সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম লালমাটি সীমান্তে ‘কসমেটিক্স’ মান্নান উরফে আবদুল মান্নান ও তার সহযোগী ডালিমের বেপরোয়া চাঁদাবাজি এবং চোরাচালানে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল। পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মান্নান, স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে ভারতীয় মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিড়ি, চিনি, জিরা, চকোলেট, বিস্কুট, তেল, শ্যাম্পু, স্কিন সাইন ক্রিম, লোশনসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্য বাংলাদেশে এনে সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকারি মূল্যে সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া ২৪ আগস্ট গোয়াইনঘাট সীমান্তের জাফলং চা বাগান সংলগ্ন এলাকা থেকে বিজিবি একটি অভিযানে চারটি ভারতীয় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে।
জানা যায়, ৪ বছর আগেও আবদুল মান্নান জাফলং বল্লাঘাট পিকনিক সেন্টারে একটি কসমেটিক্সের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। এরপর সীমান্তের অবৈধ কারবারে জড়িয়ে তিনি রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন। চোরাচালান ও চাঁদাবাজিতে পটু হয়ে ওঠেন তিনি এবং অবৈধ টাকায় বাড়ি, গাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্স গড়ে তোলেন। বর্তমানে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম লালমাটি সীমান্তে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘কসমেটিক্স’ মান্নান। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছেন মান্নান ও তার বাহিনী।
মান্নানের এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে নেমে আসে নির্যাতন ও নিপীড়ন। তার একটি শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী রয়েছে, যার নেতৃত্বে আছেন চাচাতো ভাই বাবু মিয়া, ডালিম, ডালিমের পিতা মহর উদ্দিন, ডালিমের ভাই সেলিম, সিরাজুল ও রিয়াজুল। এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে পরিচিত ডালিম আবার বিজিবির লাইনম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে, মান্নান ও ডালিমের নেতৃত্বে পুলিশ, ডিবি ও বিজিবির নামে চাঁদাবাজি চলে। পুলিশের নামে টাকা তিসি সপ্তাহে কার কাছে দেন এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং প্রতিদিন বিজিবির ডিউটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে বিজিবি টাকা বুঝে নেন। এছাড়া ডিবির লাইনের টাকা প্রতি মাসের ১ তারিখ মান্নান বুঝিয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব টাকায় কিছু অসাধু সাংবাদিকও ভাগ পান বলে দাবি করা হয়েছে।
মান্নান গুচ্ছগ্রামের সীমান্তের বিভিন্ন গুদামে চোরাচালানের অবৈধ মালামাল রাখেন। এমনকি গুচ্ছগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই তার চোরাচালানের মালামাল রাখার জন্য একাধিক দোকানপাট রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। সেখান থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে অবৈধ পণ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আবদুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
পূর্ব জাফলংয়ের বিট কর্মকর্তা এসআই মারুফ আল মুকিতের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তবে কারা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা তুলছে আমারা খতিয়ে দেখব।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মান্নান মেম্বারকে চিনি না।তবে পুলিশের নামে কারা টাকা তুলছে আমি খবর নিচ্ছি ।
৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক বিজিবি সদস্যদের নামে ডালিমের চাঁদাবাজীর বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমাদের বিজিবির নামে কোনোও টাকা উঠে না। সে যদি বিজিবির নাম ভাঙিয়ে টাকা তোলে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু সময় আমাদের ভালো কর্মকর্তাদের সরানোর জন্য এরকম প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়, যা সচেতনমহলের এড়িয়ে চলা উচিত। সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিজিবি সবসময় তৎপর আছে।’
উল্লেখ্য, সিলেটের স্থানীয় ও জাতীয় প্রত্রিকায় চোরাচালানের গডফাদার মান্নানের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ পরিবেশন করা হলেও অদৃশ্য কারণে প্রশাসনের অ্যাকশন না নেওয়ার কারণে ক্রমেই বেপোয়ারা হয়ে উঠেছে চোরাকারবারী মান্নানবাহিনী।