সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

দ্রুত ওজন কমাতে বিপজ্জনক ওষুধ, ধুঁকছে তরুণ প্রজন্ম

ওজন কমানো ইস্যুতে আমরা প্রায় সবাই সতর্ক। কেউ কেউ সময় বেধে নেন—‘১০ দিনের মধ্যে ৫ কেজি কমাতেই হবে অথবা দুমাসের মধ্যে ২০ কেজির বেশি ঝরিয়ে তারকাদের মতো চেহারা বানাব!’ দ্রুত ওজন কমানোর এই প্রতিযোগিতায় বিপজ্জনক ওষুধে ঝুঁকছে রাশিয়ার তরুণরা। এতে ভয়াবহ অবস্থার তৈরি হয়েছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়ার তরুণদের মাঝে ওজন কমানোর প্রতিযোগিতা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। বিষন্নতায়ও ভুগছে বহু তরুণ।

মূলত রাশিয়ার তরুণরা মলিকিউল নামের ওষুধের ফাঁদে পড়েছেন। যা তারা টিকটকে কোনো এক ভিডিও মাধ্যমে জানতে পারেন। মলিকিউল ওষুধটি দ্রুত ওজন কমায়। এই বছরের শুরুর দিকে রাশিয়ান টিকটকে এমন দাবিতে একটি টিকটক ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল।

তরুণদের নিউজ ফিড সেসময় ভরে উঠেছিল এমন ক্যাপশনে, ‘মলিকিউল নাও এবং খাবারের অস্তিত্ব ভুলে যাও’, কিংবা ‘ক্লাসের পেছনে বড় সাইজের কাপড় পরে বসতে চাও?’ ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছিল ফ্রিজ ভর্তি নীল বাক্স। যার গায়ে হোলোগ্রাম এবং ‘Molecule Plus’ লেখা।

কিশোর-কিশোরীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ‘ওজন কমানোর যাত্রা’ শেয়ার করতে লাগল। কিন্তু এটি ছিল একটি ফাঁদ। 

২২ বছর বয়সী মারিয়া একজন জনপ্রিয় অনলাইন বিক্রেতার কাছ থেকে ওষুধটি কিনেছিলেন। তিনি দিনে দুইটি করে বড়ি খেতেন এবং দুই সপ্তাহ পর দেখেন, তার মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে এবং সম্পূর্ণভাবে ক্ষুধা হারিয়ে ফেলেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমার একদমই খেতে ইচ্ছা করত না। এমনকি পানি পান করতেও না। আমি ভীত ছিলাম। সারাক্ষণ নিজের ঠোঁট কামড়াচ্ছিলাম আর গাল চিবাচ্ছিলাম।’

মারিয়া তীব্র উদ্বেগে ভুগতে শুরু করেন এবং নেতিবাচক চিন্তায় আক্রান্ত হন, ‘এই বড়িগুলো আমার মানসিক অবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলছিল।’ সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসকারী মারিয়া বলেন, তিনি এত গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না।

অন্য টিকটক ব্যবহারকারীরা প্রসারিত চোখের মণি, হাত কাঁপা ও অনিদ্রার মতো উপসর্গের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্তত তিনজন স্কুল শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।

এপ্রিল মাসে সাইবেরিয়ার চিতা শহরের এক স্কুলছাত্রী মলিকিউল ওষুধের অতিমাত্রায় সেবনের পর হাসপাতালে ভর্তি হন। স্থানীয় এক পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, সে গ্রীষ্মের আগেই দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টা করছিল।

আরেক স্কুলছাত্রীর মা গণমাধ্যমকে জানান, তার মেয়েকে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি বড়ি খাওয়ার পর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র তথা আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়েছিল। মে মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গের ১৩ বছর বয়সী এক ছেলেকেও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।

মলিকিউলের বাক্সে ‘প্রাকৃতিক উপাদান’ হিসেবে লেখা থাকে ড্যান্ডেলিয়ন রুট ও ফেনেল সিডের নির্যাস। তবে চলতি বছরের শুরুর দিকে রুশ পত্রিকা ইজভেস্তিয়ার সাংবাদিকেরা অনলাইনে কেনা বড়িগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠালে তাতে নিষিদ্ধ উপাদান সিবুট্রামিন পাওয়া যায়। সিবুট্রামিন মূলত ১৯৮০-এর দশকে বিষণ্নতা নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে ক্ষুধা দমনকারী হিসেবে বাজারে আসে। গবেষণায় দেখা যায়, এটি হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যদিও ওজন কিছুটা কমায়।

সেন্ট পিটার্সবার্গের হরমোনবিশেষজ্ঞ জেনিয়া সলোভিয়েভা বলেন, প্রেসক্রিপশন ছাড়া নিজে থেকে এই ওষুধ সেবন করা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

রাশিয়ায় ইতোমধ্যে অনেকে মলিকিউল বেচাকেনার অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। কিন্তু প্রশাসনের জন্য এটির অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এই সম্পর্কিত আরো