও মোট ১১৯টি মেডিকেল ইভাকুয়েশন মিশন সম্পন্ন করেছে। এতে প্রায় ৮ হাজার রোগীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার শিশু।
তবুও হাজারো মানুষ এখনো তীব্র সংকটে, গাজার বিধ্বস্ত স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভেতরে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি। অবরোধ আর হাসপাতাল ধ্বংসস্তূপের মাঝে রোগীর জট দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদরোস আধানম ঘেব্রেইসাস বলেছেন, যুদ্ধবিরতির এক মাস পর সংস্থাটি গাজার ভগ্ন স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠনে কাজ করছে এবং মরণাপন্ন রোগীদের দ্রুত বাইরে সরিয়ে নিতে তৎপর।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বর্তমানে ফিলিস্তিনি রোগীদের গ্রহণ করা ৩০টি দেশকে ধন্যবাদ জানান। আরও দেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘১৬ হাজার ৫০০-জনের বেশি রোগী—যাদের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার শিশু—এখনো জরুরি চিকিৎসার জন্য গাজা ছাড়ার অপেক্ষায়।’ তিনি ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষের কাছে সব সরিয়ে নেওয়ার পথ খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে যে, যুদ্ধবিরতির শর্তে বাধাহীন সহায়তা নিশ্চিতের কথা থাকলেও মানবিক সাহায্য ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হচ্ছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চতুর্থ কমিটিতে সংস্থাটির কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেন, শীতের প্রহর ঘনিয়ে আসছে, অথচ ফিলিস্তিনিরা সামান্য আশ্রয় নিয়েই কঠিন আবহাওয়ার মুখোমুখি, কারণ ত্রাণসামগ্রী ঢুকতে এখনো ব্যাপক বাধার সম্মুখীন।
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের মাত্র অল্প অংশ গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে, ফলে পরিবারগুলো দিন দিন আরও বিপন্ন হয়ে পড়ছে। দাতা দেশগুলোর কাছে জরুরি সহায়তার আহ্বান জানিয়ে লাজারিনি সতর্ক করেন, তীব্র অর্থসংকট, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের বড় কাটছাঁটের কারণে, ইউএনআরডব্লিউএ-র ফিলিস্তিনিদের জন্য জীবনধারণ-সহায়ক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া গুরুতর ঝুঁকিতে পড়েছে।