নওগাঁয় কলেজছাত্রীদের আপত্তিকর মেসেজ পাঠানোসহ অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কলেজ গেটে বিভিন্ন স্ক্রিনশট ঝুলিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটগুলোর পাঠানো বাক্যগুলো দেখা যায়, অধ্যক্ষ সামসুল হক ছাত্রীর সুন্দরের প্রশংসা করে আরও সুন্দর আছে কিনা জানতে চান। কথপকথনের একপর্যায়ে তিনি ‘আপত্তিকর’ কিছু ছবি চান।
আরেকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, অধ্যক্ষ সামসুল হক লেখেন, ‘নতুন বউ এর সাজে দেখা করলে না?’। উত্তরে ছাত্রী লেখেন, ‘স্যার ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। স্টল থেকে বের হওয়ার সময় পাইনি। আজকে আমাদের স্টলে সবচাইতে বেশি সেল হইছে’। এরপর সামসুল হক লেখেন, ‘আমি তোমার বিউটি থেকে বঞ্চিত হলাম’। ফিরতি জবাবে ওই ছাত্রী লেখেন, ‘কেন স্যার? দেখা হইছিল তো আপনার সঙ্গে। তবে আপনাকে অনেক অনেক থ্যাংক ইউ স্যার। এত সুন্দর একটা আয়োজন করার জন্য। আমরা অনেক এনজয় করেছি’। আবার সামসুল হক লেখেন, ‘আমাকে দেখা দিলে আমিও করতাম’। এবার জবাবে ওই শিক্ষার্থী লেখেন, ‘স্যরি স্যার, আজকে খুবই ব্যস্ত সময় কেটেছে’।
ভাইরাল হওয়া আরেক স্ক্রিনশটে দেখা যায়, এক ছাত্রীর ফেসবুকের স্টোরিতে ‘অতীব চমৎকার’ লিখে প্রশংসা করেছেন সামসুল হক। ওই শিক্ষার্থী একটি হিন্দি গান সেট করে লেখেন, ‘কিছু মানুষের সাথে দূরত্ব হওয়া ভীষণ দরকার’। রিপ্লাই দেন সামসুল হক। তিনি ওই শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন করে লেখেন, ‘আমি কি তার মধ্যে?’।
তবে এসব কথোপকথনের বাক্য বিনিময় কবে হয়েছে সে বিষয়ে জানা যায়নি। এবং এসব বিষয়ে কোনো ছাত্রীই মুখ খুলতে নারাজ।
এদিকে এ ঘটনায় বিষয়টি যাচাই সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আরমান হোসেন জানান, অধ্যক্ষ আমাদের দাবির আশ্বাস দিলে আমরা সেখানে বসতে রাজি হই। মেজরিটি শিক্ষার্থী যদি পদত্যাগ চায় তাহলে সে পদত্যাগ করবে বলে জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের সঙ্গে বারবার মশকরা করছে কলেজ প্রশাসন। প্রথমে অধ্যক্ষ পদত্যাগ করতে চাইলেও সেখানে আর কোনো পদত্যাগের কথা নেই। তারপরও আমরা বলেছি গণভোটের আয়োজন করতে। সেখানে শিক্ষার্থীরা যদি পদত্যাগ চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। আমরা আর কলেজ প্রশাসনের তালবাহানা মেনে নেব না। অধ্যক্ষের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই।
ছাত্র প্রতিনিধি সাকিব ও শিক্ষার্থী শাওন বলেন, একজন অধ্যক্ষ হয়ে কীভাবে তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে পারেন। কীভাবে ছাত্রীর কাছ থেকে ওড়না ছাড়া ছবি চাইতে পারেন। এমন অধ্যক্ষের কাছে কীভাবে ছাত্রীরা নিরাপদ হতে পারে। কেন শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাসে যায় না বা কলেজে আসে না সে বিষয় নিয়ে তিনি কখনো ভাবেননি। তিনি শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি। আপত্তিকর মন্তব্য করায় অধ্যক্ষের শাস্তির দাবি করছি।
সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. সামসুল হক জানান, আমার চাকরি থাক আর না থাক, আমি কোনো মন্তব্য করব না।